না, ফাইনাল ম্যাচ টা জমল না। যেমনটা প্রত্যাশা ছিল তার ধারেকাছেও পৌছতে পারল না হাইলাকান্দি গ্ল্যাডিয়েটরস ও রয়াল চ্যালেঞ্জার শিলচরের খেতাবি লড়াই। অথচ ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে দারুন একটা হাইপ তৈরি হয়েছিল। দু’দলেই ছিলেন তারকা ক্রিকেটাররা। কিন্তু এরপরও একপেশে ম্যাচ জুটলো দর্শকদের কপালে। আসলে গ্লাডিয়েটরসের সামনে তেমন চ্যালেঞ্জই খাড়া করতে পারেনি রয়াল চ্যালেঞ্জার। নিট ফল- ৪২ রানের সহজ জয় তুলে নিয়ে বরাক প্রিমিয়ার লিগ (বি পি এল) সিজন ফোরের খেতাবও ঘরে তুলল হাইলাকান্দি গ্ল্যাডিয়েটরস।
সোমবার ফ্লাড লাইটের আলোয় সতীন্দ্র মোহনদেব স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন রয়াল চ্যালেঞ্জার শিলচরের অধিনায়ক অভিষেক ঠাকুরি। ফাইনালের মত হাইভোল্টেজ লড়াইয়ে শক্তিশালী একটা ব্যাটিং লাইনআপের বিরুদ্ধে অভিষেকের এমন সিদ্ধান্ত অধিকাংশকেই চমকে দিয়েছিল। যদিও শুরুতেই বিপক্ষের অধিনায়ক কে তুলে নিয়ে ভালো সূচনা করেছিল রয়াল চ্যালেঞ্জার। কিন্তু গ্লাডিয়েটরসের মত একটা পাওয়ার প্যাকড ব্যাটিং ইউনিটকে আটকে রাখার জন্য যে বৈচিত্র দরকার সেটা চ্যালেঞ্জারের বোলিংয়ে ছিলনা। যদিও প্রথম দশ ওভারে বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের বেশ ভালই আটকে রেখেছিলেন চ্যালেঞ্জারের বোলাররা। কিন্তু ড্রিংকস ব্রেকের পর গ্ল্যাডিয়েটরস গিয়ার বদলে ফেলতেই চাপে পড়ে যায় চ্যালেঞ্জারের বোলিং ইউনিট।
এদিন ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাবার পর হাইলাকান্দি গ্ল্যাডিয়েটরসের শুরুটা কিন্তু মোটেও ভালো হয়নি। ইনিংসের শুরুতে অধিনায়ক কৃষ্ণেন্দু দাস এর উইকেট হারায় তারা। ফাইনালে শুরু থেকে ছন্দে ছিলেন না কৃষ্ণেন্দু। অধিনায়ক কে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল হাইলাকান্দির দলটি। তবে দলকে আর কোনো ক্ষতি হতে দেননি উদয়ন ও প্রীতম দেবনাথ জুটি। ইনিংসের শুরুতে কিছুটা নড়বড়ে ছিলেন প্রীতম। কিন্তু উইকেটে একবার সেট হয়ে যাওয়ার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। উদয়ন ও প্রীতম জুটি নিয়মিত স্ট্রাইকরটেট করে গেছেন। আবার একটু লুজ বল পেলেই বড় শট হাঁকিয়েছেন। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়েও দারুণ একটা ইনিংস খেলেন উদয়ন বোস। উইকেটের সব দিকেই স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটান তিনি। অন দ্য রাইজ কিছু অসাধারণ শট হাঁকান ত্রিপুরার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।
