নক্ষত্রপতন! না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন জেলার প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটার অলক সরকার
অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন জেলার প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটার অলক সরকার। গত দুবছর থেকে কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন প্রাক্তন এই ডানহাতি অলরাউন্ডার। গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। তারাপুরের বাড়িতে চলছিল চিকিৎসা। দেওয়া হচ্ছিল অক্সিজেন। তবে শনিবার দুপুর ১ টা কুড়ি মিনিটে অলক সরকারের সব লড়াই শেষ হয়ে যায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৭। রেখে গেছেন স্ত্রী ও এক ছেলে সহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন। কয়েক বছর আগেই অলক সরকারের বড় ভাই তথা জেলার প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকারও না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন।
এদিন তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই ক্রীড়া মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রাক্তন তারকাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সবাই ছুটে যান তারাপুরের বাড়িতে। গত দু’বছর থেকেই শয্যাশায়ী ছিলেন অলক সরকার। তবে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছিলেন। কয়েক মাস আগে তার কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু হার্টের সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি।
একটা সময়ে ক্রিকেটের ২২ গজে দাপিয়ে বেরিয়েছেন জেলার তারকা অলরাউন্ডার অলক সরকার। তার মত ধারাবাহিক অলরাউন্ডার শিলচরের ক্রিকেটে খুব কমই দেখা গেছে। ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাট হোক না কেন, সত্যিকার অর্থে তিনি ছিলেন একজন ম্যাচ উইনার। শুধু জেলাস্তরে নয়, গোটা বরাক উপত্যকার ইতিহাসে অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিশেষ জায়গা জুড়ে ছিলেন এই ডানহাতি অলরাউন্ডার। ২০০৭ সালে অবসর নিলেও ক্লাবের জন্য তাকে মাঝেমধ্যে মাঠে নামতে হয়েছে। তবে শেষবার টাউন ক্লাবের জার্সি গায়ে ২০১৩ সালে মাঠে নেমেছিলেন অলক। মাঠ থেকে বিদায় নিলেও একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে মাঠেই ছিলেন তিনি। তবে ২০১৯ সাল থেকে হঠাৎ করেই তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে শুরু করে। একটা সময় সপ্তাহে দু’বার ডায়ালাইসিস নিতে হয়েছে প্রাক্তন তারকা অলরাউন্ডার কে।
২০২০ সালের মার্চ মাসে শারীরিক অস্বস্তির বিষয়টা অনুভব করেন অলক। দেরি না করে বাইরের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থাও করেন। বিমানের টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মহামারী করোনা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মহামারি ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে গোটা দেশে তখন লকডাউন ঘোষণা করে দেয় কেন্দ্র সরকার। ফলে সব ব্যবস্থা হয়ে যাবার পরও চিকিৎসার জন্য আর বাইরে যাওয়া হয়নি প্রাক্তন ডানহাতি তারকা’র। যার ফলে কিডনির সমস্যা আরো বেড়ে যায়।২০২১ সালের জানুয়ারিতে ব্যাঙ্গালোরে চিকিৎসা করিয়ে আসেন প্রাক্তন তারকা। এরপর থেকে নিয়মিতভাবেই সপ্তাহে দুবার তাকে ডায়ালাইসিস নিতে হত।
৮০’র দশকের শেষ ভাগে আন্তঃজেলা অনূর্ধ্ব ১৬ ক্রিকেটে প্রথমবার জেলা দলের প্রতিনিধিত্ব করেন অলক সরকার। সে ছিল শুরু। এরপর নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই বিভিন্ন স্তরে জেলা দলের হয়ে মাঠে নেমেছেন। এরই মধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করে নেওয়ায় স্থানীয় বড় বড় ক্লাবের জার্সি গায়ে দেওয়ার সুযোগ পান অলক। স্থানীয় এ ডিভিশন লিগে তিনি বিজয়ী সংঘ, তারাপুর এসি, ইন্ডিয়া ক্লাব, ইটখোলা এসি, ক্লাসমেটস ইউনিয়ন এবং টাউন ক্লাবের হয়ে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। শিলচরের ক্রিকেটে টানা কয়েক মরশুম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন অলক সরকার।
শুধু একজন ক্রিকেটার হিসেবে নয়, একজন অধিনায়ক এবং কোচ হিসেবে ও যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন অলক সরকার। কিভাবে একজন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে হয়, সে বিষয়ে অলকের জুড়ি মেলা ভার। অধিনায়ক হিসেবে সবসময়ই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে ভালোবাসতেন। জেলা স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক পারফরমেন্সের জোরে তিন-তিনবার রনজি ট্রায়ালেও ডাক পেয়েছিলেন।
সিনিয়র আন্তঃজেলা ক্রিকেটে খুব কমই এমন ক্রিকেটার রয়েছেন যাদের বোলার হিসেবে ৫ উইকেট এবং সেঞ্চুরিরও রেকর্ড রয়েছে। এ ডিভিশন ক্রিকেট লিগে বেশ কয়েকবার টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার এবং ম্যান অব দ্যা সিরিজ এর পুরস্কার পেয়েছেন অলক। মূলত একজন ডানহাতি পেসার হলেও প্রয়োজনে অফ স্পিন ও করতেন।
একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও শিলচরের মাঠে যথেষ্ট অবদান রয়েছে তার। দু বছর শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার গ্রাউন্ড সচিবের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। শিলচরের অন্যতম বড় ক্লাব টাউন ক্লাবের ক্রিকেট সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন অলক। ১৫ বছরের ও বেশি সময় এই দায়িত্বটা পালন করেছেন তিনি। টাউন ক্লাবের দল গঠন প্রক্রিয়া থেকে ক্রিকেটের সবকিছুই দেখভাল করতেন এই প্রাক্তন ডানহাতি অলরাউন্ডার। তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য মাঠ থেকে দূরে সরে যান প্রাক্তন তারকা।
শনিবার শেষ যাত্রায় তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে শিলচর ফুটবল একাডেমি, শিলচর স্পোর্টিং, টাউন ক্লাব এবং শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জেলা দলের প্রাক্তন তারকার প্রতি সম্মান জানিয়ে নিজেদের পতাকা অর্ধনমিত রেখেছে শিলচর ডি এস এ।
Comments are closed.