বিজেপির ধর্মীয় রাজনীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বরাকের বাঙালি হিন্দুরা: ড: পরমানন্দ রাজবংশী
নিছক রাজনীতির স্বার্থে বিজেপি সহ বিভিন্ন দল রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণ করছে, এতে সব থেকে বেশি ক্ষতি হবে বরাক উপত্যকায় বসবাসকারী বাঙালি হিন্দুদের। এনআরসিতে বাদ পড়া তালিকায় বিভিন্ন খিলঞ্জিয়া গোষ্ঠীর লোক রয়েছে, তবে তাদের নাম বাদ পড়ে থাকবে না। সরকার তুলতে না পারলে আমরা তাদের নাম উঠিয়ে দেবো, এমনটাই বললেন অসম সাহিত্য সভার সভাপতি ড: পরমানন্দ রাজবংশী।
এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, অসমের প্রত্যেক অঞ্চলেই বাঙালি হিন্দুর বসবাস রয়েছে। তবে এখন নাগরিকত্ব বিল, এনআরসি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে ধর্মীয় মেরুকরণ করছে, তাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এখানে বসবাসকারী বাঙালি হিন্দুরা। কারণ রাজ্যের অন্যান্য এলাকায় আমরা সবাই একে অন্যের পাশে আছি, বরাক উপত্যকাকে এই ধাক্কা একাই সামলাতে হবে। আমরা রাজ্যের প্রত্যেক খিলঞ্জিয়ার পাশে আছি। আমি জানি, এক বিরাট অংশ খিলঞ্জিয়া এনআরসি থেকে বাদ পড়েছেন, আমরা চাই তাদের নাম সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করা হোক। যদি সেটা না হয়, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, সব নাম নিজে তুলে দেবো। বরাক উপত্যকার খিলঞ্জিয়া গ্রামগুলোর দিকে আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে, তাদের সুরক্ষা নিয়ে কোনও আপোস করা হবে না।
বরাক এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মধ্যে সমন্বয়ের পরিবেশকে উন্নত করতে ‘জ্যোতি দিবস’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার শিলচরে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অসম সাহিত্য সভা। সাহিত্য সভার সভাপতি ড: পরমানন্দ রাজবংশী সহ বিভিন্ন সংস্কৃতিপ্রেমী এদিন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অন্যতম অতিথি পরমানন্দ রাজবংশী বলেন, রাজনীতির স্বার্থে আজ যেভাবে অসমে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তা অসমের ধর্ম কোনও দিন ছিলনা। এরাজ্যের সব থেকে বড় ক্ষতি যদি কেউ করে থাকে, সেটা করছে এই বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়ার এই মানুষগুলো। আমাদের ইতিহাস বলে দিচ্ছে, আমরা একে অন্যের পাশে থেকে উন্নত হয়েছি। আমরা কেউ কারো থেকে আলাদা হয়ে থাকতে পারিনা। আমাদের সংস্কৃতি একে অন্যের থেকে অনুপ্রাণিত, আমাদের ভাষাও একে অন্যের পরিপোষক। তবে এই বিষবাষ্প আমাদের দূরে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র।
জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালার স্মৃতির উদ্দেশ্যে অসম সাহিত্য সভা প্রত্যেক বছর জ্যোতি দিবস পালন করে। তবে এবার দিনটিকে শিলচরে বিশেষভাবে পালন করা হচ্ছে। তার অন্যতম কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে বরাক এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মানুষের মধ্যে সমন্বয় ফিরিয়ে আনা, এমনটাই জানালেন অসম সাহিত্য সভার সাধারণ সম্পাদক পদুম রাজখোয়া।
এদিন শিলচরে অসম সাহিত্য সভার কার্যালয় এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি আলাদা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সকালে ৮টা ৪৫ মিনিটে অসম সাহিত্য সভার কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন করেন পরমানন্দ রাজবংশী। তারপর স্মৃতি তর্পণ অনুষ্ঠান এবং জ্যোতিপ্রকাশ আগরওয়ালার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান হয়। এতে পরমানন্দ রাজবংশী সহ হিরণ্য বিজয় ভট্টাচার্য ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১১ টায় আলোচনা সভায় কাছাড়ের জেলাশাসক ডাঃ এস লক্ষ্মণন মুখ্য অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়ার কথা ছিল তবে তিনি বিশেষ কারণে আসতে পারেননি। সভায় বরাক উপত্যকার বিভিন্ন কবি ও সাহিত্যিকদের আমন্ত্রণ করা হয়। মুখ্য বক্তা হিসেবে বিশিষ্ট অধ্যাপক এবং গবেষক অমলেন্দু ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার ভাষণে অসমের সংস্কৃতিতে বাঙালি এবং অসমিয়া দুই সম্প্রদায়ের ইতিহাসের কথা তুলে ধরেন।
বিকেল চারটায় আসাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। যার শীর্ষক ছিল ‘তোরে মোরে আলোকরে যাত্রা’। এর উদ্বোধক ছিলেন মেঘালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মহবুবুল হক এবং মুখ্য বক্তা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান চৌধুরী।সোনাইর বিধায়ক আমিনুল হক অনুষ্ঠানের সম্মানীয় অতিথি হিসেবে অংশ নেন।
Comments are closed.