দ্বিতীয় উইকেট এর জন্য ১২১ রান যোগ করেন উদয়ন ও প্রীতম। শুরুটা ভালো করলেও মাঝের ওভার গুলোতে খেই হারিয়ে ফেলে রয়াল চ্যালেঞ্জার। লোকাল বয় সমীক দাসের তৃতীয় ওভারে দুটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে মোমেন্টাম এনে দেন উদয়ন। প্রথম দুওভার খারাপ করেননি সমীক। স্লোয়ার ডেলিভারির ভালো মিশ্রন করছিলেন। তবে তৃতীয় ওভারে তার স্ট্র্যাটিজি বুমেরাং হয়ে যায়। প্রথম ১০ ওভারে হাইলাকান্দির স্কোর ছিল এক উইকেটে ৬২। এরপরই গিয়ার পাল্টে ফেলেন উদয়ন ও প্রীতম।
নিজের ইনিংসটাকে খুব ভালো ভাবে সাজান উদয়ন। তার সঙ্গে প্রীতম দেবনাথ এর ব্যাটিং ছিল দেখার মতো। তবে ভুল বুঝাবুঝির শিকার হয়ে রান আউট হয়ে যান প্রীতম। ফিরে যাবার আগে (৫৫) ঝকঝকে হাফ সেঞ্চুরি করে যান তিনি। অন্যদিকে, ৫২ বলে ৭৫ রানের দুর্দান্ত অর্ধশত রানের ইনিংস খেলে আউট হন উদয়ন। মূলত উদয়ন ও প্রিতমের ইনিংসে ভর করে পাঁচ উইকেটে ১৬৪ রানের বড়সড় একটা স্কোর খাড়া করে নেয় হাইলাকান্দি গ্ল্যাডিয়েটরস। দুটি করে উইকেট নেন বালকৃষ্ণ ও মায়াঙ্ক রাওয়াত। শিলচরের বাঁহাতি স্পিনার রাহুল সিং তিন ওভারে কেবল ১৬ রান দিলেও ফাইনালেও উইকেট শূন্য থাকলেন। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-র পর স্লগ ওভারও বোলিং করেন রাহুল। রানের গতিতে ব্রেক লাগালেও উইকেট তুলতে পারেননি বাঁহাতি স্পিনার।
জবাবে ঝড়ের গতিতে ইনিংসের সূচনা করে রয়াল চ্যালেঞ্জার। তবে তৃতীয় ওভার থেকেই দ্রুত চিত্র বদলাতে থাকে।
গ্লাডিয়েটরসের বোলিং লাইন আপে এমন বৈচিত্র্য রয়েছে যে একই টেম্পো ধরে ব্যাট করে যাওয়া খুবই কঠিন। রয়াল চ্যালেঞ্জারও এই টেম্পো ধরে রাখতে পারল না। ত্রিপুরা এক্সপ্রেস মণিশংকর মুরাসিং কে অন দ্য রাইজ খেলতে গিয়ে সাজঘরে ফিরে যান সমীক দাস (১৬)। ভালো শুরু করেছিলেন লোকাল বয়। কিন্তু আশা জাগিয়েও ব্যর্থ হলেন। এরপর একে একে সাজঘরে ফিরে যান দীপক খতরি (৮), ইয়াসির আলী (১৮), মায়াঙ্ক রাওয়াত (৩) এবং রাজ্য দলের তারকা অভিষেক ঠাকুরি (১৩)। ৭৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে প্রচন্ড চাপে পড়ে যায় রয়াল চ্যালেঞ্জার্স। যা থেকে তারা আর বেরিয়ে আসতে পারেনি।
লোয়ার অর্ডারে সাহিল জৈন (২০), রাহুল সিং (১৬) ও বালকৃষ্ণ (১২) অবদান রাখায় ভদ্রস্থ একটা স্কোরে পৌছতে পেরেছে রয়াল চ্যালেঞ্জার। না হলে আরও বড় ব্যবধানে হারত তারা। দারুণ বোলিং করেন বাঁহাতি স্পিনার রোশন আলম (৩-১৩) ও করন ডাগর (২-১৭)।
ব্যাট হাতে দুরন্ত অর্ধশত রানের জন্য ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন গ্ল্যাডিয়েটরসের উদয়ন বোস। টুর্নামেন্টের তিন ইনিংসে মোট ১৭৮ রান করার সুবাদে সিরিজ সেরার পাশাপাশি সেরা ব্যাটসম্যানের পুরস্কার ও ছিনিয়ে নেন তিনি। সেরা বোলার নির্বাচিত হয়েছেন হাইলাকান্দির দলেরই অভিজিৎ চক্রবর্তী। টুর্নামেন্টের এমার্জিং প্লেয়ারের পুরস্কার পেয়েছেন উধারবন্দ ট্রান্সফরমার্স এর শুভম দেব। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার হাইলাকান্দির মণিশংকর মুরাসিং।
Comments are closed.