Also read in

শিলচরে নাগরিকত্ব বিলের সমর্থনে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সভা : আত্মপ্রকাশ করল বরাক উপত্যকা ভিত্তিক বহুভাষিক মঞ্চ

খিলঞ্জীয়া মঞ্চকে সামনে রেখে নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগে সোনাবাড়িঘাটে যে জনমত সংগঠনের প্রয়াস হয়েছিল তার বিপরীতে শিলচরের এক হোটেলে গতকাল এক নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হলো । এই নাগরিক সভার অন্যতম আহ্বায়ক অধিবক্তা পরিষদের কেন্দ্রীয় স্তরের নেতা শান্তনু নায়েক জানান যে একটি ন্যস্ত স্বার্থ মহল পরিকল্পিতভাবে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে যাচ্ছিল, স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে একটা ভুল বার্তা জনমনে প্রচার হচ্ছিল। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করাটা খুবই দরকারী ছিল। শান্তনু নায়ক আরও জানান “নাগরিকত্ব বিল বাস্তবায়নের জন্য এখন বরাক উপত্যকার সব জাতি-গোষ্ঠীর সমর্থন প্রয়োজন এবং এই সমর্থন আদায়ের জন্যই এই সভা । নাগরিক সভায় বরাকের সব ভাষাগোষ্ঠীর ও হিন্দু খ্রিস্টান নাগরিকদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাওয়া গেছে, সবাই এই বিলের বাস্তবায়ন চান। অসমিয়াদের সমর্থনও জরুরি, তাই সংগঠনে অসমিয়ারাও আসবেন আগামী দিনে।”

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬ কে আইনে রূপান্তরিত করতে জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য এই সভায় সর্বসম্মতিতে কোঅর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইনজীবি ধর্মানন্দ দেব এবং শান্তনু নায়েক জানান যে এই নতুন কমিটির নাম হচ্ছে নর্থ ইস্ট লিঙ্গুয়াস্টিক অ্যান্ড এথনিক কো অর্ডিনেশন কমিটি । সভাপতি করা হয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের চার্লস রংমাইকে। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন কঙ্কনময় শিকদার।

গতকালের এই নাগরিক সভায় পৌরোহিত্য করেন বিভাস দেব। বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কবি সাংবাদিক অতিন দাশ, মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শংকর ভট্টাচার্য, আইনজীবী অনিল চন্দ্র দে, গুরুচরণ কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ পার্থসারথী চন্দ, শ্যামল সিংহ, স্বপন সিনহা, বিশ্বজিৎ দাস, মহাবীর প্রসাদ, মহাবীর জৈন, মিলন দাস, ধীরাজ বর্মন প্রমুখ। নাগরিকসভায় ভারত সেবাশ্রম সংঘের মহারাজ সাধনানন্দজি মহারাজও বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান সমাজ যখন সংকটে তখন সন্ন্যাসীদেরও দায়িত্ব বেড়ে যায়; হিন্দু জাতির দুর্ভাগ্য, হিন্দুরাই এখন নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করছেন। তিনি বলেন এই সম্পর্কে বুঝিয়ে বলার জন্য অসমিয়া, খাসিয়া, নাগা, ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছে যেতে হবে।আমাকে আপনারা পাশে পাবেন, সবাইকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। অতিন দাস জানান অসমিয়া জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন হচ্ছে তার কোন ভিত্তি নেই, রাজনৈতিক স্বার্থে এই আন্দোলন, নেতা হওয়ার লক্ষ্যে আন্দোলন। বামপন্থীরা দেশভাগের সময় পাকিস্তানের পক্ষে আওয়াজ তুলেছিলেন, এরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বলেন, কিন্তু দেশভাগের শিকার হিন্দু বাঙ্গালীদের কথা বামপন্থীরা বলেন না, এটা এদের দস্তুর । তিনি নাগরিকত্ব নিয়ে আরও বলেন, দেশভাগের সময় জাতীয় নেতাদের কথায় বিমোহিত হয়েছিলেন বাঙালি নেতৃবৃন্দ। সংবিধানে
দেশভাগের বলি উদ্বাস্তুদের কথা উল্লেখ নেই, এটাই সেদিনের বাঙালি নেতৃত্বে বড় ভুল হয়েছিল। অধিবক্তা পরিষদের নেতা ধর্মানন্দ দেব বলেন, এই সংবিধান সংশোধনী বিলে সংবিধানের right to equality অর্থাৎ সাম্যের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অপপ্রচারকারীরা মানুষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে। ধর্মানন্দ বাবু আরো বলেন, এটি সর্বৈব মিথ্যা কারণ ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হয়েছে, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে আর এই বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়েই ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ধর্মের ভিত্তিতেই গেজেট নোটিফিকেশন জারি করা হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এই বিজ্ঞপ্তির বলেই বলীয়ান হয়েছে।

নাগরিক সভায় বক্তাদের কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের বিদ্বেষভাব নেই, কোন বৈরিতাও নেই। তবে নাগরিকত্বের দাবি নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয়। এর জন্য প্রয়োজনে সবকিছু করতে হবে কারণ কঠোর আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।
গতকালের এই নাগরিক সভায় ১৬১ সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন বলে সংগঠকরা দাবি করেছেন। তারা এও দাবি করেন যে নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে নিয়ে নাগরিক সভা এই প্রথম অনুষ্ঠিত হলো এবং তা যথেষ্ট সফল।

Comments are closed.