Also read in

শিলচর মেডিকেল কলেজ দূর্নীতি: নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাল বরাক ভ্যালি ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম

শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আর্থিক ও অন্যান্য দুর্নীতির খবর আজ প্রায় সবারই জানা। এবার এই দুর্নীতির তদন্ত চলছে। তদন্তের ফলে কখনো বা বদলি আবার কখনো কিছু গ্রেফতারির ঘটনাও ঘটছে। এই ব্যাপক দুর্নীতির খবরে সারা উপত্যকার মানুষের সঙ্গে আমরাও খুবই উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ এবং মর্মাহত। এক প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে বরাক ভ্যালি ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের পক্ষ থেকে এ কথা গুলো উল্লেখ করে এর তদন্ত যথাযথভাবে সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়।

সরকারি চিকিৎসা পরিষেবায় দক্ষিণ আসাম, ত্রিপুরা,মিজোরাম এবং মণিপুরের একাংশ এলাকার প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের একমাত্র ভরসার স্থল এই হাসপাতালে সংঘটিত ব্যাপক দুর্নীতির আরো দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আদালতে পেশ করার জন্য ফোরাম জোরালো ভাবে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে বলে প্রেস বিবৃতিতে উল্লেখ করেন ফোরামের সম্পাদক আশু পাল।

ফোরাম চায়, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী প্রমাণিত চিকিৎসক বা কর্মীর আইন অনুযায়ী শাস্তি হোক। বিবৃতিতে বলা হয় যে সংবাদ মাধ্যমে এই দুর্নীতির খবর প্রকাশের অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন অধ্যক্ষের কাছে ফোরাম এই দাবি জানিয়ে আসছে। আরও বলা হয়,”অন্যান্য বিভাগের পাশাপাশি ব্লাড ব্যাঙ্কে দুর্নীতি নিয়েই আমরা সমধিক বিচলিত। আর ব্লাড ব্যাঙ্কে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। ২০০২ সালে আমাদের সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অব্দি প্রায় হাজার খানেক রক্তদান শিবির আয়োজন করে আমরা ব্লাড ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে নিবিড় ভাবে যুক্ত রয়েছি। সাধারণ মানুষকে রক্তদানে উৎসাহী করতে গিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা লব্ধ ব্লাড ব্যাঙ্কে দুর্নীতির বেশ কিছু অভিযোগ আমাদের কাছেও আসে। আমরাও সেগুলি বিভিন্ন সময়ের প্রিন্সিপাল ও সুপারিন্টেন্ডেন্ট-দের কাছে তুলে ধরে প্রতিকারের দাবি জানিয়েছি। দুর্নীতি রুখতে ঘন ঘন পরিদর্শন, ব্লাড ব্যাঙ্কের স্থানে স্থানে সি সি টি ভি ক্যামেরা বসানোর দাবিও আমরা বছর দশেক আগেই জানিয়েছিলাম। কিন্তু নানা কারণে তা বাস্তবায়িত করা হয়নি।”

” ব্লাড ব্যাঙ্কে দুর্নীতির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বেচ্ছা রক্তদান আন্দোলন। সাধারণ মানুষ এক উচ্চতর মানবিক চেতনায় নিঃস্বার্থে রক্তদানের পর যখন দেখতে পাচ্ছেন তার দান করা রক্ত নিয়ে কিছু কিছু মানুষ যথেচ্ছ পয়সা রোজগার করছে, তারপর থেকে আর স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরে রক্তদান করতে মানুষ এগিয়ে আসছেন না। পরোক্ষে লাভবান হচ্ছে “বিনিময় রক্তদান” বা “রিপ্লেসমেন্ট ডনেশন” প্রথা, যা আমাদের দেশের জাতীয় রক্তনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী” বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

ডাঃ কুমার কান্তি দাশের সভাপতিত্বে বরাক ভ্যালি ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি এক জরুরি সভায় মিলিত হয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কের দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্ত দ্রুত এবং নিরপেক্ষ ভাবে সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দাবি জানিয়েছে। সাধারণ স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের রক্ত পাওয়ার ক্ষেত্রে এই অসুবিধার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত পুনর্বিবেচনা সাপেক্ষে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির আয়োজন সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তও ওই সভায় গৃহীত হয়েছে।

“দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বিভিন্ন পদে বেশ কিছু রদবদল হয়েছে। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে এসে তারা ক্ষেত্র বিশেষে এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন, যা সাধারণ মানুষকে আরো বেশি অসুবিধার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। ব্লাড ব্যাঙ্কে দুর্নীতি রোধের লক্ষ্যে চিকিৎসা সহায়ক কর্মীদের মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম নীতি পালনের আদেশ জারি করা হয়েছে” বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করে এইসব পদক্ষেপকে ফোরাম স্বাগত জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, বরাক ভ্যালি ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম গত ১৭ বছর ধরে রক্তদান শিবির আয়োজন করছে। এই সংগঠনকে বারংবার সেরা রক্তদাতা সংগঠন হিসাবে পুরস্কৃত করেছে রাজ্য সরকার। জাতীয় স্তরেও এর পরিচিতি রয়েছে।

ফোরাম বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করে, “অতীতেও মাঝে মাঝে রক্তের সঞ্চয়ে টান পড়েছে। নিজেদের উদ্যোগেই আমরা জরুরি ভিত্তিতে রক্তদান শিবির আয়োজন করে সেই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে ব্লাড ব্যাঙ্ক ইনচার্জ, প্যাথোলজি বিভাগের প্রধান, এমন কী সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও প্রিন্সিপালেরাও আমাদের ডেকে সভা করে সঙ্কট মোচনের জন্য শিবির আয়োজন করার আবেদন জানিয়েছেন। আমরা তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা বাড়িয়ে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছি। কিন্তু নতুন ব্লাড ব্যাঙ্ক ইনচার্জ দায়িত্ব নিয়ে দুর্নীতি মোকাবিলা করার যুক্তিতে ডোনার কার্ডের বিনিময়ে রোগীদের রক্ত দেওয়ার প্রথা একতরফা ভাবে বন্ধ করে দিয়ে সার্কুলার জারি করেন। কার্ডের বিনিময়ে রক্ত না পেয়ে মহাসঙ্কটে পড়েন রোগীরা। বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তদাতারা আমাদের কাছে তাদের ক্ষোভ ব্যক্ত করতে থাকেন। আমরা মনে করি, রিপ্লেসমেন্ট ডোনেশন ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে দেওয়ার যে নীতি ঘোষণা করা হয়েছে, ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত তা উলঙ্ঘন করে এবং পরোক্ষে রিপ্লেসমেন্ট রক্তদানকে তা উৎসাহিত করছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, শুধু মাত্র রক্তের যোগান নিয়মিত রাখার এক সংস্থা হিসাবেই তারা আমাদের সংগঠনকে দেখে থাকেন। সুষ্ঠু ভাবে ব্লাড ব্যাঙ্ক পরিচালনার কোনো বিষয়েই তারা আমাদের পরামর্শ বিবেচনা করতে চান না। বর্তমান রক্ত-সঙ্কট মোকাবিলা করতেও তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করার কোনো প্রয়োজন বোধ করেন নি।”

এই প্রেক্ষিতে মানুষের প্রাণ রক্ষাকারী এই পরিষেবা দ্রুত দুর্নীতিমুক্ত হয়ে কাজ করা জরুরি বলে মনে করে ফোরাম।

Comments are closed.