ভিলেন রাজদীপ! বিজেপি ছাড়লেন দিলীপ; বললেন, "সিন্ডিকেটের মুঠোয় রাজ্যের সরকার, অসহায় মুখ্যমন্ত্রী"
কিছুদিন আগে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ বলেছিলেন, সাংসদ রাজদীপ রায়ের জন্য তার ছেলে কণাদ পুরকায়স্থ টিকিট পাননি। একই কথা বললেন বিজেপির টিকিট থেকে বঞ্চিত শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল। কবীন্দ্র পুরকায়স্থ দল ছাড়ার পথে না গেলেও দিলীপ কুমার পাল বিজেপি সদস্য পদ ত্যাগ করেছেন এবং নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন। বুধবার দুপুর ২ টা ৪০ মিনিটে দলের রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত কুমার দাসের কাছে চিঠি লিখে তিনি তার ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। তার সঙ্গে দলের সাংগঠনিক স্তরের ২১ জন নেতা দল ত্যাগ করেছেন এবং আগামীতে আরও অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেবেন দিলীপ কুমার পাল।
বুধবার বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে যে দলের আদর্শে কাজ করেছি আজ সেই দলই আদর্শচ্যুত হয়ে গেছে। রাজ্যের বিজেপি এখন সিন্ডিকেটের হাতে এবং এর প্রমাণ হচ্ছে এই বছরের প্রার্থীর তালিকা। কাছাড় জেলার এক সীমান্তে কৌশিক রাই, অন্য সীমান্তে গৌতম রায় এবং আরেক সীমান্তে আমিনুল হক লস্করকে প্রার্থী করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই সিন্ডিকেট চক্রের প্রিয় লোক। পরিমল শুক্লবৈদ্য ভালো মানুষ, তবে তিনি মাথা নত করে বসে আছেন। তাদের চোখের বালি হিসেবে একমাত্র ছিলাম আমি, কারণ শিলচরের উপর দিয়ে সবাইকে যেতে হয়। তারা আমাকে সরিয়ে সেই রাস্তা পরিষ্কার করেছেন। সুপারির বস্তার ভেতর ঢুকিয়ে ড্রাগস সহ নানান অস্ত্রশস্ত্র পাচার হচ্ছে, আর এতে সহায়তা করছেন সিন্ডিকেটের অংশীদার বিজেপির কিছু সদস্যরা। আমি অনেকবার এই কথা বলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা শেষমেষ আমাকে সরিয়ে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ভালো লোক, কিন্তু তিনি সিন্ডিকেটের হাতে অসহায়। তার আশীর্বাদ আমার উপর রয়েছে, কিন্তু বর্তমানে বিজেপি যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে সেই দলে আমি একেবারেই বেমানান।”
গতকাল রাতে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা শিলচরে এসেছিলেন এবং দিলীপ কুমার পালের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, তিনি যেন দলবিরোধী কার্যকলাপে না গিয়ে দলের ঠিক করা প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেন। তবে বারবার চেষ্টা করলেও দিলীপ কুমার পাল হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে দেখা করেননি। এমনকি বুধবার সকালে গুয়াহাটি ফিরে যাওয়ার আগে দিলীপ কুমার পালের বাড়িতে গেছিলেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, সেখানেও দিলীপ পাল অনুপস্থিত ছিলেন। হিমন্তের কথার প্রসঙ্গ টেনে বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন আগে রাষ্ট্র, তারপরে দল, তারপর ব্যক্তি। এটা নতুন কথা নয়, আমরা প্রায় চার দশক ধরে যে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে কাজ করেছি সেখানে আমাদের আদর্শ ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়, অটল বিহারি বাজপেয়ির মতো লোক। আমরা কিছুদিন আগে দেখতে পেলাম দলের বরিষ্ঠ নেতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থ কিভাবে অসহায় হয়ে আছেন। সাংসদ রাজদীপ রায় তাকে কিভাবে দলে কোণঠাসা করে দিয়েছেন। তারা এভাবেই দলের বরিষ্ঠ নেতৃত্বকে দূরে সরিয়ে দিয়ে সিন্ডিকেট চালিয়ে যাবেন, আর আমাদের দলের আদর্শ শেখাবেন, এটা হাস্যকর। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মতো নেতারা উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন।”
কবীন্দ্র পুরকায়স্থের সুর ধরে দিলীপ কুমার পালের বয়ান, “দলের বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়েছি, গুয়াহাটিতে যখন টিকিট নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল, রাজদীপ রায় বলেছেন কাছাড় জেলার সাতটি আসনের মধ্যে অন্তত একটা আসন তাকে দিতেই হবে, সেটা হচ্ছে শিলচর। যদি তার পছন্দের প্রার্থীকে শিলচরের টিকিট না দেওয়া হয়, তিনি দল ত্যাগ করবেন বলে ভয় দেখিয়েছেন। সাংসদের সম্মান রক্ষার্থে শিলচর আসনে দ্বীপায়ন চক্রবর্তীকে প্রার্থী করা হয়েছে। আমি সিন্ডিকেটের বাটোয়ারা অংশ নেইনি বা কোন গ্যাস সিলিন্ডারের জালিয়াতি করতে গিয়ে মামলা হয়নি আমার ওপর, তাই হয়তো বিজেপি আমাকে টিকিট দেয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “হয়তো দল ছাড়ার সিদ্ধান্তে এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় আমার বা আমার পরিবারের লোকেদের উপর নানান রকমের আঘাত আসবে। তবে আমি মৃত্যুকে ভয় করিনা, সত্যের জন্য মুখ খুলেছি, কিছুটা আঘাত তো পেতেই হবে।”
Comments are closed.