সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফি টি ২০ ক্রিকেটের জন্য গত ২ জানুয়ারি কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছিল অসম দল। এই মুহূর্তে কলকাতার এক হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন রিশভ দাস-রিয়ান পরাগরা। পাঁচ দিনের এই কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড শেষ হবে ৭ জানুয়ারি। এরপরই প্র্যাকটিসে নেমে পড়বে অসম দল। টুর্ণামেন্টে তাদের প্রথম ম্যাচ হায়দরাবাদ এর বিরুদ্ধে। ইডেন গার্ডেন্সে ম্যাচটি হবে ১০ জানুয়ারি।
গত পাঁচটি আসরের তুলনায় এবারের সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফির গুরুত্ব কিন্তু অনেক বেশি। এর দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, করোনাকালে এটাই ভারতের প্রথম ঘরোয়া টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে। ফলে অনেকদিন পর শীর্ষ স্তরে প্রতিযোগিতামূলক আসরে নামতে চলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটাররা। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নন অসমের খেলোয়াড়রাও। আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আই পি এল)। সম্ভবত দুমাস বাদে বসতে চলেছে আইপিএলের আসর। তার আগে হতে পারে ক্রিকেটারদের নিলামিও। তাই মুস্তাক আলী তে ভালো পারফর্ম করে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির রাডারে চলে আসাই প্রধান লক্ষ্য হবে ঘরোয়া ক্রিকেটারদের। এই তালিকায় রয়েছেন অসম দলে শিলচরের তিন ক্রিকেটার-প্রীতম দাস, রাহুল সিং এবং অভিষেক ঠাকুরি।
গত কয়েক বছর থেকেই রাজ্য দলের নিয়মিত সদস্য কাছাড় এক্সপ্রেস প্রীতম। ঘরোয়া ক্রিকেটের সীমিত ওভারের ফরমেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করে চলেছেন শিলচরের এই ডানহাতি পেসার। কয়েক মরশুম আগে ঘরোয়া ক্রিকেটের ওয়ানডে ফরমেটের টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ট্রফি তে সর্বাধিক উইকেট শিকার করেছিলেন প্রীতম। কিন্তু এরপরও মিলেনি আইপিএলের টিকিট। তাই বলে থেমে থাকেননি প্রীতম। বরং কঠিন পরিশ্রম করে রাজ্য দলের এক নিয়মিত সদস্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। অসম দলের এখন এক সিনিয়র ক্রিকেটার প্রীতম। করোনাকালেও নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে কঠিন পরিশ্রম চালিয়ে গেছেন। কলকাতায় উড়ে যাওয়ার আগে মালিগাওয়ে ভারতীয় রেলের বিরুদ্ধে এক প্রস্তুতি ম্যাচে চার উইকেট শিকার করেছিলেন ডানহাতি পেসার। তাও আবার হ্যাটট্রিক দিয়ে। এমন পারফরম্যান্স দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভালো ছন্দেও রয়েছেন। তবে প্রীতমের জন্য আসল পরীক্ষাটা কিন্তু এবার শুরু হচ্ছে।
মুস্তাক আলী ট্রফি তে আইপিএলের প্রতিটি ফ্রাঞ্চাইজির নজর থাকে। তাই এখানে ভালো পারফর্ম করে আইপিএলে পাখির চোখ করছেন শিলচরের ছেলে প্রীতম। বরাক বুলেটিন কে তিনি জানান, লকডাউন এর সময় থেকেই ফিটনেস ধরে রাখার জন্য পরিশ্রম করছিলাম। ফলে ফিটনেস এর দিক থেকে খুব ভালো অনুভব করছি। তবে ছন্দে ফিরতে একটু সময় লেগেছে। আসলে এতদিন মাঠের বাইরে থাকার পর চট করে আপনি জোর দিতে পারবেন না। এমনটা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সম্ভাবনা বাড়তে পারে চোট পাওয়ার। তাই আমি একটা প্রক্রিয়া অনুসারে এগিয়েছি। প্রীতম আরো বলেন, টিম ম্যানেজমেন্ট দলের প্রত্যেকে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছে। তাকেও বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এবার সেদিকেই ফোকাস করছি। মুস্তাক আলী ট্রফিতে ভালো পারফর্ম করে আইপিএলে দল পেতে চাই।
সোজা কথায়, আসন্ন প্রতিযোগিতায় নিজের সেরাটা নিংড়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত প্রীতম। রাজ্য দলের আরেক সদস্য রাহুল সিংও মানসিকভাবে প্রস্তুত। গত বছর আইপিএলে রাজস্থান রয়েলসের নেট বোলার হিসেবে ছিলেন ইটখোলার এই বাঁহাতি স্পিনার। তবে এবার আরও একধাপ এগিয়ে যেতে চান। জায়গা করে নিতে চান কোন এক আইপিএলের মূল স্কোয়াডে। রাহুল জানান, ভালো পারফর্ম করে আইপিএলের কোন একটি দলে জায়গা করতে চাই। জানি, কাজটা সহজ হবে না। তবে আমি প্রস্তুত। শিলচর থেকে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলেই রাজ্য দলের শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন রাহুল। তাছাড়া করোনাকালে রাজস্থান দলের সঙ্গে থাকায় দারুণ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন বাঁহাতি স্পিনার। এবার সেই অভিজ্ঞতা আসন্ন মুস্তাক আলী ট্রফি তে কাজে লাগাতে চান রাহুল।
অসম দলে রিয়ান পরাগ ও রাজ্জাক উদ্দিন আহমেদের মতো দুই স্পিনার রয়েছেন। তারপরও কিন্তু একাদশে রাহুলের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ নেট বোলার হিসেবে তার আইপিএল অভিজ্ঞতা। রাহুল জানালেন, ম্যাচ সিচুয়েশন অনুসারেই বোলিং করবেন। যখন রানের গতিতে ব্রেক লাগানো দরকার, সেদিকে জোর দেবেন। আবার যখন উইকেটে দরকার পড়বে, তারজন্য ঝাঁপাবেন।
মুস্তাক আলী ট্রফিতে ভালো পারফর্ম করতে চাইবেন শিলচরের আরও এক তারকা অভিষেক ঠাকুরি। স্কোয়াডে তিনি ছাড়া আরও একজন উইকেটকিপার রয়েছেন। তিনি হচ্ছেন এরিক রয়। তবে একাদশে স্থান পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন ঠাকুরি। কাজেই টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার মান রাখতে চাইবেন শিলচরের এই বাঁহাতি উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। সব মিলিয়ে আসন্ন মুস্তাক আলী ট্রফি শিলচরের তিন ক্রিকেটার এর জন্যই ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াতে পারে।
Comments are closed.