Also read in

ধর্মীয় সমন্বয়ের অনন্য নজির শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনের 'যীশু পুজো'

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, যীশু খ্রীষ্ট জীবিত থাকলে নিজের রক্ত দিয়ে তার পা ধুয়ে দিতাম, এতটাই শ্রদ্ধা করতেন যীশু খ্রীষ্টকে। শোনা যায় ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ যিশুখ্রিস্টের দর্শন পেয়েছিলেন। ঠাকুরের দেহরক্ষার পর রামকৃষ্ণ মিশনে বড়দিনে যীশুপুজো প্রথা শুরু হয়। এর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সর্বধর্ম সমন্বয়, ঠাকুর নিজেই বলেছেন ‘যত মত তত পথ’, এমনটাই বললেন শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক গণধীশানন্দ মহারাজ।বৃহস্পতিবার শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনে যিশুখ্রিস্টের পুজো এবং জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠান পালিত হয়। এতে অংশ নিতে গিয়েই কথাগুলো বলেন মহারাজ।

সম্প্রতি শিলং রামকৃষ্ণ মিশনের বিবেকানন্দ কালচারাল সেন্টারে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল স্থানীয় ছাত্র সংগঠন। সেই সূত্র ধরে শিলচরে বজরং দলের এক সদস্য হুমকি দিয়েছিলেন যদি কোনও হিন্দু ঘরের ছেলেমেয়েরা বড়দিনে গির্জায় যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে শহরের প্রধান গির্জাগুলো ইতিমধ্যে বড়দিনে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। যদিও তারা পরিষ্কারভাবে বজরং দলের কথা উল্লেখ করেননি, উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস যাতে সংক্রমিত না হয়, তাই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে শিলচর শহরের রামকৃষ্ণ মিশন ধর্মীয় সমন্বয়ের এক অভিনব বার্তা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনের মূল মন্দিরে শ্রীরামকৃষ্ণ-সারদা মায়ের প্রতিকৃতির ঠিক সামনে যীশুখ্রীষ্ট এবং মেরির একটি প্রতিকৃতি বসানো হয়। যেভাবে বড়দিনে কেক কেটে উৎসব উদযাপন হয়, সেভাবেই কেক সাজানো হয়। প্রার্থনার পর যীশুপুজো উদযাপন নিয়ে পাঠ করেন গণধিশানন্দজি মহারাজ। তিনি অনুষ্ঠান উদযাপনের ইতিহাস থেকে শুরু করে অন্যান্য দিক তুলে ধরেন। কয়েকশো ভক্ত নীরবে সুশৃংখলভাবে পাঠ শোনেন এবং পরবর্তীতে প্রার্থনায় গলা মেলান।

এরপর নাম কীর্তনের পাশাপাশি কেক কেটে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন পালন হয়। একদিকে যেমন কেক চকলেট ইত্যাদি ভোগ দেওয়া হয়, সঙ্গে ভারতীয় খাবারও চোখে পড়ে। শুধুমাত্র ধর্মীয়ভাবে নয়, সামাজিকভাবেও সমন্বয়ের বার্তা দিয়েছে রামকৃষ্ণ মিশনের যীশু পুজো অনুষ্ঠান।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় গণধিশানন্দজি মহারাজ বলেন, “আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের মূলমন্ত্র হচ্ছে সর্বধর্ম সমন্বয়। ঠাকুর বারবার বলেছেন যত মত তত পথ, সব পথের লক্ষ্য যেহেতু এক, তাই প্রত্যেকেই সমানভাবে নমস্য। রামকৃষ্ণ মিশনে ২৪ ডিসেম্বর যিশুখ্রিস্টের পুজো হয়, এটা পুজো এবং জন্মোৎসব পালনের সংমিশ্রণ অনুষ্ঠান। এর মাধ্যমে আমরা যিশুখ্রিস্টের জীবনের সুন্দর দিকগুলোর বিষয়ে জানতে পারি এবং নিজেরা এর থেকে অনেক কিছু শিক্ষা পাই। মহাপুরুষের জীবনী আমাদের কাছে সবসময় শিক্ষনীয় একটি ব্যাপার। শোনাযায় ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ যীশু খ্রীষ্ট এবং বুদ্ধের দর্শন পেয়েছিলেন। বুদ্ধ যেভাবে আমাদের কাছে নমস্য যীশুখ্রীষ্টও তাই।”

Comments are closed.