লকডাউন হচ্ছেই, জানালেন উপত্যকার তিন জেলাশাসক, সমর্থনে শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়ও
কাছাড় করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দি জেলায় ২৬ আগস্ট থেকে ১০ দিনের জন্য সম্পূর্ণ লকডাউন হচ্ছেই, এমনটাই জানিয়েছেন তিন জেলার জেলাশাসক। কাছাড়ের জেলাশাসক ইতিমধ্যে লকডাউনের জন্য পুরোপুরি নির্দেশ ‘ড্রাফ্ট’ করে নিয়েছেন। সময়মতো জনগণের উদ্দেশ্যে এটি তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন। হাইলাকান্দির জেলাশাসক মেঘ নিধি দাহাল জানিয়েছেন, “পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে লকডাউনের দিকেই তারা এগোতে চলেছেন।” করিমগঞ্জের জেলাশাসক আনবামুথান এমপি স্পষ্ট জানিয়েছেন, “সম্পূর্ণ লকডাউন হচ্ছেই, এতে কোনও দ্বিমত নেই।”
কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জল্লি লকডাউনের সম্পূর্ণ নির্দেশাবলী জারি করেছেন। এতে বলা হয়েছে:
১) সাপ্তাহিক, অর্ধ সাপ্তাহিক, দৈনিক সকাল এবং বিকালের সব ধরনের বাজার এই দশ দিন বন্ধ থাকবে।
২) স্ট্যান্ড অ্যালোন দোকান অর্থাৎ যে দোকানের দুই পাশে কোন দোকান নেই, এগুলো শুধুমাত্র গ্রামাঞ্চলের সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত খোলা থাকতে পারবে।
৩) অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর সরবরাহ বন্ধ করা হবে না।
৪)কনস্ট্রাকশন, কৃষিকাজ, চা বাগানের কাজ, শিল্প ও বানিজ্যে যেখানে কাজ চলছে সেগুলো খোলা থাকবে।
৫) সরকারি কার্যালয় এবং সব ধরনের ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে, তবে কর্মচারিদের কোভিড প্রটোকল সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে।
৬) বেসরকারি যানবাহন শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় কাজেই চলতে পারবে। লকডাউনের সময় যেসব পরীক্ষা থাকবে তার জন্য এবং কেউ যদি কোভিড পরীক্ষা করাতে চান তার জন্য এসব যানবাহন ব্যবহার করা যাবে।
৭) যে ছাত্র-ছাত্রীরা জেইই/এনইইটি পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন তারা হল টিকেট বা আইডি কার্ড দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন।
৮) সব ধরনের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, এই সময়ে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনসমাগম করা চলবে না।
১০) অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা যেমন হাসপাতাল (সরকারি এবং বেসরকারি), ডায়াগনষ্টিক ল্যাব এবং অন্যান্য কোভিড পরীক্ষা কেন্দ্র খোলা থাকবে।
১১) আন্তঃরাজ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে না, প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের জন্য কোন আলাদা অনুমতি নিতে হবে না।
বিশেষভাবে বলা হয়েছে যারা এই সময়ে সোয়াব স্যাম্পল পরীক্ষা করতে চাইবেন তাদের সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলাফেরার অনুমতি থাকবে।
শনিবার রাতে বরাক বু্লেটিনের পক্ষ থেকে মুখ্য সচিব কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান তিন জেলায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এবং করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই আগে থেকে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সরকার যেন সম্পূর্ণ লকডাউনের চিন্তা করে। যদিও কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে আনলক প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয় পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে।”
তিনি রবিবার এই সূত্রে যে নির্দেশ জারি করেছেন তাতেও বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই নির্দেশ পালন করতে পারে। পাশাপাশি তিন জেলাশাসক বারবার করে লকডাউনের আবেদন জানিয়ে বিভিন্ন চিঠি পাঠিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মুখ্য সচিব। তারা বলেছেন, “আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্বিগুণ হচ্ছে, তাই লকডাউন নিয়ে ভাবা উচিত।”
রবিবার রাত দশটা নাগাদ কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জল্লি জানান, তারা জেলায় সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করার পক্ষে একটি নির্দেশ তৈরি করেছেন। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের নির্দেশকে মান্য করেই নিয়ম গঠন করা হবে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ফলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সুরে করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দির জেলা শাসক লকডাউনের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন।
তবে জনমনে লকডাউনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। তাদের বয়ান, “বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে লকডাউন কোনোভাবেই সংক্রমণ রোধ করতে পারবে না। এতে শুধুমাত্র জিনিসপত্রের মূল্য আরেকটু বৃদ্ধি পাবে, যা ব্যবসায়ী সমাজের জন্য লাভদায়ক।” কেউ কেউ সরাসরি বলছেন, “ব্যবসায়ী সমাজের অঙ্গুলিনির্দেশেই স্থানীয় প্রশাসন লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।”
শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় এদিন সন্ধ্যায় তার ফেসবুক পেইজে লকডাউনের সমর্থনে একটি ভিডিও আপলোড করেন। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করা ছাড়া আর কোনও রাস্তা চোখে পড়ছে
Comments are closed.