তারাপুর থানার সামনে থেকে দিনের আলোয় তিন লক্ষ টাকা ছিনতাই, আটক দুই
শিলচর শহরে একের পর এক প্রকাশ্যে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনার প্যাটার্ন একই। শুক্রবার দুপুর বারোটা নাগাদ ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তারাপুর শাখা থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা উঠিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন উত্তম কুমার রায়। তার বাড়ি তারাপুর ওভার ব্রিজ পেরিয়ে করিমগঞ্জ রোডে।
নিজের স্কুটিতে করে বাড়ি যাওয়ার সময় কালো রঙের পালসার বাইকে আশা দুই অজ্ঞাত পরিচয় যুবক তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। একটি ব্যাগে খুব সাবধানে টাকাটি বুকের পাশে রেখে দিয়েছিলেন তিনি, তার উপর রীতিমত আক্রমণ চালিয়ে টাকাটি ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয় তারা। তিনি চিৎকার করলে অনেকেই এসে যুবক দুটিকে ধরার চেষ্টা করেন, কিন্তু ততক্ষণে তারা বাইক স্টার্ট দিয়ে রওনা হয়ে যায়। তাদের পিছু নেয় দুজন পুলিশ কর্মচারী এবং এলাকার কিছু যুবক। কিন্তু শেষমেশ আটকানো যায়নি।
বছর পঞ্চাশের উত্তম কুমার রায়ের বাড়িতে কনস্ট্রাকশন চলছে এবং কর্মরত লেবারদের বেতন দিতে টাকাটি তুলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি শহরে বেশ কয়েকটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, ফলে আগে থেকেই সাবধান ছিলাম। একটি ব্যাগে টাকাগুলো ঢুকিয়ে একেবারে বুকের পাশে বেঁধে স্কুটি করে বাড়ি ফিরছিলাম। চলন্ত স্কুটিতে তারা ধাক্কা দেয়, আমাকে মাটিতে ফেলে জোর করে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। আমি সব চেষ্টা করেও যখন ওদের আটকাতে পারিনি তখন চিৎকার শুরু করি। একেবারে থানার গেটের সামনে ঘটনা, চিৎকার শুনে দুজন পুলিশ সহ এলাকার মানুষ এগিয়ে আসেন। পুলিশের কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে বাইক নিয়ে তাদের পিছু নিলেও কিছুক্ষণ পরে এসে জানান তারা দুষ্কৃতীদের ধরতে পারেনি। ঘটনায় আমি জখম হওয়ার পাশাপাশি মানসিক ভাবে এখন অনেকটাই ভেঙে পড়েছি। আমরা পুলিশের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছি। শুনেছি দুজনকে আটক করা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের মুখ আমি দেখিনি, তবে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের শারীরিক গঠনের সামঞ্জস্য রয়েছে। আশা করছি পুলিশ শুধুমাত্র আমার হারিয়ে যাওয়া টাকা বের করে দেবে না, পাশাপাশি পুরো গ্যাংটাকে আটক করবে।”
পুলিশের তরফে এখনও পরিষ্কার কোনো তথ্য জানানো হয়নি, শুধুমাত্র বলা হয়েছে ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অতীতে চুরির অভিযোগ ছিল এবং সন্দেহের ভিত্তিতেই তাদের নিয়ে আসা হয়েছে।
সম্প্রতি শিলচর শহরে যতগুলো প্রকাশ্যে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা হয়েছে প্রায় সবগুলোর মধ্যে একটা বিশেষ প্যাটার্ন রয়েছে। কোনও ব্যক্তি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বেরোলে ঠিক টাকার ব্যাগটাই ছিনতাই হয়। অর্থাৎ দুষ্কৃতীরা জানে কোন ব্যাগে টাকা রয়েছে সেটা, তারা যেকোনও ভাবে সেই ব্যাগটি তুলে নিয়ে যায়। একটা কালো পালসার বাইক, তাতে বসা দুজন যুবক। শিকারি পাখির মতো তারা টাকার ব্যাগের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ব্যাগটি নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এতে বেশ কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যেমন ব্যাংকের বাইরে থেকেও তারা কি করে জানতে পারে কোন ব্যাগে টাকা রয়েছে? যখন কোনও ব্যক্তি ব্যাংক থেকে বড় অংকের টাকা উইথড্র করেন, ঠিক তখনই আশেপাশে ছিনতাইকারীরা কি করে চলে আসে? এরা শহরের মধ্যে থেকে দিনের আলোয় টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যায় এবং পুলিশ তাদের ধরতেই পারে না কিভাবে?
ব্যাংকের বাইরে বা গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসিটিভি নেই ফলে এদের শনাক্ত করা যায় না। তবে সিসিটিভি থাকলেও এখন মাস্ক পড়ে বা মুখ ঢেকে দুষ্কৃতীরা এসব কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি দাসকলোনির সামনে সন্ধ্যেবেলা এটিএম থেকে টাকা তুলতে গিয়ে চোরেদের খপ্পরে পড়েছিলেন ৮৮ বছরের এক ব্যক্তি। একা লড়াই করে চোর ধরে জনগণের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে এসব এলাকায় সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ প্রশাসন। এমনকি যে ব্যাংকের এটিএমে ঘটনা হয়েছে, তারাও অতিরিক্ত কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করেননি। শহরবাসীদের মতে পরিস্থিতি এখন এমন, জনপ্রশাসন জনগণকে বলছে, ‘আপনারা নিজেরাই নিজেদের সুরক্ষার খেয়াল রাখবেন, আমাদের পুলিশ বা শাসনব্যবস্থা কাউকে সুরক্ষা দিতে সমর্থ নয়।’
Comments are closed.