ছয় মাসে তিরিশের বেশি চুরির ঘটনায় আতঙ্কিত শিবালিক পার্কের বাসিন্দারা, অসহায় পুলিশ
মেহেরপুরের শিবালিক পার্ক এলাকার মানুষ এখন দিনের বেলায়ও আতঙ্কে থাকেন, জানালা খোলা থাকলেও চোর ঢুকে পড়ার ভয়। এলাকায় বয়স্ক ব্যক্তি যারা একা থাকেন তাদের বাড়িতে যখন তখন চুরি হচ্ছে। এমনকি পুলিশের বাড়িতেও চুরি হচ্ছে। অথচ এতে লাগাম টানতে ব্যর্থ প্রশাসন। এখন চোরেদের সাহস এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে তারা এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে সেখান থেকে চুরি করছে। এলাকাবাসীরা তাদের হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও কোন লাভ হয় না। সোমবার রাতে এলাকায় ছয়টি বাড়িতে চুরি হয়েছে। এলাকাবাসীরা বলছেন গত ছয় মাসে শিবালিক পার্কে অন্তত ৩০ বার চুরি হয়েছে, কিন্তু একটা ঘটনায়ও চোর ধরে নি পুলিশ।
শিবালিক পার্ক ডেভলপমেন্ট কমিটির তরফে দেবাশীষ পাল জানিয়েছেন, তারা নিজেরা চোর ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তবু সমস্যার সমাধান হয়নি। রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন এলাকার মানুষ, বাঁশি কিনে প্রত্যেকের বাড়িতে রেখে দিয়েছেন। সারারাত যুবকরা চোখ-কান খোলা রাখে, কারও বাড়িতে অস্বাভাবিক কোনও আওয়াজ হচ্ছে কিনা। তবে চোরেরা কোনও না কোনও ভাবে তাদের পরিকল্পনা বদলে ফেলে এবং বিষয়টা যেই তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে যায়।
তিনি বলেন, “এখন এলাকায় চোরেরা কাউকেই ভয় করছে না। একসময় তারা পাড়ায় ঘর ভাড়া নিয়ে বাস করতে শুরু করেছিল। সেটা আমরাই আবিষ্কার করি এবং পুলিশের কাছে সম্পূর্ণ তথ্য তুলে দিই। তবে এরপরেও চোরেদের সাহস কমে যায়নি কেননা তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। এলাকায় এখন জানালা খুলে ঘুমোলে চোর ঢুকে সর্বোস্ব নিয়ে যাচ্ছে। এক বয়স্ক মহিলা একা থাকেন, জানালা খুলে ঘুমিয়ে ছিলেন এবং তার বাড়িতে ঢুকে যা কিছু মূল্যবান ছিল সব নিয়ে গেছে চোরেরা।
শুধু রাতের বেলা নয়, এখন দিনেও সমানভাবে চুরি হচ্ছে। পুলিশের বাড়ি থেকেও চুরি হয়েছে। অথচ তারা চোর ধরতে পারছেন না। শিবালিক পার্কের ভৌগোলিক অবস্থান এমন, যেখানে বিভিন্ন দিকের রাস্তা রয়েছে তাই চোরেরা পালিয়ে যাওয়ার অনেক বেশি সুযোগ পাচ্ছে। আমরা পুলিশের সঙ্গে এব্যাপারে বারবার কথা বলেছি, এক সময় পুলিশ আধিকারিকরা বলছেন তারা অসহায়। এমন একটা সমাজে আমরা রয়েছি যেখানে পুলিশ বলছে তারা চোর ধরতে অসহায়, আমরা কার কাছে যাব? নিজেরাই টাকা খরচ করে দারোয়ান রাখার ব্যবস্থা করেছিলাম কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। এরপর আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম বাঁশি কিনব এবং রাতের বেলা এলাকার প্রত্যেক ব্যক্তিকে সতর্ক রাখতে চেষ্টা করব। এখনও আমরা রাতের বেলা যখনই ঘুম ভাঙ্গে ছাদের উপরে উঠে বাঁশি বাজাই, এতে অন্যরা সচেতন হয়ে উঠেন। তবে এতকিছুর পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না, আমরা ভেবে পাচ্ছি না কি করলে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে।
চোরেরা আমাদের ভেতরের খবর কোনও না কোনওভাবে সংগ্রহ করে নেয় এবং তাদের পরিকল্পনা পাল্টে ফেলে। হয়তো পাড়ায় চায়ের দোকানে বসে আমাদের সঙ্গে গল্প করতে করতে সবকিছু খবর নিয়ে নেয় তারা।”
তবে শুধুমাত্র একটি এলাকায় নয়, শিলচর শহরের প্রায় প্রত্যেক দিকে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ইত্যাদি অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে লকডাউন পরবর্তী সময়ে অপরাধমূলক কাজ ক্রমশ বাড়ছে। পুলিশের আধিকারিকদের কাছে এব্যাপারে বারবার অবগত করা হচ্ছে। অথচ চোরেদের সাহস কিছুতেই কমছে না। কালীপুজোর রাতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় রীতিমতো ডাকাতি হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে শহরের অন্যান্য অপরাধমূলক ঘটনা। জুয়া এবং মদের আড্ডা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আবার বসতে শুরু করেছে। অনেকেই বলেন, এসবের খবর পুলিশের কাছে আছে, তবে তারা কোনও বিশেষ কারণে কড়া মনোভাব নিচ্ছে না। এভাবে চললে আগামীতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। সাধারণ মানুষ বারবার আওয়াজ তুললেও সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসছে না প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরাও।
Comments are closed.