Also read in

১০ মাস পর কোভিড-শূন্য শিলচর মেডিক্যাল, আগামী সপ্তাহে ৪০ শয্যার আইসিইউও সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে

গত বছর ৩১ মার্চ বদরপুরের জামাল উদ্দিন প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি হিসেবে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর কঠিন পরিস্থিতিতে একদিনে তিনশোর বেশিও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। একসময় প্রায় সবধরনের চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করে শুধুমাত্র করোনা আক্রান্তদের জন্য হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। বরাক উপত্যকা ছাড়াও ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং মনিপুর থেকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা এখানে এসেছেন, চিকিৎসা পেয়েছেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, কেউ কেউ মারা গেছেন। প্রায় দশ মাস পর শনিবার শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কোভিড-শূন্য হয়েছে, তাদের সুস্থ বলে ঘোষণা করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি কাছাড় জেলায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাও শূন্য হয়েছে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালটি কোভিড-মুক্ত, তবে একটি বিশেষ করোনা ওয়ার্ড থাকবে, যেখানে আইসিইউ হয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া।

শনিবার বিকেলে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড থেকে বেশ কয়েকজন অসুস্থ রোগীকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর ওয়ার্ডে কোনও রোগী চিকিৎসাধীন নেই। এটা অবশ্যই একটি রেকর্ড, কেননা ৩১ মার্চের পর কোনওদিন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন ছিলেন না, এমনটা হয়নি। গতবছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নিজে এসে হাসপাতালে ৪০ শয্যার আইসিইউ উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত আইসিইউটি পুরোপুরিভাবে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। তবে পরিস্থিতি যত নিয়ন্ত্রণে এসেছে, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে এসেছে। সেইসঙ্গে বিশেষ আইসিইউটি খালি হয়েছে।এবার হাসপাতালে একজনও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি না থাকায় সেটা সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য তৈরি হচ্ছে। সাত দিন ধরে স্যানিটাইজ করার পর আইসিইউ সাধারণ রোগীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। পাশাপাশি করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য একটি ওয়ার্ড রেখে দেওয়া হবে, যেখানে আইসিইউ রয়েছে।

হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া এব্যাপারে বলেন, “এক সময় বরাক উপত্যকা সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রায় প্রত্যেক রোগীর চিকিৎসা আমাদের হাসপাতালে হয়েছে। চিকিৎসক থেকে শুরু করে প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। দীর্ঘ দশমাস এই পরিস্থিতি চলার পর আজ আমরা এমন একটা মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছি, যখন হাসপাতালে একজনও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন নন। অবশ্যই আমরা পুরোপুরি আস্বস্ত নই, কেননা এখনও কিছু মানুষ ভাইরাসের সংক্রমনের আওতায় আসছেন। হাসপাতালে একটা ওয়ার্ড পুরোপুরিভাবে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে আইসিইউ থাকবে। পাশাপাশি থাকবেন বিশিষ্ট চিকিৎসকরাও।”

গত দশমাসের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, “গতবছর মার্চ মাসে আমরা সরকারের নির্দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার পরিষেবা শুরু করি। ধীরে ধীরে অনেক কিছু শিখেছি, অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমাদের চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মী অনেকে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক লোক দেরিতে হাসপাতালে আসায় তাদের সুস্থ করা যায়নি, কেউ কেউ মারা গেছেন। তবে আমরা হাল ছাড়িনি, কোনভাবেই পিছপা হইনি। রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন, প্রত্যেকে পাশে ছিলেন বলেই এত বড় মহামারি থেকে আমরা অনেকটাই বেরিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছি। এখন ভ্যাকসিন প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এটা শুধুমাত্র ট্রায়াল। যদি এর সুফল দেখা যায় এবং সত্যি সত্যি আমাদের শরীরে ভাইরাসের প্রতিষেধক গড়ে ওঠে, তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে যতক্ষন এটা হচ্ছে না, আমরা সতর্ক থাকব।”

সম্প্রতি হাসপাতালে ১০০০ কোভিশিল্ড ডোজ নষ্ট হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনের বেশি ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় ফ্রিজ হয়ে গেছিল ভ্যাকসিনগুলো। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফ থেকে বলা হয়েছে, হাসপাতালে ফ্রিজার ঠিকঠাক কাজ করছিল, ভ্যাকসিন নষ্ট হওয়ার পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। রাজস্তরের একটি বিশেষ দল পুরো ব্যাপারে তদন্ত করছে এবং তাদের রিপোর্টে জানা যাবে আসল রহস্য কোথায়। তবে আপাতত শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ধন্যবাদ দিতে হয়, কঠিন পরিস্থিতিতে সবথেকে বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার জন্য।

Comments are closed.