"এক মঞ্চে কোহলির সাথে দাঁড়ানো এক বিশাল প্রাপ্তি, আমার স্বপ্ন হলো ওর সাথে মাঠে দাঁড়ানোর" বিসিসিআই'র বর্ষসেরা ক্রিকেটার রাহুল সিং ।
“তুমি তোমার স্বপ্নকে কখনো পরিত্যাগ করোনা, কারণ স্বপ্ন একদিন সত্যি হবেই” সচিনের সেই বিখ্যাত উক্তি বরাক উপত্যকার এক জনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । ভারতের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বি সি সি আই) এর বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ‘নমন’য়ে দেখা যাবে রাহুল সিংকে অনূর্ধ ১৯ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার জন্য এম এ চিদাম্বরম পুরস্কার গ্রহণ করতে।
শিলচরের ইটখলায় বেড়ে উঠা এই বাঁহাতি স্পিন বোলার কোচবিহারে অনুষ্ঠিত আন্ত:রাজ্য ট্রফিতে আটটি ম্যাচ থেকে সর্বমোট ৫৪ টি উইকেট তুলে নিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে বোলারটি বড়দের ক্রিকেটেও স্থান করে নিল। এই একই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিরাট কোহলি টেস্ট ক্রিকেটে ২০১৬-১৭ সালে তার অনবদ্য অবদানের জন্য চতুর্থবারের জন্য পলি উমরিগড় ট্রফি গ্রহণ করবেন।
বরাক বুলেটিন ( Barakbulletin.com ) রাহুলের সাথে যোগাযোগ করলে সে তার সাফল্য এবং ভবিষ্যত পরকল্পনা নিয়ে আমাদেরকে জানায় :
(সাক্ষাৎকারের সম্পাদিত অংশ এখানে তুলে ধরা হল)
তুমি তো বিসিসিআই এর পুরস্কার পেতে চলেছ, তা এই সময়টাতে তোমার অনুভূতি টা কেমন ?
খুবই আনন্দ হচ্ছে, মনে হচ্ছে আমার এতো দিনের পরিশ্রম কাজে লাগছে এবং আমি এখন স্বীকৃতি পেতে চলেছি। এটা একটা বিরাট প্রাপ্তি এবং এটা আমাকে অনুপ্রেরণা দেবে আরো পরিশ্রম করে খেলার মান উন্নত করতে।
তুমি কখন এই ক্রিকেট খেলা শুরু করলে এবং এই খেলায় তুমি কি করে আসলে ?
আন্তঃস্কুল টুর্নামেন্ট বৈদ্যনাথ ট্রফি দিয়ে আমার ক্রিকেট জীবন শুরু। ঠিক ১৪ বৎসর বয়সে আমি তখন আমার স্কুলের হয়ে খেলছিলাম, তখন আমি এক পেস বোলার। কিন্তু পেস বোলার হিসেবে প্রথম খেলায় ব্যার্থতার পর আমার কোচ সত্যজিৎ স্যার আমাকে স্পিন করতে বললেন। এবং ঠিক এর পরেই আমার খেলায় একটা পরিবর্তন এসে গেলো, আমি উইকেট পেতে শুরু করলাম, রানও কম দিলাম। এই টুর্নামেন্টের পরেই আমার বোন আমাকে শিলচর জিলা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালিত ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তে ভর্তি করে দিল ; তখন থেকেই আমার পেশাগত প্রশিক্ষণ শুরু।
পেশাগত প্রশিক্ষণ সম্বন্ধে তোমার প্রাথমিক অভিজ্ঞতা কেমন ?
শিলচর ডিএসএ’তে আমাদের ব্যাচকে প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দেন প্রাক্তন ক্রিকেটার বিশাল তিওয়ারি। বিশাল ভাই আমাকে বল করার অনেকগুলো কৌশল শিখিয়েছিলেন যা এখনো আমার কাজে আসছে। আমি যত বেশি মাঠে থাকতাম, ততোই আমার ক্রিকেট খেলার ঝোঁক বাড়তে লাগল।
পেশাদারী ক্রিকেট ম্যাচে খেলা কখন শুরু করলে ?
কিছুদিন প্রশিক্ষণের পরে আমি টাউন বয়েজ ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগীয় লিগ খেললাম, আমার খেলা বেশ ভালো হয়েছিল। পরের বছরই আমি ইটখলা ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগীয় লিগ খেললাম। সেখান থেকে আমি অনূর্ধ্ব উনিশ আন্তঃজেলা ক্রিকেটে কাছাড় জেলা দলের হয়ে খেলে চারটি ম্যাচে ৩৩টি উইকেট পেলাম। এবং এই খেলার দৌলতেই আমি রাজ্য অনূর্ধ্ব উনিশ দলে স্থান করে নিলাম।
তুমি রাজ্য ক্রিকেট দলে স্থান করে নিলে এবং ফিরোজ শাহ কোটলা মাঠে দিল্লির বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেললে, রঞ্জি ট্রফিতে তোমার সেই প্রথম খেলাটি কেমন হয়েছিল?
