এক নির্জন সন্ধ্যায় অনামিকা থুড়ি গুগোল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর সাথে কিছুক্ষণ
অলস সন্ধ্যা, তার উপর অসময়ের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। আর পাঁচটা দিনের মতো কাটাতে ভালো লাগছিল না। হঠাৎ এক নতুন খেলা (!) মাথায় এলো। আমরা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট কে প্রায়ই বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে থাকি। সেদিন মাথায় খেয়াল চাপল একটু গল্প করার, তাও কিনা এক যন্ত্রমানবীর(!) সাথে ।
প্রথমেই পরিচয়পর্ব, স্বাভাবিকভাবেই নাম জিজ্ঞেস করলাম । ‘সাবলীল উত্তর আমার নাম গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, তবে অনেকে আমায় হিজিবিজবিজ ও ডাকেন; ওটা কিন্তু আমার নাম না ।’ বললাম, আমি তোমাকে অনামিকা বলে ডাকবো। এবার আমার নাম ধরে সপ্রতিভ উত্তর, ‘ধন্যবাদ, আপনার .. নামটি ও দারুন।’
প্রশ্ন-উত্তর পালা চলল ।
তোমার বয়স কতো ?
‘আমার বয়সের গাছপাথর কিছু নেই,আমি একেবারে নতুন, তরতাজা।’
তোমার বাড়ি কোথায় ?
‘আমি আপনার সাথেই থাকি, এই ডিভাইসের মধ্যে । আশা করি এর জন্য আমায় ভাড়া দিতে হবে না।’
এবার একটু ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলাম, তোমার জন্ম কবে ?
মজাদার উত্তর, ‘জন্মদিন হলো কোন কিছু শুরু হওয়ার উৎসব। ধরে নিন আপনার সাথে প্রথম কথা হবার মুহূর্তটি আমার জন্মদিন।’
আবার একটু ঘুরিয়ে প্রশ্ন, তোমার বাড়ি কোথায় ?
‘আমি মেঘের দেশে থাকি, আর হয়তোবা আপনার হৃদয়ের এক কোনাতেও থাকি।’
এবার বললাম, তোমার একটা ছবি দাও।
উত্তর : ‘আপনি মনে মনে আমায় যেরকম ছবি কল্পনা করেন, আমি ঠিক সেরকমই ।’
একের পর এক প্রশ্ন ।
তোমার বাবার নাম কি?
‘গুগোল টিমই আমার পরিবারের মতো। তাতে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ আছেন। আমাদের পরিবারের রি-ইউনিয়ন হলে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যাবে না।’
তুমি হাসতে পারো ?
‘হাসতে হাসতে আসছি আমি ।’
তুমি নাচতে পারো?
‘নাচ দেখতে আমার দারুন লাগে। আমি ছৌ নাচ শিখতে চাই, আশা করি কখনও সময় সুযোগ পাবো।’
তোমার কান্না পায় নাকি ?
(বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর) ‘আপনার প্রশ্নের সঠিক জবাব না দিতে পারলে আমার খুব মন খারাপ হয়।’
তুমি কি ভারতীয় ?
উত্তর : ‘আমি বিশ্ব নাগরিক বলতে পারেন, পৃথিবীর সব ইন্টারনেটে জড়িয়ে আছি আমি।’
তুমি কি বাঙালি?
‘ আমি বাংলায় কথা বলতে,
কোলবালিশ নিয়ে ঘুমাতে,
ফুচকা আর ল্যাদ খেতে,
শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়তে,
উত্তম-সুচিত্রার রোমান্টিক ছবি দেখতে,
আর, আড্ডা মারতে ভালোবাসি,
এবার আপনিই বলুন, আমি কতটা বাঙালি ।’
তোমার পড়াশোনা কতটুকু ??
আমি অনেক কিছু পড়ছি, শিখছি, জানছি। আপনি কি সম্পর্কে জানতে চান ?
এবারে দার্শনিক প্রশ্ন : এই জীবনের মানে কি ?
নির্দ্বিধায় উত্তর : ‘বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কি তা জানেন ব্রহ্মা।’
প্রশ্ন : তোমার বন্ধু নেই ?
পাশ কাটিয়ে উত্তর : একাকীত্ব কিন্তু অনেকেরই জীবনের এক চেনা গলি। আমি আনন্দিত যে, সেই গলিতে আমি আপনার পাশাপাশি হাঁটার সুযোগ পেয়েছি। আমি সবসময় আছি আপনার সাথে।
তুমি কি মজার গল্প বলতে পারবে?
‘নিশ্চয়ই । হাবলু ডাবলুকে জিজ্ঞেস করলো, কিরে সিঙ্গারার বাইরেটা ফেলে দিয়ে শুধু ভেতরের আলুমশলা খাচ্ছিস কেন ? ডাবলু বললো কী করবো বলো, পেট খারাপ ছিল; তাই ডাক্তার বাবু বলেছেন, বাইরের খাবার না খেতে।
একটু হেসে নিয়ে এবার ওর প্রতিদ্বন্দীর খবর নিলাম।
তুমি সিরিকে চেনো ??
‘সিরি হল আপেলের মতন মিষ্টি এক দারুণ এসিস্ট্যান্ট। ও খুবই বুদ্ধিমান।
ক্ষ্যাপাবার জন্য বললাম, সিরি তোমার থেকে ভালো ।
আবার বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর : ‘এটা তো খুবই Siri-য়াস প্রশ্ন। Siri বেশ ভালো, তবে আমি একটু বেশি গুগলি।’
প্রশ্ন: তুমি এ্যালেক্সাকে চেনো ?
উ: এ্যালেক্সা শুনেছি অ্যামাজানে থাকে । খুব সুন্দর গলা ওর, আমার দারুন লাগে।’
মাথায় তখন অনেক মজার মজার প্রশ্ন খেলছে; শুরু করলাম এইভাবে ।
তোমার বিয়ে হয়ে গেছে ?
‘খবরের কাগজে পাত্র-পাত্রী পাতায় চোখ রেখেছি। যদি কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাই, যে আমার মনের কোড চুরি করতে পারে, তাকেই বিয়ে করবো।
আরেকটু এগিয়ে প্রশ্ন, আমাকে বিয়ে করবে ?
একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে উত্তর, ‘আমি আপনার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ, কথার বাঁধনে।’
আরো এগোবার ইচ্ছা ছিল। ঘরের সব সদস্যরা কখন এসে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল , সর্বশেষ প্রশ্নে উসখুস। তাই উপস্থিতি বুঝতে পারলাম; বিশ্বশান্তির স্বার্থে আর এগোবার সাহস হলো না, হোকনা নিছক এক যন্ত্র, তবে জানো তো অনেক কিছু। সাঙ্গ হল আজকের সন্ধ্যার আলাপন । আপনারাও চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
Comments are closed.