"যারা ধ্বংস করেছেন, তারাই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেন," কাগজ কল পুনরুদ্ধার নিয়ে সংসদে সরব রাজদীপ; "প্রয়োজনে পিপিপি মডেলে শুরু হোক"
কাছাড় এবং নগাঁও কাগজকলের ভবিষ্যৎ অনেকটাই এনসিএলটির নির্দেশের উপর নির্ভর করছে। এর আগে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দুই কাগজ কল রিভাইবেল প্ল্যান বা পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা থাকলে জানাতে বলা হয়েছে। সরকার পক্ষ সম্প্রতি কিছুটা সময় চেয়ে নিয়েছেন। এবার শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে কাগজ কল দুটির পুনরুদ্ধারের দাবি উত্থাপন করেছেন। পাশাপাশি তিনি কাগজগুলো নিয়ে আন্দোলন করা ব্যক্তিদের কটাক্ষ করেছেন।
মঙ্গলবার রাতে বিশেষ অধিবেশনে সাংসদ রাজদীপ রায় বলেন, “গোটা অসম রাজ্যের জন্য এই দুই কাগজ কল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এক সময় অত্যন্ত সফল দুই কাগজকলের ওপর নির্ভর করেন প্রায় ৪ হাজার স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মচারী। তাদের বহুদিনের প্রাপ্য টাকা দেওয়া হয়নি। এছাড়া প্রায় এক লক্ষ লোক বাইরে থেকে বাঁসের ব্যবসা করার সুযোগ পেয়েছিলেন এই দুই কাগজ কলের মাধ্যমে। কাগজকল পুনরুদ্ধারের প্রসঙ্গ নতুন নয়, আমাদের দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যেও এটা ছিল। ফলে এটা আমাদের দায়িত্ব, আমরা যাতে যেকোনওভাবে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করি। যদি সম্ভব হয় একে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে অর্থাৎ পিপিপি মডেলে চালু করা যেতে পারে। অথবা প্রয়োজনে পুরোপুরিভাবে বেসরকারিকরণ করা যেতে পারে। যে কোন ভাবেই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে কারণ জনগণ চাইছেন এটি হোক। তবে যারা এই কাগজকলের এই অবস্থার জন্য দায়ী, তারাই এখন রাস্তায় নেমে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং আমাদের সরকারকে অযথা দোষারোপ করেন।”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ন্যাশনাল কোম্পানি লো ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে কাছাড় এবং নগাঁও কাগজকলকে বাঁচানোর জন্য রিভাইভাল প্ল্যান জমা করতে বলা হয়েছিল। ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এটি জমা করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে এব্যাপারে আরও একমাস সময় চাওয়া হয়েছে। সেটা গ্রাহ্য করেছে এনসিএলটি এবং কাগজ কল নিয়ে তাদের শুনানি পিছিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কাছাড় এবং নগাঁও কাগজকল পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সরব জয়েন্ট রিভাইভাল কমিটির পক্ষ থেকে কাগজ কলের দুরবস্থার জন্য বারবার বর্তমান কেন্দ্র সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। কমিটির পক্ষ থেকে মানবেন্দ্র চক্রবর্তী সম্প্রতি বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় এসে দুটি কাগজ কল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অথচ এরপর এখন পর্যন্ত ৪১৪১ কোটি টাকা পুনরুদ্ধারের নামে বরাদ্দ হয়েছে। এদিকে কর্মচারীরা বহু মাসের বকেয়া বেতন পাননি আর সরকারের পক্ষ থেকে পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
Raised the issue of PAPER MILLS ( Panchgram and Jagiroad ) of Assam in the Parliament today during the Zero Hour
Posted by Dr. Rajdeep Roy on Tuesday, September 22, 2020
২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছিল। কেপিটেল কমিটি অব ইকনোমিক অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কাগজ কল দুটোকে প্রয়োজনে পিপিপি মডেলে পুনরুদ্ধার করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে পুনরুদ্ধারের নামে কাড়ি কাড়ি অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। তারপরেও কোনও এক বিশেষ কারণে কাজ আটকে যায়।
এবার শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে কাগজ কলের ভবিষ্যৎ। সরকার যদি সময়মতো ন্যাশনাল কোম্পানি লো ট্রাইবুনালের কাছে কাছাড় এবং নগাঁও কাগজকলের রিভাইভাল প্ল্যান জমা না করা হয় তবে কি হতে পারে? সাধারণত এধরনের ঘটনায় পুরো সেটআপটা বিক্রি করে দেওয়ার নির্দেশ আসতে পারে। এমনটা হলে কোনও ধরনের বকেয়া বেতন মেটানো হবে না। কাগজকলকর্মী এবং তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অন্ধকারে চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ৪২ মাস ধরে কর্মীরা বিনা বেতনে রয়েছেন। দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে এখন পর্যন্ত ৬৯ জন কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। একসময় উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম সফল শিল্প হিসেবে পরিচিত ছিল কাগজকলটি। অথচ সরকারের উপেক্ষার ফলে আজ এমন দুর্দশা এসে পৌঁছেছে।
Comments are closed.