Also read in

ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের বিচক্ষণতায় হারিয়ে যাওয়া ১০ লক্ষ টাকা ফিরে পেলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

‘ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বলছি, আপনার অ্যাকাউন্ট নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড দিন’, অজানা নম্বর থেকে এধরনের ফোন আজকাল প্রায় সকলের মোবাইলেই আসে। কেউ কেউ এধরনের কথায় বিশ্বাস করেন এবং তাদের টাকা হাতিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। তবে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার দরগাকোনা শাখার ম্যানেজার রাজশ্রী ভট্টাচার্যের বিচক্ষণতায় হারিয়ে যাওয়া ১০লক্ষ টাকা ফিরে পেলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নগেন্দ্র পান্ডে। মুম্বাইয়ের একটি দুষ্ট চক্র টাকাটি হাতিয়ে নিয়েছিল বলে জানা গেছে। কাছাড় পুলিশ এবং মুম্বাই পুলিশের যৌথ অপারেশন এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সহায়তায় টাকাটি আবার অধ্যাপকের অ্যাকাউন্টে ফিরে এসেছে।

ঘটনাটি ঘটে ৭ আগস্ট, সকাল সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন অধ্যাপক পান্ডে। হঠাৎ করে তার কাছে ফোন আসে এবং ওপার থেকে এক অত্যন্ত সুন্দর কন্ঠের ভদ্রলোক বলেন, ‘আমি ব্যাংকের ম্যানেজার বলছি, আপনার এটিএম কার্ডটি পুরনো হয়ে গিয়েছে তাই আপনার সমস্ত তথ্য আমাদের আবার দিতে হবে, আমরা আপনার কাছে নতুন কার্ড পাঠিয়ে দেবো। অধ্যাপক প্রথমে বিশ্বাস না করলেও ওই অজানা ব্যক্তিটির কথায় শেষ পর্যন্ত ভুলে যান এবং তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর এটিএম’র পাসওয়ার্ড এবং অনলাইন ব্যাংকিং এর পাসওয়ার্ড দিয়ে বসেন। এখানেই শেষ নয় লোকটি তাকে বুঝিয়ে বলে, আপনার কাছে একটি ওটিপি নাম্বার আসবে সেটাও আপনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে দেবেন। কিছুক্ষণ পর একটি নম্বর আসে এবং তিনি বিশ্বাস করে সেই নম্বরটি দিয়ে দেন। তারপরে মোবাইলে আরেকটা এসএমএস আসে, আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে ৯লক্ষ ৯০হাজার টাকা কাটা হয়েছে। এতে তিনি হতবাক, সঙ্গে সঙ্গে ওই নম্বরে ফোন করলে কোন উত্তর নেই। তিনি শিক্ষিত ব্যক্তি তাই সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে ট্রানজেকশন ব্লক করে দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ব্যাংকের শাখায় উপস্থিত হন। ঘটনাটি ম্যানেজার রাজর্ষি ভট্টাচার্যকে জানালে প্রথমে তিনি বলেন, একজন শিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে কিভাবে ধরনের ফাঁদে পা দিলেন? তবে ষাটোর্ধ অধ্যাপকের চোখ-মুখের অবস্থা দেখে তিনি নিজেও ঘাবড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মুম্বাই ব্রাঞ্চে মেইল পাঠান এবং সেই মেইলটি আরো ১৭-১৮ জায়গায় ফরওয়ার্ড করেন। সারাদিন কাজের ফাঁকে বিভিন্ন জায়গায় কমপ্লেন করা বা মেইল পাঠানোর পরও সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা পর্যন্ত কোনও উত্তর না আশায় ঘাবড়ে যান তিনি। রাতে ঘরে ফিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অর্থমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে এব্যাপারে টুইট করে সাহায্য চান।

