Also read in

ডি এস এর মসনদ দখলের লড়াইয়ে ব্রাত্য ক্রীড়াবিদরাই!শিলচর স্পোর্টসের জন্য এক অশনি সংকেত

 তিনদিন আগে ভোটার তালিকা প্রকাশ হবার পর বিজিএম নিয়ে রাজনীতি জমে উঠেছে। কারণ এবারের বিজিএমে শাসক ও বিরোধী পক্ষের বড় থেকে ছোট, সব নেতা কর্মকর্তারা জেনারেল কাউন্সিল মেম্বার হয়ে এসেছেন। কাজেই রাজনীতি হওয়াটাই স্বাভাবিক। স্কুল কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো বটেই, এ ক্যাটাগরির ক্লাবগুলি থেকেও শাসক গোষ্ঠীর লোক এসেছেন। ‌ ভোটার তালিকা থেকেই স্পষ্ট ডিএসএর মসনদ দখল করার জন্য একেবারে ছক কষেই মাঠে নেমেছে শাসকগোষ্ঠী।

শিলচরের সাংসদ ও বিধায়ক, লক্ষ্মীপুর ও উধারবন্দের বিধায়ক ছাড়াও প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক আমিনুল হক লস্কর, কাছাড় জেলা বিজেপি সভাপতি বিমলেন্দু রায়, প্রাক্তন সভাপতি উদয় শংকর গোস্বামীও এসেছেন জেনারেল কাউন্সিল মেম্বার হিসেবে। এছাড়াও রয়েছেন শিলচর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান মনজুল দেব সহ বিজেপির তিন সাধারণ সম্পাদক কনাদ পুরকায়স্থ, গোপাল রায় এবং অভ্রজিত চক্রবর্তী। রয়েছেন কোষাধ্যক্ষ গোলাপ রায় ও। এছাড়াও প্রবাল পাল চৌধুরী, মিঠুন রায়, বাসুদেব শর্মা, কাজল রায় এবং শান্তনু রায় এর মত বিজেপির কর্মীরাও তালিকায় রয়েছেন। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই বিরোধী শিবির ও। কাজেই একদিকে যখন শাসক ও বিরোধী গোষ্ঠীর রাজনীতিবিদরা শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থায় এসেছেন তখন বাদ পড়ছেন মাঠে ময়দানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রকৃত ক্রীড়াবিদরা।
ভোটার তালিকায় বর্তমানের ক্রীড়াবিদদের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। ডিএসএ তে সদস্য পাঠানোর ইস্যুতে ইতিমধ্যেই একাধিক ক্লাবের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক সব অভিযোগ উঠেছে। একাধিক ক্লাবের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে ক্লাবের সদস্যপদ বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে অধিকাংশ ক্লাবে ঝামেলা চলছে। যাদের নাম বাদ পড়েছে, তারা প্রকাশ্যেই ক্লাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গলা ফাটাচ্ছেন। শোনা যাচ্ছে যাদের নাম বাদ পড়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের প্রিয় ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথাও ভাবছেন। অনেকে আবার দেখে নেবার হুমকিও দিচ্ছেন। শিলচরের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য খারাপ খবর হচ্ছে শুধু ছোট ক্লাব গুলি নয়, এ ক্যাটাগরির একাধিক ক্লাবও নিজেদের প্রকৃত সদস্যদের ডিএসএ তে পাঠায়নি। কোনো ক্লাব অর্থের বিনিময়ে সদস্য পাঠিয়েছে। তো কোনো ক্লাব শাসক গোষ্ঠীর প্রভাবে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থায় সদস্য পাঠিয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনের।
আগামীতে এই জেনারেল কাউন্সিল মেম্বাররাই কিন্তু শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন সভা সমিতি অংশ নেবেন। বৈঠকে অংশ নেবেন। প্রশ্নটা হচ্ছে, যারা শুধু ভোটের বৈতরণী পার করার জন্য ডিএসএ তে গেছেন তারা খেলাধুলার উন্নতিতে কতটা কাজ করবেন? সময়ই বা কতটা দেবেন? কারণ অতীতেও দেখা গেছে শিলচরে বিসিসিআই অথবা এসি এর কোনো টুর্ণামেন্ট অথবা ম্যাচ হলে জনাকয়েক কর্মকর্তাই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ভোটার সংখ্যা ২২৭। অথচ তিন চারজনের কথা ছেড়ে দিলে বাকিদের কোনো ইভেন্টই দেখা যায় না। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই তিন চার জন কর্মকর্তাই সবকিছু সামলান। এই হচ্ছে শিলচরের ক্রীড়াঙ্গনের বাস্তব পরিস্থিতি।
এবারও বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের নাম ভোটার তালিকায় নেই। থাকবেই বা কি করে? কারণ তাদের ক্লাব তো তাদের নামটাই পাঠায়নি। এই তালিকায় রয়েছে ইটখোলার বিশাল তেওয়ারিও। তিনি ইটখোলা এসির ক্রিকেট সচিব। ইটখোলারই আরো একটি ক্লাব ইটখোলা প্স্পোর্টিংয়ের সঙ্গেও যুক্ত বিশাল। গত মরশুমে দ্বিতীয় ডিভিশন ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইটখোলা স্পোর্টিং। সেই দলের অন্যতম সিনিয়র সদস্য ছিলেন তিনি। কিন্তু আসন্ন বি জি এমের জন্য জেনারেল কাউন্সিল মেম্বার হিসেবে ইটখোলা স্পোর্টিং থেকে নাম গেছে কাছাড় বিজেপি সভাপতি বিমলেন্দু রায় ও প্রাক্তন সভাপতি উদয় শংকর গোস্বামীর। নিজেদের ক্লাব থেকে ব্রাত্য হয়েছেন এমন বিশাল তেওয়ারিদের সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়। অনেকেই ব্রাত্য হয়ে প্রকাশ্যে আসতে চাইছেন না। কারণ তারা মনে করছেন বিষয়টি লজ্জার। সারাটা বছর ক্লাবের জন্য কাজ করে, খেলাধুলার জন্য কাজ করেও তাদের ব্র্যাত্য থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আসল সত্যটা হচ্ছে, এই লজ্জাটা শুধু তাদের নয়, এই লজ্জাটা শিলচরের স্পোর্টসের। যারা আজ জেনারেল কাউন্সিল মেম্বার হয়ে গেছেন ২৫ জুন এর পরই তারা মাঠে ময়দান থেকে গায়েব হয়ে যাবেন। ফের তাদের ‘আবির্ভাব’ ঘটবে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সভায়। এমনটাই হয়ে আসছে। আর এমনটাই হবে।

Comments are closed.

error: Content is protected !!