আইপিএলের অভিজ্ঞতা আমার ক্যারিয়ারে এক বিশেষ জায়গা জুড়ে থাকবে। এমনটাই জানালেন রাজস্থান রয়্যালসের নেট বোলার রাহুল সিং। দু’দিন আগেই ইউ এ ই থেকে বাড়ি ফিরেছেন শিলচরের ছেলে রাহুল। দীর্ঘ আড়াই মাস ছিলেন ইউ এ ই তে। তাই এবার ইটখলার বাড়িতে ফিরতে পেরে খুশি রাজ্য দলের তারকা স্পিনার। তবে তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে, বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি লিগের সঙ্গে যুক্ত হতে পারাটাই রাহুলের কাছে সবচেয়ে বড় খুশি। তিনি মনে করেন, এই অভিজ্ঞতা তাকে আগামী দিনে আরো ভালো পারফরম্যান্স করতে সাহায্য করবে।
আইপিএলের মত একটা টুর্ণামেন্টে সুযোগ পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। খুব কমই এমন সুযোগ পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে আসামের মত একটা রাজ্য থেকে শীর্ষস্তরের সুযোগ পাওয়া বিরাট ব্যাপার। যদিও এবার রাজ্যের মোট চারজন ক্রিকেটার আইপিএলে সুযোগ পেয়েছিলেন। এরা সবাই কিন্তু রাজস্থান রয়্যালসের সদস্য ছিলেন। এরমধ্যে রিয়ান পরাগ তো রাজস্থানের জার্সি গায়ে সাত ম্যাচে খেলেছেন। দুটি ম্যাচে তো ম্যাচ উইনিং নকও খেলেছিলেন। রাহুল ছাড়াও রাজস্থানের সঙ্গে নেট বোলার হিসেবে ইউ এ ই তে ছিলেন অসমের জিতু মনি কলিতা ও মিন্ময় দত্ত। আইপিএলে রাজস্থান দল প্লে-অফের আগেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলেও রাহুল কিন্তু জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরেছেন।
গত ১৭ আগস্ট শিলচর থেকে রওনা দিয়েছিলেন রাহুল। তারপর ২০ আগস্ট মুম্বাই থেকে দুবাইয়ের বিমানে চড়েন। দুপুরের দিকে দুবাইয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন বাঁহাতি তারকা। সেখানে পৌঁছার পর সাত দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়েছিল রাহুলকে। দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থাকলেও রাহুল কিন্ত ঘরে থাকাকালীন নিয়মিত ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করেছিলেন। বিকেলে রোজ ওয়ার্কআউট করতেন। এছাড়া বোলিংয়ের ছন্দ ধরে রাখতে পাড়ার গলিতেই টেনিস বল দিয়ে বোলিং করতেন। এটা খুব কাজে এসেছে। যার জন্য দুবাইয়ে পৌঁছে সাতদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও দ্রুত মানিয়ে নিতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকলেও আমি কিন্তু নিয়মিত ফিজিক্যাল করতাম। বিকেলে ওয়ার্কআউট করতাম। আর বোলিংয়ে ছন্দটা ধরে রাখার জন্য টেনিস বল দিয়ে হাত ঘোরাতাম। এর ফলে মানসিক ও শারীরিক দুটো দিক থেকেই আমি প্রস্তুত ছিলাম।’
রাজ্য দলের তারকা জানান, আড়াই মাস একসঙ্গে থাকায় রাজস্থান দল একটা পরিবারের মত হয়ে গিয়েছিল। সেই পরিবারের অন্যতম সদস্য হিসেবে গর্বিত রাহুল। সাধারণত নেট বোলারদের বিশেষ নির্দেশ দিয়ে থাকে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে রাহুল জানান, রাজস্থান টিম ম্যানেজমেন্ট এর পক্ষ থেকে তাকে কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বরং পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘নেট সেশন এর প্রথম দিন প্রত্যেক নেট বোলার এর হাতে নতুন বল তুলে দিয়েছিলো টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। নেট বোলার হলেও আমায় পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। তাই অনেক খোলা মনে বোলিং করতে পেরেছি।’
স্টিভ স্মিথ, জস বাটলার, বেন স্টোকস এবং জোফরা আর্চার এর মত সুপারস্টারদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নেওয়া অনেকের কাছেই এক স্বপ্ন। তবে রাহুলের জন্য এটাই বাস্তব। বাঁহাতি তারকা বলেন,’এর অনুভূতি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমার কাছে কোনো শব্দ নেই।’ রাহুল আরো জানান, রাজস্থানের কোচিং স্টাফ সহ সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকেও অনেক সাহায্য পেয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ সব টিপস পেয়েছেন। দলের স্পিন বোলিং কোচ প্রাক্তন ভারতীয় লেগ স্পিনার সাইরাজ বাহুতুলেও নেট সেশনে তাকে বোলিংয়ের নানা পরামর্শ দিয়েছেন।
আইপিএলের একাধিক ম্যাচে দুবাইয়ের স্টেডিয়ামে বসে দলের জন্য গলাও ফাটিয়েছেন রাহুল-জিতু মনিরা। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে তো হারা ম্যাচ জিতেছিল রাজস্থান। সেই ম্যাচে অবিশ্বাস্য বেটিং করেছিলেন রাহুল তেওয়াতিয়া ও রিয়ান। সেদিন গ্যালারি থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন রাহুলরা। কোণঠাসা অবস্থাতেও রিয়ান ও তেওয়াতিয়াকে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন তারা। যা রিয়ান দের জন্য টনিকের কাজ করে। ম্যাচ শেষে সেটা স্বীকার করে নিয়েছিলেন অসমের আরেক সন্তান রিয়ান। সে অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রাহুল বলেন, ‘সেটা ছিল অন্যতম সেরা মুহূর্ত। রিয়ান ও রাহুল ভাই অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করেছিল। আর আমরা গ্যালারিতে বসে ওদের জন্য টানা চিৎকার করে গিয়েছিলাম। অবশেষে সেটাই কাজ দেয়। আসলে ফাঁকা মাঠে গ্যালারি থেকে এমন উৎসাহ পেয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল রিয়ানদের। সে ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা।’
সত্যি, স্বপ্নও সত্যি হয়। রাহুলই এটা প্রমাণ করেছেন।
Comments are closed.