জে কে বরুয়া ক্রিকেট কান্ড, 'প্রত্যাশিতভাবেই' কোনও হেলদোল নেই অসম ক্রিকেট সংস্থার
গোলাঘাটে বৃহস্পতিবার যা কিছু ঘটে গেলো তা শুধু রাজ্যের জন্য নয়, ক্রিকেটের জন্য ও এক কলঙ্ক। যে ক্রিকেটকে ভদ্রলোকের খেলা বলা হয়ে থাকে, সেখানে ক্রিকেটের মর্যাদা শেষ করে দিল রেল ও যোরহাট। ক্রিকেটের স্পিরিট বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন ইনস্টাগ্রাম টুইটারে নানান ভিডিও আপলোড করছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পর্ষদ। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিশ্বের সব প্রান্তেই যাতে ক্রিকেটের স্পিরিট বজায় থাকে। তবে গতকাল এ রাজ্যে বাইশ গজে এমন কাণ্ড ঘটে গেল যা প্রত্যেক খেলোয়াড়কে লজ্জা দেবে।
ফিক্সিং রুখতে আইসিসি গত কয়েক বছরে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড ও ক্রিকেটকে দুর্নীতিমুক্ত করতে আলাদা করে একটি শাখা গঠন করেছে। যার নাম হচ্ছে দুর্নীতি দমন শাখা। ভারতীয় বোর্ডের অধীনে থাকা প্রত্যেকটি রাজ্য ক্রিকেট বোর্ডকে দুর্নীতি রুখতে কড়া নির্দেশ দিয়ে থাকে বিসিসিআই। ব্যতিক্রম নয় আসাম ক্রিকেট এসোসিয়েশনের ক্ষেত্রেও। তবে বোর্ডের এমন কড়া নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও মাঠে দুর্নীতি রুখতে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না এ সি এ। উল্টো, গড়াপেটার মত অপরাধকে আরও উৎসাহ দিচ্ছে তারা।
সত্যিই যদি অসম ক্রিকেট সংস্থা ক্রিকেটকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে সচেষ্ট থাকতো তাহলে ইতিমধ্যেই রেল ও যোরহাটের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করত। সেইসঙ্গে সাসপেন্ড করে দিত ম্যাচের দুই আম্পায়ার কে। তবে সত্যি কথা বললে অসম ক্রিকেট সংস্থার কাছ থেকে এমন কিছুর প্রত্যাশা করা উচিত নয়। বিশেষ করে, যে দলটার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে তার নাম যদি শিলচর হয়, তাহলে তো কোনো অবস্থাতেই নয়।
গত কয়েকবছরে বিসিসিআই এক নতুন পলিসি নিয়েছে। সে অনুসারে প্রতিটি ছোট ছোট কেন্দ্রে রনজি ম্যাচ দিচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তবে সেই সব কেন্দ্রে সরাসরি ম্যাচ দেওয়া হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থার কাছে ম্যাচ দেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে বোর্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে ছোট ছোট কেন্দ্র কে যেনো এড়িয়ে যাওয়া না হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঁচ দিনের ফরমেট কে প্রমোট করতেই এমনটা করছে ভারতীয় বোর্ড। দেশের অনেক ছোট ছোট শহরে রনজি ম্যাচ হচ্ছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত বোর্ডের সেই পলিসি অনুসারে রনজি ট্রফির কোনো ম্যাচ পায়নি শিলচর। এজন্য এ সি এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাত দেওয়া হয়েছে।
গতকাল গোলাঘাটে যে লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে সেটা কে ‘প্রশ্রয়’ দিয়ে কিন্তু একরকম বিপদ ডেকে আনছে এ সি এ। যে দুই আম্পায়ার বেল তুলে নেওয়ার পরও ফের ম্যাচ স্টার্ট করলেন, তাদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তবে কিছুই হচ্ছে না। আর শিলচরের প্রতি এ সি এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে কিছু হবে ও না। এটাই প্রত্যাশিত।
গতকাল গোলাঘাটে রেল ও যোরহাটের খেলোয়ারদের মনে জাতিবিদ্বেষ কাজ করেছে। এজন্যই তারা শিলচর কে ছিটকে দিতে ক্রিকেটের স্পিরিটকে বিসর্জন দিয়েছে। এজন্যই বিষয়টাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল এ সি এর। খেলাধুলার মাঠে কোনো জাত পাত হয় না। এখানে জাতিবিদ্বেষ থাকাটা খুবই গুরুতর বিষয়। অন্তত ক্রিকেটের বাইশ গজে যাতে জাতিবিদ্বেষ এর কুপ্রভাব না পড়ে সেজন্য সচেষ্ট থাকা উচিত ছিল অসম ক্রিকেট সংস্থার। তবে খুবই দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, গোলাঘাট কাণ্ডকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে এবার ক্রিকেটের মাঠে ও জাতিবিদ্বেষ কে প্রশ্রয় দিচ্ছে এ সি এ। রাজ্যের ক্রিকেটের জন্য এটা মোটেও ভালো খবর নয়।
একবার ভাবুন তো, রেল ও যোরহাটের অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটাররা ম্যাচ থেকে কী ধরনের শিক্ষা পেল? এত বড় অপরাধ করেও পার পেয়ে গেল তারা। ফলে আগামীতে যদি এই ক্রিকেটাররা রাজ্য দলের হয়ে ফিক্সিং করে তাহলে কিন্তু এদের শাস্তি দিতে পারবেনা এ সি এ। কারণ জুনিয়র ক্রিকেটারদের দুর্নীতির পথ প্রশস্ত করে দিচ্ছে তো তারাই। রাজ্যের ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে খারাপ খবর হলো, গতকাল শিলচরের বিরুদ্ধে শুধু দুটি দল নয়, গোটা সিস্টেম কাজ করেছে। আম্পায়ার থেকে শুরু করে দু দলের কোচ ও উঠেপড়ে লেগেছিলেন শিলচর কে আটকাতে। এর থেকে খারাপ আর কি হতে পারে।
ঘটনাটি যদি শিলচরে ঘটতো। আর শিলচর দলের খেলোয়াড়রা এমনটা কিছু করতেন, তাহলে কি তখনও দর্শকের ভূমিকায় থাকতো এ সি এ? না, মোটেও না। ইতিমধ্যে হয়তো অনেকেই সাসপেন্ড হয়ে যেত। গোলাঘাট কান্ড চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে জাতীয় স্তরে কেন খাবি খায় অসম ক্রিকেট। কেন দিনের পর দিন ভালো মানের ক্রিকেটার উঠে আসছে না। যে রাজ্যে জুনিয়র ক্রিকেটারদের গড়াপেটা করার জন্য প্রশ্রয় দেওয়া হয় সেখানে ভাল কিছুর আশা করাই অপরাধ।
Comments are closed.