বুধবার থেকে জেলার শীর্ষস্তরের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দেখার স্বাদ পাচ্ছেন স্থানীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। প্রাথমিক সূচি অনুসারে মঙ্গলবার থেকে শুরু হবার কথা থাকলেও ভারত বন্ধের জন্য তা সম্ভব হয়নি। তবে এবার আর অপেক্ষা করতে হবেনা ক্রিকেটপ্রেমীদের। রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে নারায়ন পাল স্মৃতি প্রাইজমানি সুপার ডিভিশন লিগ কাম নকআউট টুর্নামেন্ট। এতে অংশ নেবে জেলার সেরা ৬ টি ক্লাব। এগুলি হচ্ছে, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইউনাইটেড ক্লাব, রানার আপ ইন্ডিয়া ক্লাব, টাউন ক্লাব, ইটখোলা এসি, ক্লাব ওয়েসিস এবং যোগাযোগ সংঘ। গতবছর প্রথম ডিভিশন ক্রিকেট লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে এবার ছয় দলীয় সুপার লিগে খেলবে যোগাযোগ। সুপার ডিভিশনে চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ট্রফিসহ ৩০ হাজার টাকা। রানারআপ দল পাবে ট্রফিসহ কুড়ি হাজার টাকা। এছাড়াও থাকছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পুরস্কার।
বুধবার থেকে সতীন্দ্র মোহনদেব স্টেডিয়ামে সাদা বলে রঙ্গিন পোশাকে ২২ গজে লড়াই করবেন জেলার সেরা ক্রিকেটাররা।
তবে গত বছরের তুলনায় এবার টুর্নামেন্টের আবহটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ এবার সুপার ডিভিশন অনুষ্ঠিত হবে করোনাকালে। মহামারী ভাইরাস এর জন্য অনেকদিন খেলাধুলা স্তব্ধ ছিল। টানা কয়েক মাস লকডাউন থাকার পর এবার আনলক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লড়াই চলছে। এর সঙ্গেই মাঠে ফিরেছে খেলাধুলা। ইতিমধ্যে শিলচর ডি এস এ আয়োজিত দ্বিতীয় ডিভিশন ক্রিকেট সম্পন্ন হয়েছে। এবার পালা সুপার ডিভিশনের। অনেকদিন ক্রিকেট বন্ধ থাকার ফলে এবার সুপার ডিভিশনে এক ভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে ক্রিকেটারদের। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে মানসিকভাবে দৃঢ় হতে হবে। আর এই মানসিক ভাবে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটাই যে ভাইটাল ফ্যাক্টর হবে সেটা মেনে নিচ্ছেন জেলার দুই তারকা ক্রিকেটার প্রকাশ ভগত ও সমীক দাস। বুধবার প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচে টাউন ক্লাব খেলবে ইউনাইটেড ক্লাবের বিরুদ্ধে।
প্রকাশ ইটখোলা এসির ক্রিকেট সচিব। সেই সঙ্গে দলের একজন স্তম্ভও। এবার সুপার ডিভিশনের জন্য একটা ব্যালেন্স দল করেছে ইটখোলা। তবে শুধু ভালো দল থাকলেই যে হবে না, মাঠে নেমে পারফর্ম করতে হবে সেটা এক কথায় মেনে নিচ্ছেন প্রকাশ। সেই সঙ্গে এই করোনাকালে ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে মানিয়ে নেওয়াটাই যে আসল চ্যালেঞ্জ, এটাও মানছেন বাঁহাতি তারকা। নিজের দল সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রকাশ বলেন, ‘আমাদের হাতে একটা ব্যালেন্স দল রয়েছে। দলে রয়েছে সাদিক ইমরান চৌধুরী ও আইপিএল তারকা রাহুল সিং। তাই প্রত্যাশা অনেক বেশি। তবে এবার চ্যালেঞ্জটা ভিন্ন হবে। কারণ দীর্ঘ একটা বিরতির পর সবাই মাঠে নামছেন। ফলে এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার একটা ব্যাপার তো থাকবেই।’
