Also read in

করিমগঞ্জ জেলা কারাগারে থাকা রোহিঙ্গা মহিলা জন্ম দিলেন ছোট্ট শিশু কন্যার

গত বছর ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরা হয়ে ভারতবর্ষে ঢুকেছিল মায়ানমারের বাসিন্দা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের এক পরিবার। মোহাম্মদ আলি, তার স্ত্রী রাশিদা বেগম এবং তিন সন্তান পুলিশের কাছে ধরা পড়েছিল। তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় করিমগঞ্জ কারাগারে। পরবর্তীতে কারাগারের কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন রশিদা বেগম সন্তানসম্ভবা, তাই তার জন্য বিশেষ খাবার দাবারের ব্যাবস্থা করা হয়, ব্যবস্থা হয় চিকিৎসার। সম্প্রতি রশিদা বেগমের প্রসবব্যথা দেখা দিলে তাকে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।

করিমগঞ্জ জেলা কারাগারের সুপারেনটেনডেন্ট সঞ্জীব কুমার চেতিয়া জানিয়েছেন, পরিবারটি মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান সম্প্রদায়ের এবং সেখান থেকে তারা প্রথমে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীতে আগরতলা হয়ে ভারতবর্ষে ঢুকে এবং করিমগঞ্জ সীমান্তে তাদের আটক করে পুলিশ। অন্য দেশের লোক এবং অবৈধভাবে ভারতবর্ষে ঢুকে পড়েছেন, এই প্রমাণ পাওয়ার পর করিমগঞ্জ কারাগারে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয় তাদের। কিছুদিন পরেই রশিদা জানান তিনি সন্তানসম্ভবা এবং জেলের তরফ থেকেই তার চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হয়।

জেলা সুপার বলেন “রশিদা বেগম সন্তানসম্ভবা এটা জেনে তাকে বিশেষভাবে সুবিধা প্রদান করা হয় এবং তার সম্পূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি সাড়ে তিন কিলোগ্রাম ওজনের শিশু কন্যার জন্ম দিয়েছেন যেটা তার কাছে প্রথম। এর আগে তিনি যে তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তাদের ওজন এতটা ছিল না। এবার আমাদের কারাগারে শিশুদের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯-য়ে। গত দুই বছরে সরকারের তরফে আটক বিদেশিদের ফেরত পাঠানোর কোনও ব্যবস্থা হয়নি। যেহেতু এই পরিবারটি মায়ানমারের, সরকারিভাবে তাদের পাঠাতে হবে সেই দেশেই। তাই যতদিন সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, এরা আমাদের জেলে থাকবে। তবে শিশুটির নাগরিকত্ব কোন দেশের হবে এটা সরকার ঠিক করবেন।”

তিনি আরও জানান, এই মুহূর্তে করিমগঞ্জ জেলা কারাগারে মোট ৪২ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন যারা অবৈধভাবে ভারতবর্ষে ঢুকে পড়েছেন। এরমধ্যে ১৪ জন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মায়ানমারের নাগরিক, ১২ জন বাংলাদেশের নাগরিক সহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা আটক হয়ে আছেন। অতীতে বহুবার বাংলাদেশ বা মায়ানমারের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র সরকার, তবে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে এটা প্রায় বন্ধ রয়েছে। এপ্রিল মাসে ১৪ বছরের একটি রোহিঙ্গা শিশুকে মায়ানমারে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সেই দেশের আধিকারিকরা আন্তর্জাতিক সীমান্তের গেট খুলতে রাজি হননি। মায়ানমারে এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ তাই কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কাউকে সেখানে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে না।

Comments are closed.