Also read in

নিগৃহীত মেডিক্যাল কলেজের চূড়ান্ত বর্ষের দুই ছাত্র, তীব্র ক্ষোভ অধ্যক্ষ ও ছাত্র-ছাত্রীদের

কর্তব্যরত সিআইএসএফ জওয়ানের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজের চূড়ান্ত বর্ষের দুই ছাত্র। লাঠির আঘাতে ছাত্র দুজন রক্তাক্ত হয়েছেন এবং তাদের গায়ে গভীর ক্ষত দেখা দিয়েছে। চূড়ান্ত অসন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বাবুল কুমার বড়ুয়া এবং পড়ুয়ারা। অধ্যক্ষ এব্যাপারে পুলিশ সুপার মানবেন্দ্র দেবরায় এবং জেলাশাসক কীর্তি জল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এমবিবিএস চূড়ান্ত বর্ষের দুই ছাত্র, আব্দুল সাত্তার এবং মোহাম্মদ আব্দুল কাদির লস্কর এদিন চূড়ান্তভাবে নিগৃহীত হয়েছেন। পুলিশের লাঠির আঘাতে তাদের রক্তাক্ত অবস্থা এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত দেখা দিয়েছে। এদিন দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ চত্বর থেকে বয়েজ হোস্টেলে যাবার একটি বিকল্প রাস্তা রয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাড়া থাকায় দুই ছাত্র রাস্তাটি ব্যবহার করেছিল এবং তাদের আটকে প্রথম অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয় সিআইএসএফ জওয়ান। দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি একসময় উত্তেজনাপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং জওয়ানটি ছাত্র দুজনকে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে।

শিলচর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়াও ঘটনায় চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ঘটনার খবর পাওয়ার পর তিনি আক্রান্ত ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করেন। তাদের শারীরিক অবস্থা দেখে তিনি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সুপার মানবেন্দ্র দেবরায় এবং জেলাশাসক কীর্তি জল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করে এব্যাপারে জানান। পাশাপাশি সিআইএসএফ জওয়ানটিকে ডেকে পুরো ঘটনার বৃত্তান্ত জানতে চান। জওয়ানটি জানায়, ছাত্ররা নিয়ম ভেঙেছে বলে সে কাজটি করেছে। তিনি বলেন, যদি ছাত্ররা ভুল করে থাকে তাহলে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ অথবা পুলিশের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের কাছে জানাতে পারতেন জওয়ানটি। তবে আইন হাতে তুলে নিয়ে ছাত্রদের এভাবে শারীরিক হেনস্থা করার অধিকার তার ছিল না।

পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনায় মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। জওয়াটিকে অতিসত্বর হাসপাতালের ডিউটি থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান, ছাত্ররা নিয়ম ভেঙেছিল বলেই ঘটনাটি ঘটেছে। সিআইএসএফ জওয়ানটি তার দায়িত্ব পালন করছিলেন, তবে এভাবে মারধর করার ঘটনাকে পুলিশ সমর্থন করে না। ছাত্রদের নিয়ম ভাঙ্গার ঘটনা এই প্রথম নয়, এলাকাটি বন্ধ করে দেওয়ার পর বারবার এই ছাত্ররা যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি ব্যবহার করেছেন। আমরা প্রত্যেকের সুরক্ষার জন্যই কাজ করছি, ফলে বারবার এধরনের ঘটনায় সিআইএসএফ জওয়ানটি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাকে আমরা আপাতত হাসপাতালের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিচ্ছি। তবে হাসপাতালে ছাত্রদেরও আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিৎ।

আব্দুল সাত্তার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা প্রথমে সিআইএসএফ জওয়ানটিকে অনুরোধ করে, তাদের তাড়া রয়েছে এবং আপাতত যেতে দেওয়া হোক। তবে জওয়ানটি তাদের গালাগাল দিতে শুরু করে এবং ভয় দেখায় যে টেনেহেঁচড়ে স্থানীয় থানায় নিয়ে লকআপে বন্দী করবে। অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দেওয়ায় তাদের অপমান বোধ হয় এবং তারা এর প্রতিবাদ জানায়। হঠাৎ করেই জওয়ানটি তাদের ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করে। তার কথায়, “আমরা বারবার আমাদের কার্ড দেখিয়ে অনুরোধ করি যাতে এভাবে মারধরও করা না হয়। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে হাসপাতাল চত্বরেই এধরনের ব্যবহার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”

ঘটনায় মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদ সহ আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্যরাও সোচ্চার হয়েছেন। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং অতিসত্বর জওয়ানটির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানিয়েছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এধরনের ঘটনা না ঘটে এব্যাপারে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

Comments are closed.