Also read in

শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনের দুর্গাপূজায় এবার খিচুড়ি প্রসাদ দেওয়া হবে; "ভক্তরা টিকা নিয়েছেন কি না পরীক্ষা করা হবে," স্বামী গণধীশানন্দ মহারাজ

পুজোর গন্ধ এসেছে, শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনে এখন বেশ ব্যস্ততা। বছরের এই সময়ে সবাই নতুন পোশাক কিনে আত্মীয় স্বজনদের উপহার দিয়ে পূজার পরিকল্পনা তৈরি করছে। রামকৃষ্ণ মিশনের ব্যবস্থাপনায় ও ইতিমধ্যে গরিব দুঃখীদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।

রামকৃষ্ণ মিশনের দুর্গাপূজায় না গেলে অনেকের কাছেই পুজো দেখা যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কেউ কেউ আবার রামকৃষ্ণ মিশনের দুর্গাপূজা দিয়ে পূজা পরিক্রমা শুরু করতে পছন্দ করেন এবং তাই তারা মহা সপ্তমীতেই সাতসকালে মিশনে এসে উপস্থিত হন। রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ আশা করছেন এবার পুজোর তিন দিনে মোটামুটি ৩৫,০০০ ভক্তের সমাগম হবে। “আমরা আসাম সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোভিড প্রটোকলগুলি মেনে চলব। একবার ভক্তরা রামকৃষ্ণ মিশন প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে, তারা আমাদের দায়িত্ব থাকবেন। আমরা একটি নির্দিষ্ট কাউন্টারে পরীক্ষা করে দেখব যে, তারা ভ্যাকসিনের ডোজ নিয়েছেন কিনা। তারপর, একটি স্যানিটাইজার কক্ষ থাকবে, যেখানে একবার প্রবেশ করলে স্যানিটাইজড হয়ে বেরিয়ে আসবেন ভক্তরা,” জানান শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনের সেক্রেটারি স্বামী গণধীশানন্দজী মহারাজ।

স্যানিটাইজার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসার সময়, ভক্তরা একে অপরের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়াবেন। ” তারপর তারা ধীরে ধীরে মন্দিরে প্রবেশ করবেন; ঠাকুর, মা এবং স্বামীজীর (রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, সারদা দেবী এবং স্বামী বিবেকানন্দ) কাছে প্রার্থনা করবেন এবং নতুন ভবনের দিকে এগিয়ে যাবেন। গতবারের মতো ঐ নতুন ভবনে দেবী দুর্গার পূজো হবে। পরবর্তীতে এই নতুন ভবনটিতে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় (চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি) গড়ে তোলা হবে,” তিনি জানান।

রামকৃষ্ণ মিশনে দেবী দুর্গাকে পুষ্পাঞ্জলি না দিলে অনেকের কাছেই দুর্গা পূজা অসম্পূর্ণ। শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনের সেক্রেটারি স্বামী গণধীশানন্দ মহারাজ জানান যে, সকাল ৮টা থেকে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান শুরু হবে। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির জন্য ভক্তদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি, কারন শুধু কয়েকজন ভক্ত একসাথে পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারবেন। “আমরা একটু পরে পরেই ছোট ছোট দলে পুষ্পাঞ্জলি প্রদানের ব্যবস্থা করব, যাতে সবাই পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারেন,” স্বামী গণাধীশানন্দ জানান। পুষ্পাঞ্জলির জন্য, রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ ভক্তদের অনুরোধ করেছেন, যদি সম্ভব হয় তবে ফুল নিয়ে আসতে, অন্যথায় মিশন প্রাঙ্গনেই দেওয়া হবে।

Swami Ganadhishananda Maharaj, Secretary of Silchar Ramakrishna Mission.

