Also read in

বিশ্বের এই চরম সংকটের মুহূর্তে সুদূর আটলান্টায় বসে শিলচর আর শহরের পরিজনদের নিয়েই ভাবছেন জয়শ্রী, জানালেন নিজের অনুভূতি

বিশ্ব আজ মহাসংকটে, এ বিপদ শুধু এক দেশ, এক জাতি বা এক ভূখণ্ডের নয় , এ যে সমস্ত মানবজাতির সংকট। আমি আজ উত্তর আমেরিকার আটলান্টা শহর থেকে এই কথাগুলো লিখছি। আজ থেকে ঠিক ২৩/২৪ দিন আগে আমরা আমাদের স্টেট জর্জিয়া’তে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কথা শুনি। আর আজ সে সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের এখানে প্রায় দুসপ্তাহ হয়ে গেলো সমস্ত স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত সব কিছু বন্ধ। পুরোপুরি ঘরবন্দী আমরা।

তারমধ্যে যখন আমাদের ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ শুনছি তখন থেকেই আরো আতঙ্কিত হয়ে আছি। আমার এ লেখা মূলতঃ আমার জন্মভূমি শিলচরের জন্য। যেখানে আমার মা, আত্নীয়, পরিজন , বন্ধু বান্ধব সবাই আছেন।

২১ দিনের জন্যে ভারতবর্ষে সরকার সবাইকে গৃহবন্দী থাকতে বলেছেন। এই পরিস্থিতেতে জানি অনেকে অনেক অসুবিধায় পড়বেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও সবাইকে বিনীত অনুরোধ করছি ঘরে থাকুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, কিন্তু দেশের নাগরিক হিসাবে নিজেদের তো কিছুটা দায় আছে। আমরা যারা বিদেশে থাকি আমরা আজ কি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তা হয়ত লিখে বোঝাতে পারবো না। উন্নত দেশগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থা হিমশিম খাচ্ছে এই অবস্থা সামলাতে, সে জায়গায় কি হবে যদি আমাদের রাজ্য বা শহরে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস? আমাদের সবার প্রার্থনা এরকম যেন না হয়! আমাদের ভারতবর্ষে ঘরের নানা কাজের জন্য কিছুটা হলেও অন্যের ওপর নির্ভরশীল। আর সেটা খুব প্রয়োজনীয় বটে। বিদেশে তার উপায় নেই , নিজেদের কাজ নিজেদের করতে হয় এবং তার জন্য অনেক সুবিধাও করা আছে। বয়স্কদের জন্য assisted living ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশে এমন অনেকেই আছেন যাঁদের হয়তো রোজকার চলাফেরার জন্যও শারীরিক কারণে কারোর সাহায্য দরকার। এই ২১দিন তাদের কি করে চলবে? ঘরে অন্যকেউ সাহায্যকারী থাকলে অবশ্যই এগিয়ে আসবেন , দেশে আমার নিজের পরিবারের সদস্যদের এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তার সাথে ঘরের আনুসঙ্গিক কাজ তো আছেই। তাই বলছি পরিবারের সবাই একে ওপরকে যথাসাধ্য সাহায্য করুন যেখানে বাইরের সাহায্য পাওয়া সম্ভব না ।

পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা আর সতর্ক থাকা নিজের জন্যই খুব জরুরি। এই পরিষ্কার,পরিচ্ছন্নতা থাকা নিয়ে অনেকে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি ও করেন। আমরা যখনই বাইরে যাই আমাদের প্রত্যেকটা সুটকেস, ব্যাগ ধুয়ে শুকানো হয়। একবার ভেবে বলুন এগুলো কি শুচিবাই না পরিচ্ছন্নতা? আর এ অভ্যাস গুলো সবসময়ই ছিল। আর আজকের এই পরিস্থতিতে এতো খুবই জরুরী। সবাইকে অনুরোধ করছি খুব ভালো করে বারবার হাত ধোওয়ার অভ্যাস করুন। সবসময় তার জন্য নামিদামি হ্যান্ড সোপ’র দরকার নেই। মার্গো, ডেটল, লাইফ বয় সাবানও অনেক ভালো। শিলচর ছেড়ে এসেছি আজ অনেক বছর, আজ যখন যাই দেখি অনেককিছুই সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ,যা আমাদের সময় অসম্ভব ছিল। আরেকটা কথা মনে হলো, কিছু ধরার জন্য গ্লাভস হয়তো সবসময় আমাদের শহরে সম্ভব না, সেক্ষেত্রে ঘরে থাকা পুরোনো ধোওয়া মোজা বা কাপড় ব্যবহার করতে পারেন।

আমাদের শহর শিলচরের সকল ঘরের মহিলারা খুবই করিৎকর্মা, সামান্য জিনিস কেই তাঁরা নিজেদের হাতের গুনে অসাধারণ করতে পারেন ,তা রান্না হোক বা সেলাই। নিজেদের এই গুণ গুলো সবাই কাজে লাগান। সব্জির খোসা না ফেলে, বড়া, বাটা করুন ।তাতে করে আর বাইরে বাজারে যেতে হবে না রোজ। শিলচরে ঘরে ঘরে অনেক প্রতিভা, তাই গান, সেলাই বই নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখুন।

আমি নিজে বিদেশে , পরিবার নিয়ে এইমুহুর্তে গৃহবন্দী। আমি এখানে সরকারি স্কুলে কাজ করি, কবে স্কুল খুলবে জানি না। স্বামী ঘর থেকেই কাজ করছেন ,মেয়ের অনলাইন ক্লাস চলছে। ভাই, বোন, আত্মীয় স্বজন দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে আছেন। সবাই এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। বিজ্ঞান আজ অনেক এগিয়ে, খুব শীঘ্রই হয়তো এর প্রতিরোধ , প্রতিষেধক বেরিয়ে পড়বে। কিন্তু সেই সময় পর্যন্ত আমাদের সবাইকে তো সাবধানে থাকার চেষ্টা করতেই হবে। নিজেরা এই বিপদকালীন অবস্থার মধ্যেও বসে খুব চিন্তায় আছি জন্মভূমি শহর শিলচরের জন্য। সবাই ভালো থাকার চেষ্টা করুন।

Comments are closed.