হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো লোকেদের গোলাপ ফুল ও চকলেট উপহার দিয়ে অভিনব বার্তা ট্রাফিক পুলিশের
১৪ ফেব্রুয়ারি ভেলেন্টাইনস ডে, এর আগে অনেকেই বিভিন্ন দিন পালন করেন যেমন রোজ-ডে, প্রমিস-ডে অথবা চকলেট-ডে। পশ্চিমী সভ্যতার এই রীতিগুলো খুব একটা গুরুত্ব পায় না আমাদের সমাজে। তবে পুলিশের ট্রাফিক শাখা এই দিনকে সামনে রেখে জনগণকে সচেতন করার এক অভিনব পদক্ষেপ নেয়। যেহেতু ‘রোড সেফটি মাস’ চলছে, সারা জেলায় সড়ক সুরক্ষা নিয়ে বিভিন্ন কার্যকলাপ করছেন বিভাগের আধিকারিকরা। শিলচর শহরের সদরঘাট পয়েন্ট বা ডিআইজির বাংলোর সামনে ট্রাফিক বিভাগের আধিকারিকরা নজরদারি রাখেন। যারা হেলমেট না পরে বাইক চালান বা অন্যান্য নিয়ম ভাঙ্গেন তাদের আটক করা হয়, নিয়ম অনুযায়ী ফাইন কাটা হয়। তবে বুধবার বিভাগের আধিকারিকরা কারও কাছ থেকে ফাইন নিলেন না, বরং তাদের হাতে গোলাপ ফুল আর চকলেট ধরিয়ে লজ্জা দিলেন। এতে অনেকেই লজ্জিত হয়েছেন এবং কথা দিয়েছেন আগামীতে হেলমেট ছাড়া বাইক চালাবেন না।
সদর থানার ওসি দিতুমনি গোস্বামী এবং ট্রাফিক শাখার আধিকারিক সঞ্জিব গোস্বামী নিজে দাঁড়িয়ে হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো লোকেদের হাতে গোলাপ ফুল ও চকলেট তুলে দেন। দিতুমনি গোস্বামী বলেন, “আমরা লাগাতার প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছি, তাদের নিজের সুরক্ষার জন্য যাতে হেলমেট পরে বাইক চালান। তবে কিছু লোক বারবার নিয়ম লঙ্ঘন করেন, এমনকি তারা ফাইন দেওয়ার পরেও হেলমেট ছাড়া বাইক চালান। তাই আমরা এই পদ্ধতিতে এদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছি। যারা এদিন হেলমেট ছাড়া বাইক চালিয়েছেন তাদের আটকে ফাইন নেওয়া হয়নি বরং গোলাপ ফুল আর চকলেট উপহার দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয় অন্তত কিছু মানুষ এতে লজ্জা বোধ করবেন এবং আগামীতে নিজের সুরক্ষার খাতিরে হেলমেট পড়বেন।”
ট্রাফিক আধিকারিক সঞ্জিব গোস্বামী বলেন, “আমরা এবছর রোড সেফটি সপ্তাহ পালন না করে পুরো মাস নানান অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। উদ্দেশ্য একটাই, চালকদের মধ্যে সুরক্ষা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা। অনেক চেষ্টার পরেও মানুষ কিছুতেই সচেতন হতে রাজি নন, তাই একটু আলাদা ভাবনা নেওয়া হলো। প্রায় ৫০ জন ব্যক্তি যারা হেলমেট ছাড়া বাইক চালাচ্ছিলেন তাদের হাতে গোলাপ ফুল আর চকলেট উপহার তুলে দিয়ে এটুকু বুঝিয়ে দিতে চেয়েছি, আমাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ফাইন কাটা নয় বরং সাধারণ মানুষের সুরক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেউ কেউ মনে করেন ট্রাফিক পুলিশরা চালকদের আটকায় শুধুমাত্র ফাইন তুলবে বলে, অবশ্যই গোলাপ ফুল আর চকলেট পেয়ে তারা অন্তত এটা বলবেন না, বরং নিজেরা নিজেদের সুরক্ষা কথা ভেবে সচেতন থাকবেন, এটুকুই আমরা চাই।”
অতীতে শিলচরের ট্রাফিক শাখা এবং কাছাড় পুলিশ জনগণের সচেতনতা এনে দিতে এধরনের নানান অভিনব পদ্ধতি নিয়েছে। তত্কালীন পুলিশসুপার রাজবির সিং এক সময় নিজে রাস্তায় নেমে হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো লোকেদের হাতে হেলমেট তুলে দিয়েছিলেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফাইন না নিয়ে হেলমেটের দাম টুকু পুলিশ নিয়েছিল। এতে যুক্তি ছিল, যারা ঘর থেকে বেরোনোর সময় হেলমেট আনতে ভুলে গেছেন তাদের হাতে হেলমেট তুলে দেওয়া পুলিশের কর্তব্য।
Comments are closed.