
গোটা রাজ্যে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা এক বিশেষ জায়গা জুড়ে রয়েছে। নিজেদের স্পোর্টিং অ্যাক্টিভিটির জন্য রাজ্যের অন্যতম সেরা ডি এস এর স্বীকৃতি পেয়েছে শিলচর। এটা কিন্তু একদিনে আসেনি। এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য লোকের অবদান। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার হাত ধরেই রাজ্যের ক্রীড়াঙ্গনে উঠে এসেছেন একের পর এক কিংবদন্তি। যারা বিভিন্ন স্পোর্টস ক্যাটাগরিতে দীর্ঘদিন রাজ্যের সেবা করেছেন। এমনকি এই শিলচর ডি এস এ থেকে অনেকেই জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। গোটা রাজ্যের মান বাড়িয়েছেন। এমনই এক জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে সদস্য পদ বাতিল করে দিল অসম অলিম্পিক সংস্থা (এ ও এ)!
শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা এক ঐতিহ্যবাহী সংস্থা। ১৯৫৭ সালে গঠিত এই সংস্থার বর্ণময় ইতিহাস রয়েছে। তবে এ ও এ সচিব লক্ষ্য কোওর সম্ভবত এই ইতিহাস সম্পর্কে জানেন না। যদি জানতেন তাহলে শাসকগোষ্ঠীর চার-পাঁচজনের অভিযোগের ভিত্তিতে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতেন না। গত বছরের শেষদিকে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সংবিধান অবমাননা নিয়ে কম নাটক হয়নি। এমন একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল যেখানে সম্মুখ সমরে এসে দাঁড়িয়েছিল শিলচর ডি এস এ এবং অসম অলিম্পিক সংস্থা। চার মাসের বিরতির পর আবারও সেই একই পরিস্থিতি।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এ ও এ এবং শিলচর ডি এস এ দুটোই কিন্তু অটোনমাস বডি। এই দুই সংস্থারই নিজ নিজ সংবিধান রয়েছে। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অভিভাবক যেমন এ ও এ, ঠিক তেমনি ইন্ডিয়ান অলিম্পিক এসোসিয়েশন হচ্ছে এ ও এর অভিভাবক। তবে প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটা সংবিধান রয়েছে। আর সেই অনুসারে শিলচর ডি এস এ এবং এ ও এর কাজ করার কথা। তবে বাস্তবে এমনটা হচ্ছে না। বাস্তবে চলছে রাজনীতির খেলা। আর এতে ক্ষতি হচ্ছে খেলাধুলার। ক্ষমতা দখলের জন্য এখানে খেলাধুলার স্বার্থকে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, যে কোনও সংস্থার সংবিধানে সংশোধনী আনতে হলে সেই সংস্থার সদস্যদের সেটা জানাতে হয়। কীসের জন্য সংবিধানে সংশোধনী আনা হচ্ছে, সে সম্পর্কে প্রত্যেক সদস্যকে জানানো হয়। তবে এ ও এ কিন্তু এমনটা করেনি। বৃহস্পতিবার এ ও এ তাদের সংবিধানে কিছু সংশোধনী এনেছে। যা এ জি এমে গৃহীত হয়েছে। তবে সংবিধানে সংশোধনীর বিষয়টা কোনো সদস্য সংস্থাকেই জানায়নি এ ও এ। অসম অলিম্পিক সংস্থার সংবিধানে যে সংশোধনী আনা হয়েছে সেই অনুসারে এখন থেকে প্রত্যেক সদস্য সংস্থাকেই তার কার্যকাল শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে সাধারণ সভা ডেকে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। এমনটা না করতে পারলে সেই সংস্থার কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। এবং জরুরী ভিত্তিতে এডহোক কমিটি গঠন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্রায় দু বছর আগে এ ও এর সংবিধানের কপি চেয়ে সচিব লক্ষ্য কোওরকে চিঠি দিয়েছিল শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। আজ পর্যন্ত সংবিধানের একটি কপি ও শিলচর ডি এস একে দেয়নি এ ও এ। এবার আবার সদস্য সংস্থাদের অন্ধকারে রেখেই সংবিধান সংশোধন করে নিল অসম অলিম্পিক সংস্থা। তাহলে কি শিলচর ডিএসএকে টার্গেট করেই এমনটা করা হয়েছে?
