ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রাথমিক লক্ষণ ধরেই চিকিৎসা চলছে এক রোগীর, জানালেন মেডিক্যালের অধ্যক্ষ
গতকাল সন্ধ্যায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে পরপর কয়েকটি পরস্পরবিরোধী বার্তা জনসমক্ষে এসেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মী প্রথমে বলেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজনের দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস পাওয়া গেছে, মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ এই কথা অস্বীকার করেন। জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীটি বেশি কাজ করতে গিয়ে মাথা ঠিক রাখতে পারছেন না, তাই ভুলভাল তথ্য তুলে ধরছেন। তবে রবিবার দুপুরে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন হাসপাতালের এক ব্যক্তির প্রাথমিক পরীক্ষায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ চোখে পড়েছে; সে অনুযায়ী তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তবে এখনও মূল পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি। করিমগঞ্জের এই ব্যক্তিটি আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন। তার শরীর দুর্বল তবে যদি শেষমেষ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস পাওয়া যায়, তবু সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
এদিন ডাঃ বাবুল বেজবরুয়ার সঙ্গে বসেছিলেন জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি, শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় এবং মেডিকেলের সহকারী অধ্যক্ষ ডাঃ ভাস্কর গুপ্ত।
ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া বলেন, “একজন রোগী ৫ মে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ১১ মে তার রিপোর্ট নেগেটিভ হয় কিন্তু শ্বাসকষ্ট ছিল। পরবর্তীতে শিলচরের এক বেসরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয় সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে কিছুদিন পর আবার অন্য এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। শেষমেষ গত ২৬ মে শ্বাসকষ্ট সহ চোখের সমস্যা নিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। তার শরীরে অনেক বেশি পরিমাণে স্টেরয়েড গেছে, ফলে দুর্বলতা অনেকটাই রয়েছে। তার এক চোখে দেখতে না পাওয়া এবং একটা নাক বন্ধ থাকার পেছনে যেসব লক্ষণ দেখা গেছে, তার সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণের মিল রয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষায় তার শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ চোখে পড়েছে। তবে এখনও বেশ কয়েকটি পরীক্ষার রেজাল্ট বাকি রয়েছে, এগুলো আসতে আরও দুই-তিন দিন লাগবে। লোকটি আগে থেকেই দুর্বল, ফলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। তবে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অতীতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা হয়েছে এবং রোগী সুস্থ হয়েছেন।”
সাংসদ রাজদীপ রায় যিনি নিজে একজন চিকিৎসক, এই বিষয়ে বলেন, “ভারতবর্ষে বিভিন্ন রাজ্যে হাজার হাজার লোক ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং সুস্থ হচ্ছেন। শিলচর মেডিকেল কলেজে এই পরিস্থিতিতে একজন রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কিছু লক্ষণ চোখে পড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বিভাগের সেরা ডাক্তারদের নিয়ে একটি বিশেষ দল গঠন করেছেন এবং তারা রোগীর চিকিৎসায় পুরোপুরি নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের ও যোগান রয়েছে এবং বাকিটা স্বাস্থ্য বিভাগ ইতিমধ্যে জোগান দিচ্ছেন। রোগীর শরীরের দুর্বলতা রয়েছে তাই আমরা একটু আতঙ্কে রয়েছি। কিন্তু কোনভাবেই জনমনে এনিয়ে অযথা আতঙ্ক রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে আমি মনে করিনা। ফাঙ্গাস আমাদের বিভিন্নভাবে হামলা করে এবং এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সাধারণ সময়ে অনেক ব্যক্তির শরীরে পাওয়া যায়, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এর প্রভাব বেশি হয়। যে ব্যক্তিটি আক্রান্ত হয়েছেন তিনি শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার আগের তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন। তার পুরো মেডিক্যাল হিস্ট্রি সংগ্রহ করা হয়েছে এবং যাচাই করে দেখা হচ্ছে কিভাবে খুব সাবধানে চিকিৎসা প্রদান করে তাকে সুস্থ করে তোলা যায়। অতিরিক্ত স্টেরয়েড বা বিষাক্ত অক্সিজেনের ফলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দেখা দিতে পারে। অক্সিজেনের ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি সাবধান রয়েছি, যাতে কোনও বিষাক্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করা সম্ভব নয়। রোগীর শরীরে ডায়াবেটিস রয়েছে এবং তাকে স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন, তবে কোনভাবেই জনমনে যাতে এটা নিয়ে ভুল বার্তা না যায় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে না পড়ে।”
শনিবার গভীর রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম রিপোর্ট পেয়েছেন, যাতে লেখা রয়েছে একজন ব্যক্তি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এর আগেই স্বাস্থ্য বিভাগের এক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী ভিডিও বার্তার মাধ্যমে রোগীর নাম ঠিকানা বয়স ইত্যাদি সমস্ত তথ্য জনসমক্ষে তুলে ধরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জানান। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ এই বিষয়টিকে একেবারে অনৈতিক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা স্বাস্থ্যবিভাগের ওই আধিকারিককে কোন তথ্য তুলে ধরিনি, তবে আমাদের যখন সন্দেহ হয় তখন বিভাগীয় স্তরে এব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল, সেখানে দেওয়া তথ্য ঐ কর্মচারীটি সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরলেন। একজন লোক আক্রান্ত হওয়ার পরেও তার নাম জনসমক্ষে তুলে ধরাটা অন্যায়।”
জেলাশাসক কীর্তি জাল্লিকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “যে কর্মচারীকে আমরা সংবাদমাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরার জন্য দায়িত্ব দিয়েছি তিনি আরো অন্যান্য কিছু কাজে যুক্ত রয়েছেন। এত বেশি চাপের ফলে তার মাথা ঠিক ছিলনা। তিনি আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে পারতেন, তবে সেটা করেননি, ফলেই ভুল সময়ে ভুল বার্তা জনসমক্ষে চলে গেছে। এবার যখন শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন করোনা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হওয়ার পর এক ব্যক্তির শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ দেখা গেছে। যদিও এটা ছোঁয়াচে রোগ নয় তবু তাকে অন্য রোগীর থেকে আলাদা রাখা হয়েছে এবং বিশেষ একটি চিকিৎসকের দল তার দেখাশোনা করছেন। যে বার্তা জনসম্মক্ষে চলে গেছে, সেটা এখন আর ফেরানো সম্ভব নয়, তবে আমরা আবারও বলছি আতঙ্কিত হবেন না।”
হাসপাতালের সহকারী অধ্যক্ষ ডাঃ ভাস্কর গুপ্ত বলেন, “করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে আমরা একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি, বেশিরভাগ রোগী দেরিতে চিকিৎসার জন্য আসছেন ফলে মৃত্যুর হার বেশি। যে ব্যক্তির শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ দেখা গেছে, তার অন্যান্য সমস্যা রয়েছে, ফলে চিকিৎসা অত্যন্ত সাবধানে করা হচ্ছে। ২০১৩ সালে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক ব্যক্তির শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস পাওয়া গেছিল। তিনি পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাসের সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ভয় একসঙ্গে জনমনে প্রবেশ করেছে ফলে আতঙ্ক দেখা দিচ্ছে। আমরা সর্বতাবস্থায় জনগণকে সচেতন থাকতে অনুরোধ রাখছি।
Comments are closed.