Also read in

একুশের দেশে শিলচরের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ: উপলক্ষ বিজয় দিবস

তুমি চাওয়া না পাওয়ার ফাকে অসম সমীকরন
তুমি অবুঝ রাগী প্রজন্মের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ,
তুমি তারুণ্যের চোখের কোণে বিষন্নতার বাস,
তুমি বুড়ো খোকাদের ইচ্ছেমত ভুলের ইতিহাস।
তুমি উদ্ধত মিছিলের স্রোতে গর্বিত মুখ
তুমি ভুল নায়কের হাতছানিতে মায়ের শুন্য বুক।
তোমার মাঝেই স্বপ্নের শুরু
তোমার মাঝেই শেষ
তবু ভালো লাগার ভালোবাসা তুমি
আমার বাংলাদেশ।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি রক্তিম স্বর্ণালী দিন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এই দিনে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনার যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী তার প্রায় ৯১ হাজার পাক সেনা নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। রেসকোর্স ময়দানে দলিলে স্বাক্ষর হয়, জন্ম নেয় একটি নূতন স্বাধীন দেশ।বাংলাদেশ। সোনার বাংলাদেশ। এই মহান দিন অর্থাৎ ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর দিনটিকে প্রতিবছর বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের পক্ষ থেকে এ বছর এই মহান দিনটিতে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয় শিলচরের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চকে। সে অনুযায়ী গত ১৫ ডিসেম্বর ২৩ সদস্যের একটি দল করিমগঞ্জের সুতারকান্দি সীমান্ত অতিক্রম করে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে ইকবাল ভাই আশরাফুলের নজরদারিতে শিলচর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের দলটি বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ সিলেট পৌঁছায়। সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী সহ জোটের অন্যান্য সদস্যরা স্বাগত জানান। পরদিন অর্থাৎ ১৬ই ডিসেম্বর সকালে মঞ্চের সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য, সহ-সভাপতি প্রদীপ দাসের নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ, শিলচরের সদস্যরা রেলি করে সিলেট শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপর ছিল সারাদিনব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক জোটের কলাকুশলীদের দ্বারা পরিবেশিত ‘সারেণ্ডার’ ছিল বিশেষ আকর্ষণ। কারণ এতে ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর দিনটির ঘটনা খুব সূক্ষ্মভাবে জোটের শিল্পীরা তুলে ধরেন। শহীদ মিনারের পাশের স্থায়ী মঞ্চে সারাদিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের পালা শেষ হয় অনেক রাতে। তবে বাংলা ভাষার অনুরাগীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো, জানালেন মঞ্চের এক সদস্যা পঞ্চতপা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের শিল্পীরা পরিবেশন করেন একটি আলেখ্য। “বাংলায় বাঁধি প্রাণ” শীর্ষক আলেখ্যটি লিখেছেন মঞ্চের সদস্য হৃষিকেশ চক্রবর্তী। আলেখ্যটি সুষ্ঠু পরিবেশনার হাত ধরে বাংলাদেশের বাঙালিদের মন ছুঁয়ে যেতে সক্ষম হয় বলে জানালেন মঞ্চের সদস্যা পঞ্চতপা। নাচে, গানে, কবিতায়, ভাষ্যে প্রাণবন্ত উপস্থাপনা বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই মন্তব্য করেন।

এছাড়া জোটের পক্ষ থেকে সিলেট ষ্টেশন ক্লাব, যুক্তাক্ষর, আবৃত্তি সংগঠন, জেলা শিল্প অ্যাকাডেমি ইত্যাদির পক্ষ থেকেও মঞ্চের সদস্যদের উত্তরীয় পুষ্পস্তবক ও উপহার দিয়ে সম্বর্ধনা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে শিলচরের তরুণ সাংস্কৃতিক সংগঠক জয়দীপ চক্রবর্তীকেও সম্মাননা প্রদান করা হয়। মঞ্চের জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম লিটন, সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী সহ অন্যান্য সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য,মুক্তিযোদ্ধা সদরউদ্দিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এই মহান দিনে অংশগ্রহণ করতে পেরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সদস্যরা সিলেটের প্রিয়জনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।বাংলাদেশগামী দলে ছিলেন সংগীত শিল্পী পঙ্কজ নাথ, দেবরাজ দাস, সহেলী দত্ত, নবনিতা দাস, নিবেদিতা পুরকায়স্থ, সংযুক্তা দত্ত রায়, দেবরাজ দাস, কবিতা ও ভাষ্যপাঠে বাচিক শিল্পী সুব্রত ভট্টাচার্য, পঞ্চতপা চৌধুরী, শান্তনু সেনগুপ্ত, প্রদীপ দাস, অর্পিতা নাথ, নৃত্যশিল্পী চন্দন মজুমদার, তমাল চক্রবর্তী, চন্দ্রিমা মজুমদার হৃষিকা বিশ্বাস, সান্ত্বনা পাল, রোজি সরকার, জয়িতা সোম, শিশু শিল্পী চিরন্তন মজুমদার ও যন্ত্রশিল্পী সন্দীপ ভট্টাচার্য। জয়দেব চক্রবর্তী বিশ্বজিৎ দত্ত ও সেবায়ন রায় চৌধুরী ছিলেন সার্বিক ব্যবস্থাপনায়।

একুশের দেশে পাড়ি দিয়ে নিঃসন্দেহে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সদস্যরা আপ্লুত।বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তায় এবং সে দেশের মানুষের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময়ে ভালোলাগায় মন ভরে গেছে, জানালেন মঞ্চের সদস্যা।

এভাবেই উনিশের ভাবনা নিয়ে একুশের দেশে এবং একুশের বার্তা নিয়ে উনিশের দেশে পৌঁছনোর অবসরে, সাংস্কৃতিক আদান প্রদান তথা মত বিনিময়ের মাধ্যমে আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকুক একুশ, উনিশ। সর্বোপরি বাংলা ভাষা বাঙালিদের হৃদ মাঝারে বেঁচে থাকুক প্রাণের ভাষা হয়ে।

Comments are closed.