মহামারী করোনা গোটা দেশে তান্ডব চালাচ্ছে। গত কয়েকদিনে দৈনিক সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত রয়েছে। শিলচরেও পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। গত কয়েকদিনে কাছাড়ে লাফিয়ে বেড়েছে করোনা সংক্রমনের হার। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জারি রয়েছে মৃত্যুর মিছিলও। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি মোটেও ভালো নেই। এমন একটা সংকটজনক পরিস্থিতিতে যখন মানুষের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে খেলাধুলার কথা চিন্তা করাও যেন অপরাধ। তাই এই মুহূর্তে খেলাধুলা নিয়ে মোটেও ভাবছেনা শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এই মুহূর্তে মানুষের বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড়। তবে এরই মাঝে বুক ভরা আশা নিয়ে রয়েছেন স্থানীয় ফুটবলাররা। তাদের আশা, একদিন এই সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে দেশ। সেই সঙ্গে আমাদের শিলচর ও। আর তখন ফের একবার শুরু হবে শিলচরের ফুটবল মরশুম।
গতবছরও করোনার জন্য গোটা মরশুম বাতিল হয়ে গিয়েছিল। লকডাউনে ঘরে বসেই সময় কাটাতে হয়েছিল ফুটবলারদের। এবারও পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। সাময়িক প্রসঙ্গ মহিলা ফুটবল দিয়ে ফুটবল মরশুম শুরু করেছিল ডি এস এ। কথা ছিল এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হবে আন্তঃক্লাব দলবদল। এরপর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকেই যেকোনো একটা টুর্নামেন্ট আয়োজন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সংস্থা। তবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে গোটা দেশের সঙ্গে শিলচর করোনা সংক্রমনের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় নিজেদের পূর্ব পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় সংস্থা। তারা আরও কিছুটা অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। আশা ছিল, সংক্রমণের হার কমলে দলবদল প্রক্রিয়া আয়োজন করা যাবে। এরপর সুপার ডিভিশন লিগও আয়োজন করা যেতে পারে। কিন্তু করোনা সবকিছুতেই ব্রেক লাগিয়ে দিল।
মহামারি ভাইরাসের আতঙ্কে নিজেদের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এই তালা কবে খুলবে, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। শুধুমাত্র পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ফের এস এম দেব স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে পারবেন খেলোয়াড়রা। তবে সেই সময় কখন আসবে? এর জবাব কারোর কাছে নেই।
এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, জুলাই পর্যন্ত যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় তাহলে ফুটবল মরশুমেই একটা বড়োসড়ো প্রশ্নচিহ্ন লেগে যাবে। সত্যি কথা হচ্ছে, এখনো কিন্তু সুতোয় ঝুলছে ফুটবল মরশুমের ভাগ্য। আসাম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের নিয়ম অনুসারে চলতি মে মাসে আন্তঃজেলা দলবদল সম্পন্ন হয়ে যাবার কথা। কিন্তু করোনার জেরে সেটাও পিছিয়ে দিয়েছে এ এফ এ। আর এটাই শিলচরের ফুটবল মরশুমের জন্য লাইফ লাইন এর কাজ করতে পারে। এ এফ এ এই মুহূর্তে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে রাজি নয়। বরং তারা ওয়েটিং গেম খেলতে চাইছে। পরিস্থিতি বিচার করেই ফুটবল মরশুম নিয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার পরিকল্পনা বানিয়েছে আসাম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।
এমনিতেই গত বছর মরশুম বাতিল হয়েছে। তাই এবার দরকার হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ও মরশুম আয়োজন করতে চাইছে এ এফ এ। একইভাবে শিলচর ডি এস এর ফুটবল সচিব বিকাশ দাসও পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেবার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, ‘দেখুন, চারিদিকে যা পরিস্থিতি তাতে এই মুহূর্তে ফুটবলের কথা মাথায় আসছে না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ও মরশুম আয়োজন করা যেতে পারে। অবশ্য সব কিছু নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। আমি আশা ছাড়ছি না।’
সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফুটবল মরশুম চালু করতেই পারে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তবে সে ক্ষেত্রে সব টুর্নামেন্ট আয়োজন করা সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে লিগ ভিত্তিক টুর্নামেন্ট না করে সবকটা টুর্নামেন্ট নকআউট পদ্ধতিতে করা যেতে পারে। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিয়ম অনুসারে চারটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা বাধ্যতামূলক। সুপার ডিভিশনের সঙ্গে এ, বি ও সি ডিভিশন আয়োজন করা খুবই জরুরি। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ওঠা-নামার বিষয়টি। গতবছর গোটা মরশুম বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তাই সমস্যা হয়নি। তবে একটি টুর্নামেন্ট করলে অন্য আরেকটি ও আয়োজন করতে হবে শিলচর ডি এস এ কে। তাই মরশুম শুরু হলেও কোন পদ্ধতিতে টুর্নামেন্টের আয়োজন করে সংস্থা, সেটাও দেখতে হবে।
Comments are closed.