Also read in

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের 'কোভিড যোদ্ধা' সম্মান পাচ্ছেন শিলচর মেডিকেলের ডাঃ ঋতুরাগ ঠাকুরিয়া

জাতীয় চিকিৎসক দিবস উপলক্ষে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অসমের ছয়জন চিকিৎসককে কোভিড যোদ্ধা হিসেবে বিশেষ সম্মান প্রদানের ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে বরাক উপত্যকা থেকে একমাত্র রয়েছেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ ঋতুরাগ ঠাকুরিয়া। বৃহস্পতিবার বিকেলে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ৬ জন সম্মান প্রাপকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

বরাক বুলেটিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় ডাঃ ঋতুরাগ ঠাকুরিয়া নিজের অনুভূতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এই কঠিন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি বিশেষ অবদান রেখেছি এটা বলা ঠিক হবে না। অবশ্যই ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরও দলকে সম্মান দিয়েছেন এবং যেহেতু আমি নোডাল অফিসার ছিলাম আমার নাম এতে এসেছে। এই সম্মান পেয়ে আমি অত্যন্ত গর্বিত এবং উৎসাহিত। আমার সম্মানটুকু হাসপাতালে প্রত্যেক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। আমরা সবাই মিলে ভালো কাজ করেছি বলেই এখন অনেক ভালো পরিস্থিতি এসে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালটি।”

গত বছর যখন করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয় তখন শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিকাঠামোগত দিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। এছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে অযথা ভয় ছিল এবং সচেতনতা অনেকটাই অভাব দেখা দিয়েছিল।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রথম পর্যায়ে আমাদের পরিকাঠামোগত পরিস্থিতি এতটাই পিছিয়ে ছিল সেখানে দাঁড়িয়ে রোগীরা এলে অনেক আতঙ্ক হত। তবে চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যেকে নিজের সেরাটা তুলে ধরে পরিশ্রম করেছেন এবং আমরা পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পেরেছি। রাজ্য সরকার তড়িঘড়ি পরিকাঠামোগত উন্নতির দিকে নজর দিয়েছেন এবং এখন শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন থেকে শুরু করে আইসিইউ শয্যা, সবগুলো রাজ্যের যেকোনো হাসপাতালে তুলনায় ভালো। গুয়াহাটিতে সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র ছাড়াও অনেক বেসরকারি কেন্দ্র রয়েছে যেখানে উন্নত চিকিৎসা সম্ভব। বরাক উপত্যকার তিন জেলায় একসময় শুধুমাত্র ভরসার জায়গা ছিল শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।”

তিনি আরও বলেন, “একসময় সাধারণ মানুষ করোনাভাইরাসকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতেন এবং এর পেছনে কারণ ছিল তাদের সচেতনতার অভাব এবং ভয়। এতে হয়তো মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা বেশি হয়েছে, কিন্তু মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছেন। এখন মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে এবং রোগীরা সময়মতো চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসায় আমরা তাদের দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারছি। এইভাবে চললে আগামীতে আরও বড় ঢেউ এলেও আমরা অনেক সহজে রোগীদের প্রাণ রক্ষা করতে পারব।”

ডাঃ ঋতুরাগ ঠাকুরিয়া মনে করেন অনেক বেশি সংখ্যায় ভ্যাকসিন প্রদানের ফলে করোনা ভাইরাসের মারণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে আসছে। তিনি বলেন, “হয়ত অনেকেই বলবেন দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও লোকে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসছেন। তবে যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণ মানুষ থেকে বেশি এবং তারা তুলনামূলকভাবে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছেন। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রত্যেক স্তরে লোকেদের ভ্যাকসিন দেওয়া চলছে এবং আগামীতে প্রায় সবাই ভ্যাক্সিনের আওতায় চলে আসবেন। এতে ভবিষ্যতে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের শরীর অনেক বেশি সক্ষম থাকবে।”

ডাঃ ঋতুরাগ ঠাকুরিয়া ছাড়াও নর্থ লক্ষীমপুরের ডাঃ তুলসী প্রসাদ চুতিয়া, গুয়াহাটির ডাঃ অনুপাল কুমার শর্মা, জোরহাটের ডাঃ উত্তম কুমার নাথ, বঙ্গাইগাওয়ের ডাঃ শুভ্রদীপ বিশ্বাস এবং তেজপুরের ডাঃ পিয়ুষ আগরওয়াল এই সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন। ডাঃ ঋতুরাগ ঠাকুরিয়া ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সম্মান পাওয়ায় শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত বোধ করছেন।

Comments are closed.