লাল দুর্গে ধ্বস গৈরিকের সগর্ব প্রবেশ ঃ কি বলছেন বরাকের নেতারা
ত্রিপুরাসহ তিন পূর্বোত্তর রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল ইতিমধ্যেই আমরা সবাই জেনে গেছি। তবে বরাক উপত্যকার জনগন স্বাভাবিক ভাবেই ত্রিপুরা নিয়েই বেশী আগ্রহী (ত্রিপুরার ফলাফল – বিজেপি ও সহযোগী – ৪৩ , বামপন্থী জোট – ১৬ , কংগ্রেস – ০)। ২৫ বছরের বাম দুর্গ হঠাৎ করে ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেল তাও আবার রেকর্ড দোলার (swing) মাধ্যমে এতটা বোধ হয় বিজয়ী দল ও আশা করেনি। বিভিন্ন গনমাধ্যমে সর্বভারতীয় নেতারা তাদের মুল্যবান মতামত অভিমত দিচ্ছেন তাই আমরা সেদিকে যাবনা, বরাকের নেতারা কি বলছেন তা জানতেই বরাকবাসী বেশি উৎসুক।
পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের প্রথম পছন্দ ছিল সি,পি,এম। তাই আমাদের প্রতিনিধি সি,পি,এম এর জেলা কমিটির সম্পাদক শ্রী দুলাল মিত্রের সাথে যোগাযোগ করেন।
শ্রী দুলাল মিত্র ঃ “আমরা খুবই নিশ্চিত ছিলাম যে, আমরা জিততে চলেছি , কিন্তু কি করে এমনটা ঘটল তা এই মুহূর্তে এখানে বসে বলা যাচ্ছে না । তবে এই নির্বাচনে জেতার জন্য বিজেপি অনেক টাকা পয়সা খরচ করেছে, আসাম থেকে অনেক লোকজন নিয়ে গেছে এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে অসত্য প্রচার চালিয়ে এই পরিবেশ তৈরি করে জয়লাভ করেছে; যারা দুদিন আগে কংগ্রেস করছিল তারাই আজ বিজেপি হয়ে গেছে ।সাময়িক ভাবে আমাদের কিছুটা বেগ পেতে হবে তবে বামফ্রন্ট সরকার কিভাবে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছিল তা জনগণ ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে । আমি মনে করি যে বরাক উপত্যকায় ত্রিপুরার এই ফলাফলের কোন প্রভাব পড়বেনা।”
আমাদের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে পূর্তমন্ত্রী শ্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেন ঃ “ত্রিপুরা নির্বাচনে আসাম এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনের প্রতিফলন ঘটেছে; বিশেষত মোদীজির নেতৃত্বে যে ভাবে আমরা প্রচার চালিয়েছি এবং জনগণের কাছে আমদের কথাগুলো পৌছিয়ে দিতে পেরেছি, দলের নেতা কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তার ফলশ্রুতিতে এই ফল পাওয়া গেছে। আমরা প্রায় শুন্য থেকে এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি । এই ফলাফলের প্রভাব বরাক তথা আসাম এবং অন্যান্য রাজ্যে ও অবশ্যই পড়বে । বানিজ্যিক এবং সামাজিক দিক থেকে ও বরাক উপত্যকা উপকৃত হবে।”
আমাদের শিলচরের মাননীয়া সাংসদ শ্রীমতী সুস্মিতা দেবের সাথে দুপুর বেলা যোগাযোগ করলে বলেন যে, সম্পূর্ণ ফলাফল প্রকাশিত হলে তিনি তার প্রতিক্রিয়া ব্যেক্ত করবেন । কিন্তু ফল প্রকাশের পর ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
আমাদের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কংগ্রেস দলের শ্রী অজিত সিং ও খুব একটা কিছু বলতে চাননি , তিনি তার সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতকারে বলেন ঃ “ত্রিপুরা রাজ্যে কি পরিস্থিতিতে পরিবর্তন হল তা আমরা এখানে বসে কি করে বলব ? এটা ত্রিপুরাবাসির ব্যাপার।”
বিজেপি দলের বর্ষীয়ান নেতা শ্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ বললেন , “২৫ বছর ধরে কম্যুনিস্টরা রাজত্ব করেছে এবং ওরা বলেন যে ওদের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা হয় না; তা যে অসত্য ধারনা তা প্রমানিত হল। কম্যুনিস্টরা কি করে গ্রহণযোগ্যতা হারান তার শ্রেষ্ঠ উদাহরন হচ্ছে ত্রিপুরার নির্বাচন এবং তাদের আসল চেহারা ও প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের কর্মীরা যারা এই বিরাট জয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছে তাদের অভিনন্দন জানাই। এই জয়ে বরাক উপত্যকায় স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব পড়বে এবং সাংঘটনিকভাবে দলও উপকৃত হবে।”
আমাদের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিজেপি দলের শ্রী কৌশিক রাই যিনি ত্রিপুরার ধলাই জেলার নির্বাচনী প্রমুখ ছিলেন বলেন “এটি একটি ঐতিহাসিক জয় বিশেষত সি পি এম এর মতো এক সংঘটিত দলের বিরুদ্ধে ।আমার মনে হয় ভারতবর্ষে ভোটের এই swing কোনদিন দেখা যায় নি। গত ২৫ বছর ধরে ত্রিপুরায় কোন উন্নতিই হয়নি। আমি ধলাই জেলার দায়িত্বে ছিলাম এবং ওই জেলার ছয়টার মধ্যে ছয়টাতেই বিজেপি জয়লাভ করেছে।”
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে যে ত্রিপুরায় গতকাল থেকে আজ বেশী হোলি হচ্ছে এবং গৈরিক রঙের আবির দিয়ে । দু-একটি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে ।
Comments are closed.