সার্জারির জন্য অর্থের প্রয়োজনে নিজের প্রিয় স্কুটি বিক্রি করলেন জেলার তারকা ক্রিকেটার রাজু দাস
গত ২৯ জুন বরাক বুলেটিনের পক্ষ থেকে জেলার তারকা ক্রিকেটার রাজু দাস এর আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছিল। অর্থের অভাবে তিনি গ্যাস এজেন্সির ডেলিভারি বয়ের চাকরি করছেন, সেই করুণ কাহিনী তুলে ধরা হয়েছিল। তবে দুঃখের বিষয়, রাজুর সেই কাহিনী দারুণ সাড়া ফেললেও আক্ষরিক অর্থে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কারণ এখনও সেই আগের মত কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছেন জেলার এই ডানহাতি তারকা ব্যাটসম্যান। বরং পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য।
গত কয়েক বছর থেকেই কাঁধে সমস্যা রয়েছে রাজুর। এ নিয়ে ভুগছেন তিনি। শিলচরের এই প্রতিভাবান ক্রিকেটার কে এই মুহূর্তে শুধু আর্থিক সংকটের সঙ্গে নয়, লড়াই করতে হয়েছে কাঁধের চোট সমস্যার বিরুদ্ধেও। ২০১৭ সালে রনজি দলের এক প্রস্তুতি ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পেয়েছিলেন রাজু। চোট গুরুতর থাকায় অসম ক্রিকেট সংস্থার পক্ষ থেকে রাজুকে গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছিল। তারপর সেখান থেকে তাকে দিল্লির এইমস-এ রেফার করা হয়। এরপর গুয়াহাটি থেকেই শুরু হয় রাজুর রিহ্যাব প্রক্রিয়া। রিহ্যাবে থাকাকালীন রাজুকে অনেক ঝড় ঝাপটা পেরোতে হয়েছে। তবে নিজের লড়াকু মানসিকতার জোরে সবকিছু পেরিয়ে চোট সারিয়ে ওঠেন ডানহাতি তারকা।
কিন্তু চোট সারিয়ে উঠলেও দুর্ভাগ্যবশত নতুন করে সমস্যা দেখা দেয় রাজুর কাঁধে। ব্যাটিংয়ের সময় সমস্যা না হলেও ফিল্ডিংয়ে থ্রো দিতে গেলে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। অফ স্পিন বোলিং করতেও সমস্যা হচ্ছিল। তাই গত দু-তিন মরশুম তিনি বোলিং ও করেননি। এই সমস্যা নিয়েই গত দু তিন মরশুম ঘরোয়া ক্রিকেটের সব ফরমেটে খেলছেন। এবং পারফর্ম করছেন রাজু। কাঁধের সমস্যা বাড়তে থাকায় এটা কাটিয়ে উঠতে আরো একবার তাকে চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হতে হয়। তারা পরামর্শ দেন সমস্যাটা কাটিয়ে ওঠা যাবে। তবে এ জন্য দরকার পড়বে একটা সার্জারির। যার খরচ পড়বে প্রায় আড়াই তিন লক্ষ টাকা। এমন একটা সময়েও ক্রিকেটেই ভরসা রেখেছিলেন রাজু। ভেবেছিলেন, ক্রিকেটের সূত্র ধরেই কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এরইমধ্যে শিলচরের ইন্ডিয়া ক্লাবের সঙ্গে তার একটা চুক্তি হয়েছে। সে অনুসারে আগামী দু মরশুমে তিনি ইন্ডিয়া ক্লাবের হয়ে খেলবেন। এর বিনিময়ে তাকে এক লক্ষ টাকা দিয়েছে ইন্ডিয়া ক্লাব।
এরপরও সার্জারির জন্য আরো অনেক টাকার দরকার। অনেক চেষ্টা করেও রাজু সার্জারির জন্য বাকি টাকা জোগাড় করতে পারেননি। চাপা স্বভাবের অভিমানী রাজু কারোর কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়ার ও পক্ষপাতী নন। তাই উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে নিজের প্রিয় স্কুটি বিক্রি করে দিলেন। রাজু বলেন, ‘দু’বছর ক্রিকেট খেলে অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে এই স্কুটিটা কিনেছিলাম। এর সঙ্গে আমার কত আবেগ জড়িয়ে ছিল। কিন্তু কি আর করবো, সার্জারির জন্য এখনো অনেক টাকা দরকার। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার বাঁচাতে হলে এই সার্জারি টা খুবই জরুরী। তাই বাধ্য হয়ে স্কুটি টা বিক্রি করে দিলাম। ভেবেছিলাম ক্রিকেটের সূত্র ধরে একটা ব্যবস্থা করে নেব। কিন্তু পারলাম না। খুবই খারাপ লাগছে।’
আগামী ১৬ আগস্ট পাটনার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন রাজু। সেখানে এক হাসপাতালে তার সার্জারি হওয়ার কথা। তবে তার আগে বেশকিছু মেডিকেল টেস্ট হবে। সেগুলোর রিপোর্ট দেখার পরই সার্জারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকরা। সার্জারিতে সাহায্যের জন্য শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থাতে একটি চিঠি দিয়েছিলেন রাজু। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য আসেনি। জেলার তারকা ক্রিকেটার জানান, সংস্থার সচিব বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং তাকে চিকিৎসার সমস্ত খরচের একটা রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থায় প্লেয়ার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ফান্ড থাকা সত্বেও কেন এখন পর্যন্ত কোনও সাহায্য পাননি রাজু। অথচ এই সময়ে তার অর্থের সবচেয়ে বেশি দরকার।
সার্জারির জন্য শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে আসাম ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কেও ই মেইল করা হয়েছিল। তারও কোনো জবাব আসেনি। অথচ রাজু বয়স ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে রাজ্য দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাও এক দুবার নয়, একাধিকবার। ছিলেন রনজি দলের ট্রায়াল ক্যাম্পেও। ২০০২-০৩ মরশুমে আসাম দলের অনূর্ধ্ব ১৫ এক্সপোজার ট্যুরে গাজিয়াবাদ গিয়েছিলেন রাজু। সফরে ভালো পারফর্ম করেছিলেন। যার ফলে ডাক পেয়ে যান অনূর্ধ্ব ১৫ রাজ্য দলেও। তবে মেডিকেল টেস্টে আটকে যান। এরপর অনূর্ধ্ব ১৭ আসাম দলের হয়ে দুবার বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে খেলেন। অনূর্ধ্ব ১৯ রাজ্য দলের জার্সি গায়ে বিনু মাঁকড় ও কোচবিহার ট্রফিতেও খেলেছেন শিলচরের ডানহাতি স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। ২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব ২৩ রাজ্য দলের সদস্য ছিলেন। এতসবের পরও একটা সরকারি চাকরি জোটেনি রাজুর। তার মধ্যে তার পরিবার আর্থিকভাবে তেমন স্বচ্ছল নয়। ফলে জীবনের সংগ্রামে প্রতিটি মুহূর্তে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে জেলার এই তারকা ক্রিকেটারকে।
Comments are closed.