এখানেই শেষ নয়, আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে সংস্থার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে সেই সংস্থার খেলাধুলা পরিচালনার জন্য আবার পাঁচ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাওয়ার পর তো এখন এ ও এর সঙ্গে কোনো লেনদেনই নেই শিলচর ডি এস এর। তাহলে আবার কিসের জন্য এই কমিটি গঠন?
একদিকে এ ও এ সচিব লক্ষ্য কোওর বলছিলেন, শিথিল ধর (শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সচিব) তার কার্যকাল ফুরিয়ে যাওয়ার তিন মাস আগে ডি এস এর বি জি এম করে সংবিধান অবমাননা করেছেন। আবার সেই শিথিল ধরকেই সংবিধান সংশোধন করার কথা বলছিলেন তিনি? লক্ষ্যবাবু যে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন, সেই সংবিধান মেনেই তো কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল করেছিল শিলচর ডি এস এ। তাহলে এনিয়ে তার সমস্যা কোথায়?
সবচেয়ে বড় কথা, ডি এস এ যদি নিজের সংবিধান অবমাননা করেই থাকে তাহলেও তো তিনি এনিয়ে নাক গলাতে পারেন না। কারণ এটা ডি এস এর অভ্যন্তরীন বিষয়। এ ও এ শুধু দুটি ক্ষেত্রেই শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদন বাতিল করতে পারে। এক, যদি ডি এস এ এ ও এর বার্ষিক ফি না জমা দেয়। দুই, ডি এস এ যদি এওএর স্পোর্টিং অ্যাকটিভিটিতে অংশগ্রহণ না করে। তবে এই দুটি ক্ষেত্রেই শিলচর ডি এস এ সব নিয়ম মেনে আসছে। নিয়মিত এওএর আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। আর গতবছর অক্টোবরেই এওএর ফিও জমা দিয়েছে। তাহলে কিসের ভিত্তিতে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যপদ বাতিল করল এ ও এ? এখানেও আরও এক প্রশ্ন উঠতে পারে। যদি শিলচর ডি এস এ সচিব বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং অবৈধ হয়ে থাকেন তাহলে তার সই করা চেক এওএ গ্রহণ করল কিভাবে? একদিকে এ ও এ সচিব লক্ষ্য বাবু বিজেন্দ্র কে অবৈধ আখ্যা দিচ্ছেন। অন্যদিকে, সেই বিজেন্দ্রর সই করা চেক গ্রহণ করছেন?
শাসকগোষ্ঠীর জনাকয়েক কর্মকর্তা ডি এস এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন বলেই অনুমোদন বাতিল করে দিলেন লক্ষ্য কোওর? নাকি কোনো চাপে পড়ে এমনটা করছেন তিনি? যদি সত্যিই সমস্যার সমাধান করতে হতো তাহলে তো শিলচরের ক্লাবগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারতেন। এখানকার ক্রীড়া সংগঠকরা কি চাইছেন, সংস্থার সদস্যরা কি চাইছেন, সেটা জানার চেষ্টা করতেন এ ও এ সচিব। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ডি এস এর বর্তমান কমিটি যদি সংবিধান সংশোধনী না করে বার্ষিক সাধারন সভা আয়োজন করে নিত তাহলে তো ফের নতুন কমিটিকে অবৈধ আখ্যা দিতেন লক্ষ্য বাবু। তিনিই তো সংবিধান সংশোধন করতে বলেছিলেন শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা কে। সেই অনুসারে কাজ করেছে ডি এস এ। তাহলে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা অসাংবিধানিক কাজকর্ম করল কই?
Comments are closed.