Also read in

সেবার মাধ্যমিকের ফলাফল: বরাক উপত্যকায় শীর্ষে শাশ্বত কংস বণিক ও শ্যামলী নাথ

 

সেবা গতকাল স্কুল মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেছে। বরাক উপত্যকার কোন শিক্ষার্থী মেধাতালিকায় স্থান পায়নি বলে স্বভাবতই বরাক উপত্যকার বাতাসে হতাশার সুর ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে সেই হতাশার মধ্যেও যাদের সাফল্যে কিছুটা হলেও আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ফলাফলের চিত্রটা, তারা অবশ্যই প্রশংসার পাত্র,তাদের সাফল্যের স্বীকৃতি আবশ্যক।

মেধা তালিকায় স্থান পায়নি বলে বরাকবাসীর মতই হতাশ হয়েছে রামানুজ বিদ্যামন্দিরের ছাত্র শাশ্বত কংস বণিক নিজেও। মাত্র চার নম্বরের জন্য শাশ্বতকে মেধাতালিকা থেকে ছিটকে যেতে হয়। গোবিন্দ ও মহুয়া কংস বণিকের ছেলে শাশ্বত ৬০০’র মধ্যে ৫৭৯ নম্বর পেয়ে বরাক উপত্যকায় শীর্ষস্থানটি দখল করেছে।

তার কন্ঠে স্পষ্টতই হতাশার সুর ছিল, ” হ্যাঁ, আমি একটু হতাশ হয়েছি যে অল্পের জন্য মেধাতালিকায় স্থান পাইনি, মাত্র চার নম্বরের জন্য মিস করেছি।”

পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে অনেক পরিশ্রম করেছে শাশ্বত। পরীক্ষার আগে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করত। জানালো, “স্কুল শেষ হওয়ার পর আমি কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করলাম। আগে যদিও প্রতিদিন দু তিন ঘণ্টাই অধ্যয়ন করতাম।” পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে তার কাছ থেকে আরও জানা গেল,” বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমি প্রথমে পাঠ্যপুস্তকগুলি ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছি। আর পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র দেড়মাস আগে থেকে আমি এক্সারসাইজ করতে শুরু করি।”

যদি কোনও ছাত্র দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অধ্যয়ন করে তবে ৯০ অব্দি স্কোর করার সম্ভাবনা থাকে বলে শাশ্বত বিশ্বাস করে।এক প্রশ্নের উত্তরে বলল,” আমি লক্ষ্য করেছি যে বেশিরভাগ প্রশ্নাবলী পাঠ্যপুস্তক থেকেই আসে। তাই পাঠ্যপুস্তক খুব ভালোভাবে অধ্যয়ন করলে পরীক্ষায় ৯০ পাওয়া অবশ্যই সম্ভব। এমনকি সাধারণ গণিত কিংবা ঐচ্ছিক গণিতেও।তবে নব্বুইকে ৯৫ এ নিয়ে যেতে কিংবা ততোধিক পেতে এর বাইরেও আরো কিছু পড়াশোনার প্রয়োজন। কারণ কিছু ‘ট্রিকি’ কোশ্চনতো থাকবেই।”

এই সাফল্যে নিজের পরিশ্রমের সঙ্গে সঙ্গে শাশ্বত কৃতিত্ব দিতে চায় তার মাকে। স্বতঃস্ফূর্ত কন্ঠে বলল,” এই সাফল্যে মায়ের অবদান অনেক। ছোটবেলায় মার কাছে পড়েছি। তখন অঙ্কতে খুব দুর্বল ছিলাম। কিন্তু মা তার জন্য আমার নিচে অনেক পরিশ্রম করেছেন। তারপরই আমার এই বিষয়ের উপর উৎসাহ বাড়ে।”

শাশ্বত সাধারণ ও ঐচ্ছিক গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান এবং হিন্দির জন্য প্রাইভেট টিউটর রেখেছিল। সেই শিক্ষকদেরও অবদান রয়েছে তার এই সাফল্যের পেছনে। জানাল শাশ্বত।

শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপারে শাশ্বত নিজের ইচ্ছের কথা জানাতে গিয়ে বলল, “এত বছর ধরে আমাদের শুধু বই থেকেই পড়ানো হচ্ছে। থিওরির সঙ্গে সঙ্গে প্র্যাকটিক্যালটা যদি আরো বেশি হতো তাহলে বোধ হয় ভালো হতো। কিংবা কোন একটা ভিডিওর মাধ্যমে বিষয়টা বোঝানো হতো তাহলে বোধহয় আরো বেশি মনোগ্রাহী হত।”

শাশ্বত ইতিমধ্যেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সে রামানুজ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পড়তে চায়। ভবিষ্যতে একজন সফল প্রকৌশলী হতে চায়।

এই মুহূর্তে বরাক উপত্যকার অন্য একটি সাফল্যের নাম শ্যামলী নাথ। কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রী। শ্যামলী পেয়েছে ৬০০ মধ্যে ৫৭৭। মেধাতালিকা থেকে ৬ নম্বর দূরে।

মেধাতালিকায় স্থান না পেলেও তেমন দুঃখ নেই শ্যামলীর। স্পষ্টতই ওর গলার স্বরে মাধ্যমিকের ফলাফল নিয়ে মনের খুশি উপছে পড়ছিল। স্পষ্ট ভাবে জানালো, “মেধা তালিকায় স্থান পাইনি বলে অল্প দুঃখ হয়েছে। তবে সেটা তেমন কিছু না। কারণ মাধ্যমিক পরীক্ষার এই ফলাফলে আমার পরিবারের সবাই খুশি। আমার কাছে পরিবারের খুশিটা সবচাইতে বেশি মানে রাখে।”

অল্পের জন্য মাধ্যমিকে মেধাতালিকায় স্থান না পাওয়া কলেজিয়েট স্কুলের প্রথম স্থানাধিকারিনী স্বতঃস্ফূর্তভাবে জানালো, “এটা আসলে পুরোপুরি আমার কৃতিত্ব নয়। এই সাফল্যের পেছনে আমার চাইতেও বেশি রয়েছেন আমার মা, বাবা, ঠাকুমা, কাকু -আমার পরিবারের সবাই। ওরা হয়তোবা আমার চাইতেও বেশি করেছেন। তাছাড়া রয়েছে আমার শিক্ষকদের অবদান। আমি বিশেষ করে আমার শিক্ষক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ দত্ত, রুপরাজ ভট্টাচার্য ও সায়ন্তনী ভট্টাচার্যের প্রতি কৃতজ্ঞ।”

শ্যামলীর এই সাফল্যের পেছনে কতটা শ্রম কাজ করেছে? দিনে কত ঘন্টা পড়াশোনা করত শ্যামলী? সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বসিত উত্তর, “ আমি মোটেই বেশি পড়াশোনা করিনি। দিনে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা- ব্যস।”
“তাহলে কি বলতে হয় ৬ থেকে ৭ ঘন্টা যথেষ্ট বোর্ড পরীক্ষা দেওয়ার জন্য?”
“আসলে আমার ক্ষেত্রে এটা হয়েছে, কারণ আমি বিশ্বাস করি, মনোযোগ সহকারে পড়লে এতোটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু অন্যরা হয়তো আরো বেশিও পড়তে পারে।এটা সম্পূর্ণ নিজের উপর নির্ভর করে।”

উমা শংকর নাথ ও রুমা নাথ চৌধুরীর কন্যা শ্যামলী নাথ মোটেই মনে করছে না, বরাক উপত্যকার মাধ্যমিকের এ বছরের তুলনায় খারাপ ফলাফলের জন্য শিক্ষকরা দায়ী। স্পষ্ট গলায় শ্যামলী বলল, ” আমাদের শিক্ষকরা মোটেই এর জন্য দায়ী নয় বরং উনারা যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়ে এবং আন্তরিকভাবে শিক্ষকতা করেন।”

শ্যামলী ইতিমধ্যেই বিবেকানন্দ স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে পড়বে বলে স্থির করেছে। শ্যামলীর স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। সেই স্বপ্ন সাকার করতে সে একই সঙ্গে আকাশেও নিজের নাম নথিভুক্ত করেছে, মেডিক্যালের এন্ট্রান্সে বসার জন্য।

শাশ্বত এবং শ্যামলীকে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করার জন্য বরাক বুলেটিনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন এবং আগামী দিনের সাফল্যের জন্য অফুরন্ত শুভেচ্ছা রইল।

Comments are closed.