
প্রাক্তন ব্যাঙ্ক কর্মীর ১৯ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিল সাইবার দুষ্কৃতীরা, প্রশ্নের মুখে ব্যাঙ্ক ও পুলিশের ভূমিকা
সম্ভবত এটাই বরাক উপত্যকার ইতিহাসে সাইবার অপরাধীদের সবথেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা। সাইবার অপরাধীরা একই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে দুইবার টাকা ছিনতাই করে নিয়েছে। প্রাক্তন ব্যাঙ্ক কর্মী দেবাশীষ আদিত্য বর্তমানে বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। ফোন করে তার ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং একাউন্ট পুরোপুরি হ্যাক করে নেয় দুষ্কৃতীরাএবং প্রথমে গত ২৬শে মে ৩ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরিবারের তরফে পুলিশে এজাহার দেওয়া হয় পাশাপাশি ব্যাংকের কাছেও সম্পূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয় এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন রাখা হয়। তারপরেও এক বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে আবার টাকা তুলে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। তবে এবার নেওয়া টাকার পরিমাণ অনেক বেশি, ১৫ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা একাউন্ট থেকে চলে গেছে। সব মিলিয়ে ১৯ লক্ষ ৩ হাজার টাকা হারিয়েছেন দেবাশীষ আদিত্যের পরিবার। এতে তারা একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন।
দেবাশীষ আদিত্যের স্ত্রী সুনন্দা আদিত্য নিজেও একজন ব্যাঙ্ক কর্মী। তিনি বলেন, “সম্প্রতি আমাদের বিএসএনএল নম্বরে অনলাইন পেমেন্ট করা নিয়ে একটা ঝামেলা চলছিল এবং এব্যাপারে খানিকটা অস্বস্তিতে ছিলেন দেবাশীষ আদিত্য। ২৬ মে হঠাৎ করে একটা অজানা ফোন আসে এবং ওপার থেকে এক যুবক বলে বিএসএনএল এর সংযোগ নিয়ে যে ঝামেলা হয়েছে সেটা ঠিক করে দিচ্ছি, তবে তাকে ১১ টাকা অনলাইনে পাঠাতে হবে। আমার স্বামী নিজের একাউন্ট থেকে ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে ১১ টাকা পাঠিয়ে দেন। তিনি অসুস্থ, তাই এব্যাপারে খুব একটা নজর দিতে পারেননি। বিকেলে আমি বাড়ী ফেরার পর স্বামী জানান তার ইন্টারনেট ব্যাংকিং কাজ করছে না। তারপর আমি শিলচর ব্রাঞ্চ থেকে খবর নিয়ে জানতে পারি আমাদের অ্যাকাউন্ট থেকে ৩ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা চলে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে এজাহার দেওয়া হয় ব্যাংকেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন রাখা হয়।” আশ্চর্যজনক ভাবে দুদিন পর হঠাৎ করে আমি আবার দেখতে পেলাম আমাদের স্থায়ী আমানতের অ্যাকাউন্ট থেকে অনেক বড় টাকা এক ভিন্ন পদ্ধতিতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সব মিলিয়ে আমরা প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা হারিয়েছি।”
দ্বিতীয়বার হ্যাকাররা কিভাবে টাকা নিতে পারল এই বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, দেবাশীষ আদিত্যের ইন্টারনেট ব্যাংকিং একাউন্ট দুষ্কৃতীরা আগেই হ্যাক করে নিয়েছিল । তারপর ওই ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফোন নম্বর পাল্টে দেওয়া হয়। তারা নিজেদের নম্বর ব্যবহার করে দেবাশীষ আদিত্যের ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট এর বিরুদ্ধে তিনটি ওভারড্রাফট অ্যাকাউন্ট বানিয়ে নেন এবং অভার ড্রাফ্ট একাউন্ট থেকে অনেক গুলো ট্রান্সফার করতে সমর্থ হয়, টাকার অংকে যা ১৫,৭৯,০০১.০০।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি একাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে, এরমধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অসমে থাকা ব্রাঞ্চ ও রয়েছে। প্রথম ঘটনার পর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এরপরেও এমন ঘটনা ঘটায় পুলিশের ভূমিকার উপর প্রশ্ন উঠছে। পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন তারা পুরো ঘটনা যাচাই করে দেখবেন।
জানা গেছে, প্রথম ঘটনার পর সদর থানায় এজাহার দিয়ে সেই কপি সহ মেন ব্রাঞ্চে টাকা পুনরুদ্ধারের ধরার জন্য আবেদন করেছিলেন আদিত্যরা। যখন অনলাইন ট্রানজেকশনের মাধ্যমে একটা একাউন্ট থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই হলো, ব্যাংকের তরফে সেই ইন্টারনেট ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ করা হয়নি কেন? এমনকি তিনটি ওভারড্রাফট অ্যাকাউন্ট বানিয়ে আবার ১৫ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা নেওয়ার সুযোগ পেল হ্যাকাররা। এতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হলেন স্কেল-২ স্তরে কাজ করা ওই ব্যাংকেরই একজন প্রাক্তন অফিসার ।
প্রায় তিন দিন ধরে অ্যাকাউন্ট থেকে একের পর এক ট্রানজেকশন করেছে হ্যাকাররা, অথচ পুলিশের কাছে এজাহার দেওয়ার পরেও এই বিষয়গুলো নিয়ে কোনো সতর্কতা দেখানো হলো না! এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি কাছাড় জেলায় যোগ দিয়েছেন নতুন পুলিশসুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশসুপার। সাইবার ব্রাঞ্চ সরাসরি পুলিশ সুপারের আওতায় থাকে। এই হাইটেক যুগে তাহলে কি কাছাড় পুলিশ এতটাই পিছিয়ে রয়েছে যে তারা সামান্য হ্যাকারদের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছে? না এটা বিভাগের উদাসীনতার ফল? এই প্রশ্নগুলো জনমনে উঠতে শুরু করেছে।
Comments are closed.