Also read in

শিলচর মেডিক্যালে চালু হলো উত্তর-পূর্বের সবথেকে বড় শবগৃহ; "সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল করতে হর্ষবর্ধনের সঙ্গে কথা বলেছি," রাজদীপ

শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গড়ে উঠেছে উত্তর-পূর্বের সবথেকে আধুনিক এবং বড় মাপের শবগৃহ। শুক্রবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হয়। এতে অংশ নেন সাংসদ রাজদীপ রায়, উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর, জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি, বিধায়ক মিহির কান্তি সোম, অতিরিক্ত পুলিশসুপার জগদীশ দাস সহ অন্যান্যরা। এদিন ফিতা কেটে অতিথিরা নতুন শবগৃহ চালু করেন এবং এরপর একটি ছোটখাটো অনুষ্ঠান রাখা হয়। এতে অংশ নিতে গিয়ে সাংসদ রাজদীপ রায় জানান, শিলচর মেডিক্যালকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলতে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার কথায় সম্মতি দিয়েছেন এবং শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষের দেওয়া ডিপিআর-য়ের ওপর ভিত্তি করে আগামীতে কাজ হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই হাসপাতালের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া নতুন শবগৃহ নিয়ে বলেন, “২ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা খরচ করে এই শবগৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে অনেক বড় জায়গা রয়েছে। মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্যে অপেক্ষাগার এবং বিশ্রামের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যারা পড়াশোনা করছেন, তাদের অনেক সময় মৃতদেহ নিয়ে এসব কাজ করতে হয় সেক্ষেত্রে এই নতুন শবগৃহ অনেক বেশি সুবিধা পাইয়ে দেবে। উত্তর-পূর্বের সবথেকে বড় শবগৃহ শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বানিয়ে রাজ্য সরকার অবশ্যই একটি বার্তা দিয়েছেন, তারা আমাদের সমান গুরুত্ব দেন। হাসপাতাল চত্বরে অনেক নতুন কাজ চলছে এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো চালু হবে বলেই আমার আশা।”

অনুষ্ঠানে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ দেবীদাস দত্ত, সন্দীপ স্বপন ধর, এসকে নন্দী পুরকায়স্থ, গিরিধারী কর, প্রাক্তন সহকারী অধ্যক্ষ শেখর চক্রবর্তী, অরুন দাস সহ অন্যান্যদের বিশেষ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি ছিলেন সাংসদ রাজদীপ রায় যিনি নিজেও হাসপাতালের প্রাক্তন ছাত্র এবং বর্তমানে চিকিৎসক। তিনি ভাষণের শুরুতেই তার শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানান এবং বলেন, “কিছুটা আশ্চর্য হচ্ছে নিজের হাসপাতালে এভাবে মুখ্য অতিথি হয়ে আমন্ত্রণ পেয়ে। এই হাসপাতালকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হিসেবে উন্নীত করতে ডিপিআর পাঠিয়েছেন অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া। গতবছর করোনা পরিস্থিতি থাকায় কাজ অনেকটাই পিছিয়ে গেছে, তবে সম্প্রতি আমি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এব্যাপারে কথা বলেছি। কেন্দ্রের হোক বা রাজ্যের, যে টাকা শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উন্নতির জন্য খরচ করা হবে, সেটা জনগণের দেওয়া কর থেকে আসে। আমাদের সরকার জনগণের টাকা জনগনের সেবায় অনেক বেশি পরিমাণে খরচ করতে পছন্দ করে। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর আমি আশাবাদী, যেসব বিভাগ শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেই, সেগুলো গড়ে তুলতে বেশিদিন সময় লাগবে না। অবশ্যই এখন সারাদেশে কোভিড ভ্যাকসিন প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকটাই ব্যস্ত। তবু এর ফাঁকে আমাদের কথা শুনেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন, তিনি আগামীতে আমাদের আবদারগুলো মেনে নেবেন বলে আশা করছি।”

হাসপাতালের অধীক্ষক ডাঃ অভিজিৎ স্বামী জানান, শিলচর মেডিক্যালে বছরে তিনশোর বেশি মৃতের ময়নাতদন্ত হয়। তবে গত বছরে এই সংখ্যা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল, অবশ্যই এর অন্যতম কারণ ছিল করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর হার। এই নতুন শবগৃহ নির্মাণ হওয়ায় বিভিন্ন দিক দিয়ে সমাজের লাভ হবে।”

উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর বলেন, “স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তৎক্ষণাৎ পরিকাঠামোগত উন্নতি করিয়েছিলেন। এবার উত্তর-পূর্বের সবথেকে বড় শবগৃহ এই হাসপাতালে বানানো হয়েছে। আগামীতে ৫০০ শয্যার একটি বহুতল বিল্ডিং গড়ে উঠছে। ভবিষ্যতে আরো অনেক বড় পরিকল্পনা হবে এবং একদিন শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উত্তর-পূর্বের অন্যতম উন্নত এবং বড় হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।”

পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশসুপার জগদিশ দাস অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, “শবগৃহ পুলিশ বিভাগের কাছে অত্যন্ত জরুরি একটি ব্যাপার, কেননা অনেক জটিল সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছথেকে আমাদের সহায়তা নিতে হয়। এই নতুন ভবনে অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্ভব হবে, যেটা জটিল সমস্যা সমাধানে পুলিশ বিভাগের শক্তি বৃদ্ধি করবে।”

জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি, উধারবন্দের বিধায়ক মিহির কান্তি সোম, প্রাক্তন বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা সহ অন্যান্য অতিথিরা অনুষ্ঠানে নিজেদের কথা তুলে ধরেন।

Comments are closed.