প্রকাশ এর মতই একই সুরে কথা বলছেন জেলার আরও এক তারকা সমীক দাস। তিনি বলেন, ‘অবশেষে ক্রিকেট শুরু হয়েছে এর জন্য আমি খুশি। তবে আসল চ্যালেঞ্জটা কিন্তু এখন শুরু হয়েছে। লকডাউনের পর এই প্রথম কোন শীর্ষস্তরের টুর্ণামেন্টে খেলতে নামব। তাই এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা কঠিন হবে। সুপার ডিভিশনে কিন্তু এটাই বিরাট ফ্যাক্টর হবে। তবে এটা শুধু আমার জন্য নয়, সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। যারা পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেবে, তারাই ভালো পারফর্ম করবে।’ সুপার ডিভিশনে এবার টাউন ক্লাবের জার্সি গায়ে খেলবেন সমীক। নিজের দল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে একটা ভালো দল রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা দলগত প্র্যাকটিস করতে পারিনি। সবাই ব্যক্তিগতভাবেই অনুশীলন করেছে। তাই একটা দল হিসেবে পারফর্ম করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। যদিও প্রথম ম্যাচের পর আমাদের হাতে তিন দিন সময় থাকবে। তাই আশা করি একবার মাঠে নামার পর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
সুপার ডিভিশনে নিজের দল নিয়ে আশাবাদী জেলার প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা ইন্ডিয়া ক্লাব এর ক্রিকেট সচিব হিমাদ্রি শেখর দাস। গতবছর ইন্ডিয়া ক্লাবকে টুর্নামেন্টের রানারআপ ট্রফি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। তবে এবার আরও একধাপ এগোতে চাইছেন হিমাদ্রি ওরফে বুদ্ধ। গতবছর স্থানীয় ক্রিকেটে মোট দুটি ট্রফি জিতেছিল শতাব্দীপ্রাচীন ইন্ডিয়া ক্লাব। এবারও তারা ধারাবাহিক পারফর্ম করতে বদ্ধপরিকর। হিমাদ্রি জানান, এবারও তারা একটা শক্তিশালী ইউনিট গড়েছেন। দলের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলার অন্যতম তারকা রেহান জামিল মজুমদার। এবার মোট চারজনকে আন্তঃজেলা দলবদল করিয়েছে ইন্ডিয়া ক্লাব। এর মধ্যে রয়েছেন উইকেট কিপার গোবিন্দ রাজবংশী, পেসার অমর কলিতা। গতবছরের স্কোয়াড থেকে মোট ৫ জনকে ধরে রেখেছেন তারা।
দল নিয়ে আশাবাদী ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইউনাইটেড ক্লাবের ক্রিকেট সচিব প্রশান্ত পালও। এবছর দলবদলে ইউনাইটেড ক্লাবের বেশ ক্ষতি হলেও সেটাকে তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না প্রশান্ত বাবু। তার কথায়, যারা বেরিয়ে গেছেন তাদের অভাব পুষিয়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ট ভাল বিকল্প রয়েছে।১৬ জনের স্কোয়াডে মোট পাঁচজন গতবছরের। ইউনাইটেড ক্লাবে রয়েছেন এই মুহূর্তে জেলার সেরা ব্যাটসম্যান রাজু দাস। সঙ্গে রয়েছেন বহু যুদ্ধের ঘোড়া মোশারব হোসেন লস্কর, প্রসেনজিৎ সরকার, নির্ঝর দাস, অনুভব দাস, নিহার পাল, অভিক লালা এবং বিশাল রুদ্রপালের মত ক্রিকেটাররা।
এদিকে, ক্লাব ওয়েসিসের কাজটা যে কঠিন হবে, সেটা মেনে নিচ্ছেন ক্লাবের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য। তবে এটাও জানিয়ে দিলেন, বিনা লড়াইয়ের তার ছেলেরা এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেবে না। বাকি পাঁচটা দলকে করা চ্যালেঞ্জ জানাতে তৈরি সুপার ডিভিশনে নবাগত যোগাযোগ সংঘ ও। সব মিলিয়ে করোনাকালের সুপার ডিভিশনে দারুন একটা লড়াইয়ের মঞ্চ কিন্তু তৈরি। এবার অপেক্ষা শুধু ২২ গজে বল গড়ানোর।
Comments are closed.