যেহেতু সেটা ছিল আমার প্রথম শ্রেণীর প্রথম ম্যাচ, তাই গোড়া থেকেই আমি একটু নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। আমার বিরুদ্ধে যারা খেলছিল তারা ছিল অনেক অভিজ্ঞ। গৌতম গম্ভীর দিল্লির হয়ে খেলছিল এবং একটা সেঞ্চুরিও করেছিল, উন্মুক্ত চান্দ ছিল, ছিল নীতিশ রানা। রানাও একটা সেঞ্চুরি করেছিল আমাদের বিরুদ্ধে। এটা আমার জন্য একটা আদর্শ শুরু ছিল না, তবে আমি এই খেলা থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নিলাম এবং আমার মধ্যে একটা আস্থা আসলো যে আমি সিনিয়র লেভেলেও নিজের পারফরম্যান্স দিতে পারব। ওই ম্যাচে আমি একটা উইকেট পেয়েছিলাম এবং আমার যতদূর মনে পড়ছে ওই উইকেটটা ছিল ইশান্ত শর্মার।
এই খেলার পরেই তোমাকে বাদ পড়তে হয়েছিল এবং গোহাটিতে হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে তুমি আবার ফিরে এসেছিলে
অনূর্ধ্ব ১৯ এ খেলায় ভুল ত্রুটি থাকলেও সেটা পুষিয়ে যায় কিন্তু রঞ্জি ট্রফি লেভেলে একটা বল খারাপ করলেই শাস্তি পেতে হয়। আমি আগেই বলেছি যে রঞ্জি ট্রফিতে দিল্লির বিরুদ্ধে সেই ম্যাচটি আমাকে অভিজ্ঞতা জুগিয়েছে । আমি বাদ পড়ার পরই অনুর্ধ্ব ২৩ এ যোগদান করে বেশ ভালো খেলি। কোচ লালচান্দ রাজপুত স্যার এবং কর্তৃপক্ষ আমাকে আবার দলে জায়গা করে দেন এবং আমাকে একটা দ্বিতীয় সুযোগ দেন। আমি ভালো করতে চাইছিলাম কারণ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল। আমি তিনটি উইকেট নিয়েছিলাম এবং এর মধ্যে একটা ছিল হায়দ্রাবাদের অধিনায়ক আম্বাতি রাইডুর উইকেট। সেখান থেকে আমি পুনে যাই এবং মহারাষ্ট্র দলের বিরুদ্ধে খেলি , সেই খেলায় আমি একটা ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েছিলাম। রঞ্জি ট্রফিতে সর্বোপরি আমার খেলা মোটামুটি ভালোই হয়েছিল। এই বৎসরও আমি নিয়মিতভাবে ভালো করার চেষ্টা করেছি।
Rahul Singh at the Kolkata airport (Source: Rahul’s Facebook page)আচ্ছা বরাক উপত্যকার ক্রিকেট খেলার পরিকাঠামো সম্পর্কে তোমার মতামত কি ?
শিলচরে এখন কোচিং এর বেশ ভালো সুবিধা আছে এবং ফলে আজ যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তারা নিবেদিত প্রাণ হয়েই চেষ্টা করছে। এখন শিলচর থেকে চারজন খেলোয়ার রঞ্জি ট্রফি খেলছে আসাম দলের হয়ে। তারা হচ্ছে রাজদীপ ভাইয়া (দাস), প্রীতম ভাইয়া (দাস), অভিষেক ঠাকুরিয়া এবং আমি । আগে একজন বা দু’জনই শিলচর থেকে রাজ্য দলের হয়ে রঞ্জি ট্রফি বা এই ধরনের উচ্চতর খেলায় সুযোগ পেত।
তুমি কতক্ষণ প্র্যাকটিস করো প্রতিদিন?
আমি রোজ সকালে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা অনুশীলন করি। বিকেলে আমি নেটে বোলিং প্র্যাকটিস করি। আমি শিলচরে থাকলে শিলচর ডিএসএ’তে এবং গৌহাটিতে থাকলে পার্শবারা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস করে থাকি। আমি ফিটনেস বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করি , সাথে ফিল্ডিং এবং সর্বোপরি সবকিছুতেই ভালো করার চেষ্টা করছি ।
ভারতের কোন ক্রিকেটার কে তুমি তোমার আদর্শ ক্রিকেটার হিসেবে মনে করো ?
আমি সবসময়ই রবীন্দ্র জাদেজাকে অনুসরণ করে থাকি, ও হচ্ছে আমার রোল মডেল। আমি মাঠে ওর এটিচুড সবসময়ই অনুসরণ করার চেষ্টা করি; মাঠে ও কিভাবে দ্রুত ফিল্ডিং করে- ওর বোলিংয়ের স্টাইল -ব্যাটিংয়ের স্টাইল সবকিছুই আমি অনুসরণ করি এবং এটা আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়।
তুমি একটা পুরস্কার পেতে চলেছ এবং এতে অধিনায়ক বিরাট কোহলিও পুরস্কার নেবে, তোমার মনে কি চলছে ?
বিরাট কোহলি সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার এবং ভারতীয় দলের অধিনায়ক। আমি খুবই উত্তেজিত বোধ করছি কারণ আমি ওর সাথে একই রুমে থাকবো, একই স্টেজে উঠে পুরস্কারও গ্রহণ করব । কিন্তু আমার স্বপ্ন হচ্ছে মাঠেও একসাথে ওর পাশে দাঁড়িয়ে খেলা। আমি আমার যতটুকু সাধ্য আছে সেই অনুযায়ী চেষ্টা করে যাবো এবং আমি আশা করছি একদিন আমার এই স্বপ্ন সফল হবে ।
Comments are closed.