Also read in

বরাকের প্রথম ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগী অলক দেব শারীরিক জটিলতার কারণে আবারও ভর্তি হলেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজে

করিমগঞ্জের বাসিন্দা অলক দেবকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবার ভর্তি করা হয়েছে। তার নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত ক্ষরণের ফলে তাকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে আবার ভর্তি করতে হয়েছে। তার ভাই সুশীল দেবের মতে, গতকাল রক্তক্ষরণ হওয়ার পর পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

“আমরা বিষয়টি নিয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে”, সুশীলদেব জানালেন। তিনি আরো বলেন, তাকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার পর এবং চিকিৎসা শুরু হতেই তার রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনি এখনও জ্বরে ভুগছেন।

অলক দেবকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জেনারেল মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। “আজ সকালে আমি তার অবস্থা ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে ওয়ার্ডে গিয়েছিলাম। বর্তমানে তার একমাত্র সমস্যা হচ্ছে জ্বর। যদিও এখন রক্তক্ষরণ হচ্ছে না। তার রক্তে শর্করা এবং রক্তচাপের মাত্রাও স্বাভাবিক রয়েছে। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তাকে এন্টিবায়োটিক এবং ‘আইভি ফ্লুইড’ দেওয়া হচ্ছে”, জানালেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডঃ ভাস্কর গুপ্ত। তিনি আরো জানান, শিলচর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা নিয়মিত তার ‘রিকভারি প্রোসেস’ পর্যবেক্ষণ করছেন।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, উন্নত চিকিৎসার জন্য বরাকের প্রথম ব্ল্যাক ফ্যাঙ্গাস রোগী অলক দেবকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে রোগীর চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছিল। গত ২০ জুন তার অবস্থার উন্নতি হওয়ার পর গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, ‘মিউকর্মাইকোসিস’ রোগীর চিকিৎসা ছয় মাস অব্দি চালিয়ে যেতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি দিনেরও প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়া বাকি চিকিৎসার জন্য তার ‘ওরাল ডোজ’ নেওয়ার প্রয়োজন বলে হাসপাতাল থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই চিকিৎসা ঘরে থেকেও সম্ভব।

‘রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। ‘ইএনটি’ এবং ‘ইন্ট্রাক্রানিয়াল (ব্রেইন)’ দুটো দিক দিয়েই রোগীর অবস্থা ঠিক রয়েছে। তাই তাকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপিকা তথা ‘ওপথালমোলজি’ ডিপার্টমেন্টের এইচওডি এবং শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে পাঠানো ‘মিউকর্মাইকোসিস’ রোগীদের চিকিৎসার জন্য গঠিত বিশেষ কমিটির সদস্য ডঃ ভারতী গগৈ।

বরাক বুলেটিনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি যোগ করেন,” অনুনাসিক গহ্বর থেকে তার সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। তার একটি চোখও আক্রান্ত হয়েছিল। কারণ মিউকর্মাইকোসিস’র জন্য একটি নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে তিনি একটি চোখের দৃষ্টি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন। তবে তার চোখে কোন অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নেই।”

ডঃ ভারতী গগৈ আরও জানান, “অ্যাম্ফোটেরিসিন বি” দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক জটিলতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। তবে আমাদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী দীর্ঘ সময় ধরে রোগীর ‘ওরাল ডোজ’ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।”

পুনরায় নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত ক্ষরণের ফলে পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। বিগত এক মাস ধরে অলক দেবকে নিয়ে তারা মানসিক উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে রোগীর শারীরিক জটিলতা তাদের উদ্বেগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

Comments are closed.

error: Content is protected !!