এদিকে অধ্যাপক পরের দিন আবার আসেন এবং রাজর্ষি ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। শেষ পর্যন্ত মুম্বাই শাখা থেকে জবাব আসে এবং বিশেষ সূত্রে খবর পাওয়া যায় মুম্বাইয়ের দীপ টেলিকম নামের একটি মোবাইল বিক্রেতা সংস্থা’র অ্যাকাউন্টে টাকাটি গেছে। ‌এরপর কাছাড়ের পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সরাসরি মুম্বাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মুম্বাই পুলিশ তড়িঘড়ি করে মুম্বাইয়ের আন্ধেরি এলাকায় থাকা সেই দোকানে গিয়ে ৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার অর্ডারটি আটকে দেয়। তবে টাকাটি কোন ব্যাংকের মাধ্যমে মোবাইল বিক্রেতা কোম্পানির কাছে গেছে এটা না জানলে টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। স্টেট ব্যাংকের মুম্বাই শাখা রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে এব্যাপারে আবেদন জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রিজার্ভ ব্যাংক বরাক উপত্যকায় যেসব ব্যাংকের শাখা রয়েছে সবগুলোর কাছে খবর পাঠায়। শেষ পর্যন্ত জানা যায় ইয়েস ব্যাংক নামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের একাউন্টের মাধ্যমে ট্রানজেকশনটি হয়েছে। শেষমেষ আরবিআই’র নির্দেশে ব্যাংকটি ওই অ্যাকাউন্টের সমস্ত ডিটেলস বের করে দেয় এবং প্রায় এক সপ্তাহ পর টাকাটি ফিরে আসার কথা জানানো হয়। শনিবার সকালে ব্যাংকে উপস্থিত হওয়ার পর প্রথমেই অধ্যাপক নগেন্দ্র পান্ডের অ্যাকাউন্ট চেক করেন ম্যানেজার রাজর্ষি ভট্টাচার্য। তিনি জানতে পারেন টাকা অ্যাকাউন্টে এসে ঢুকেছে এবং সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপককে ফোন করে জানান।

অধ্যাপক খবরটি পাওয়ার পর অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করেন, কারণ সারা জীবনের জমানো টাকা এভাবে চলে গেলে খুব কষ্ট হয়। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান তিনি। তবে ব্যাংকের উচ্চ স্থানীয় আধিকারিকরা তাকে এখনই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে মানা করেছেন, তাই তিনি আড়ালে থাকেন এদিন। ব্যাংকের তরফে ঘটনাটি নিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ঘটনাটি সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সাংবাদিক সম্মেলনে ম্যানেজার রাজর্ষি ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগ দেন অসীম সেন, আশীষ দে এবং টিটু চক্রবর্তী। তারা বলেন, ওই দিনটিতে শহরের বেশ কয়েকটি মানুষ এভাবে ফেক কলে বিশ্বাস করে টাকা খুইয়েছেন। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা বেশ কয়েকবার হয়েছে।তবে কখনো হারিয়ে যাওয়া টাকা কেউ ফেরত পাননি। এভাবে টাকাটি ফেরত আসা এই উপত্যকায় হয়তো প্রথম। তবে আমাদের এই সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। তারা যেন এ ধরনের ফল পাওয়ার পর নিজের একাউন্টের ডিটেইলস কাউকে দিয়ে না দেন। ব্যাংকের পক্ষ থেকে বারবার করে বলা হয়, কোন ম্যানেজার কাস্টমারকে সরাসরি ফোন করেন না, কোন কাজ থাকলে কাস্টমার নিজে এসে ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করেন। নিজের পাসওয়ার্ড কখনও কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না, এমনকি নিজের পরিবারের মানুষের সঙ্গেও নয়। পাশাপাশি যদি আপনাদের সঙ্গে এধরনের ঘটনা ঘটে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকাউন্ট লক করে ব্রাঞ্চে এসে জানাবেন। অধ্যাপক নগেন্দ্র পান্ডে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাছে আসায় আমরা তার পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। কাছাড় পুলিশ, মুম্বাই পুলিশ, স্টেট ব্যাঙ্কের মুম্বাই শাখা এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া সবার সহযোগিতায় কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা প্রত্যেকেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

Comments are closed.