দুর্গা পূজা সমগ্র বিশ্বের বাঙালি হিন্দুদের কাছে সবচেয়ে বড় উৎসব। একটি ধর্মীয় ব্যাপার-স্যাপার ছড়াও এটি এমন একটি উৎসব, যেখানে পরিবারের সকল সদস্য এবং বন্ধু বান্ধবরা একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করে থাকে। দুর্গাপূজায় শিলচরের ভক্তদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হলো পূজার প্রসাদ হিসেবে রামকৃষ্ণ মিশনের ‘খিচুড়ি’র স্বাদ গ্রহণ করা। গত বছর কোভিডের কারণে কেবল কাঁচা ফল প্রসাদ হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনের সেক্রেটারি স্বামী গণাধীশানন্দ মহারাজ জানান, “এই বছর সকলের জন্য খিচুড়ি প্রসাদের ব্যবস্থা করা হবে। তবে আগের বছর গুলির মতো মন্দির চত্বরে চেয়ারে বসে থালায় নিয়ে খিচুড়ি খাওয়া যাবেনা। ”

এবার থালার পরিবর্তে, আমরা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল বক্সে করে খিচুড়ি দেব। খিচুরির সাথে চাটনি ও মিষ্টি চামচ সহযোগে দেওয়া হবে। এই প্যাক করা প্রসাদ ভক্তরা বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু যারা এখানেই খেতে চাইবে তাদের একটু হেঁটে মিশনের ঠিক উল্টো দিকে থাকা শিলচর কলেজিয়েট স্কুলে যেতে হবে, আমরা সেখানে ব্যবস্থা করব,” স্বামী গণাধীশানন্দ যোগ করেন।

 

 

ভক্তদের জন্য কলেজিয়েট স্কুল চত্বরে পানীয় জলের ও ব্যবস্থা করা হবে। কলেজিয়েট স্কুলের ভিতরে দু-চাকার যানবাহনের জন্য পার্কিংয়ের জায়গা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ভক্তদের অপেক্ষা করার জন্য রামকৃষ্ণ মিশন চত্বরের ভিতরে একটি ওয়েটিং শেড তৈরি করা হবে। ভক্তরা কাউন্টারে ভোগের জন্য কাপড় এবং ফল দান করতে পারবেন, চাঁদা দেওয়ার জন্য আলাদা কাউন্টার থাকবে। স্বামী গণধীশানন্দজী অর্থ দান করতে ইচ্ছুক ভক্তদের তাদের স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর (PAN) সঙ্গে আনতে অনুরোধ করেছেন। “আমাদের প্যান কার্ডের কপি লাগবে না, শুধু নম্বরই যথেষ্ট। যদি মুখস্থ না থাকে তবে তারা তাদের মোবাইল ফোনে উল্লেখিত প্যানটি আনতে পারে। অর্থ দান করা ভক্তদের স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বরটি নোট করা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার” স্বামীজি জানান।

 

কোভিড পরিস্থিতির জন্য গত বছর রামকৃষ্ণ মিশনে ভক্তের সংখ্যা আট হাজারে নেমে এসেছিল। এই বছর যখন দ্বিতীয় ঢেউ সুনামির মতো আঘাত হেনেছিল তখন ও উৎসবের মেজাজ হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে, জনগণের মনোবল ও বাড়ছে। সবাই সম্মিলিত প্রয়াসে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেতে চায়, তবে অবশ্যই সতর্কতার সাথে। দুর্গাপূজা, ২০২১ একটি ধর্মীয় উৎসবের চেয়ে বেশি। এটি মানসিক স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনী শক্তির পুনরুদ্ধারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি। রামকৃষ্ণ মিশন ও হাজার হাজার সতর্ক, টিকা দেওয়া ভক্তদের নিয়ে একটি দুর্দান্ত দুর্গা পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছে। “যেহেতু ভারত ভ্যাকসিনেশনে রেকর্ড স্থাপন করেছে এবং কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, সম্ভবত আমারা সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পেছনে ফেলে এসেছি। আমরা সতর্ক থাকব এবং প্রোটোকল মেনে চলব। এটাই আমরা করতে পারি এবং বাকিটা ঠাকুরের উপর নির্ভর করে,” শেষ করেন স্বামী গণধীশানন্দজী মহারাজ।

Comments are closed.