
"প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মাদ্রাসায় পড়েছেন, সেখানে সন্ত্রাসবাদ শেখানো হয় না," মাদ্রাসা বন্ধ না করতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি শিক্ষক সংস্থার
সম্প্রতি সরকারি মাদ্রাসা বন্ধের প্রস্তাবে বিল পেশ করেছে অসম সরকার। এর বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সরব ছিল অসম মাদ্রাসা শিক্ষক সংস্থা (আমটা)। এবার তারা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের কাছে চিঠি লিখে দাবি জানিয়েছেন এই বিলটি যাতে আইনে পরিণত করা না হয়। সারা রাজ্যের সঙ্গে কাছাড় জেলার সদস্যরাও মঙ্গলবার জেলাশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।
জেলাশাসক কার্যালয়ে স্মারকপত্র প্রদান করতে উপস্থিত ছিলেন সারা আসাম মাদ্রাসা শিক্ষক সংস্থার কাছাড় জেলা শাখার সম্পাদক নুর আহমদ লস্কর, সভাপতি ফারুক আহমদ সহ কুতুব উদ্দিন লস্কর, জইনুল হক আহমদ, আব্দুল সুবহান ও অন্যান্যরা।
তারা বলেন, অসম সরকার শুধুমাত্র রাজনীতির স্বার্থে বহু যুগ পুরনো একটি ধারাকে নষ্ট করে দিতে চাইছে। তারা এটুকু বুঝতে চাইছেন না এটা দেশের শিক্ষার অধিকারের পরিপন্থী। শিক্ষা মন্ত্রী বারবার ইঙ্গিত করেছেন মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়, তারা এমনটাও ইঙ্গিত করেছেন মাদ্রাসার নামে সন্ত্রাসবাদের শিক্ষা দেওয়া হয়। তব ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সমাজসেবী, বৈজ্ঞানিক মাদ্রাসায় শিক্ষা নিয়েছেন এবং দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে খোঁজ নিলে অনেক বড় বড় আধিকারিকদের নাম পাওয়া যাবে যারা মাদ্রাসায় শিক্ষা পেয়ে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। অথচ হঠাৎ করে অসমের শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা সরকারি মাদ্রাসা বন্ধ করতে রিপিলিং বিল বিধানসভায় পেশ করলেন।
এবার আসা যাক কোন যুক্তিতে মাদ্রাসা বন্ধ করা উচিত নয়, আসাম এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট রুলস ১৯৫৪, আসাম মাদ্রাসা এডুকেশন প্রভিন্সিয়ালিসেশন অ্যাক্ট ১৯৯৫, আসাম ভেঞ্চার মাদ্রাসা এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন (প্রভিন্সিয়ালিজেশন অব সার্ভিসেস) অ্যাক্ট ২০১১ এবং শেষমেষ ২০১৮ সালের আরেকটি অ্যাক্ট, সবগুলোই মাদ্রাসা শিক্ষা পক্ষে কথা বলেছে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রী হঠাৎ করে এতগুলো আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন করে আইন প্রণয়নের চেষ্টা করছেন। হয়তো এতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি লাভবান হবেন, তবে রাজ্যের মানুষের ক্ষতি করবেন।
সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার মতই মাদ্রাসা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা হয়। শুধুমাত্র ধর্মের বই পড়ানো হয়না। বর্তমান সরকার সংস্কৃত ভাষাকে সুরক্ষা দিতে অনেক ব্যবস্থা নিচ্ছে অথচ মাদ্রাসা সুরক্ষা কেড়ে নিতে চেষ্টা করছে। যে শিক্ষার আলোকে অসম থেকে এক ব্যক্তি ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন সেই শিক্ষাকে বন্ধ করতে ডাক দেওয়া হচ্ছে অসমেই। আমরা চাই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ আমাদের দাবি মেনেই বিধায়ককে আইনে পরিণত হতে বাধা দেয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন স্লোগান ‘দেন সবকা সাথ সবকা বিকাশ’, এর মধ্যে অবশ্যই ভারতবর্ষে বসবাসকারী মুসলমানদের উল্লেখ থাকে। তার সরকার থাকা অবস্থায় যদি মুসলমানদের শিক্ষার আইন কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে সমাজ তাকে প্রশ্ন করবে। অসমের মুখ্যমন্ত্রীর থেকেও উপরে রয়েছেন রাজ্যপাল, তিনি থাকতে ধরনের অগণতান্ত্রিক একটি পদক্ষেপ যদি রাজ্য সরকার নেয়, সেক্ষেত্রে তাকেই এগিয়ে এসে বাধা দেওয়া উচিত। আমরা প্রত্যেকের কাছে আবেদন রাখছি, দেশের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো নষ্ট করে দেওয়ার মতো কোনও সিদ্ধান্ত সমর্থন করবেন না।
যদি এমনটা না হয়, যদি রাজ্য সরকার আইনিভাবে সরকারি মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়, তখন আমরা প্রয়োজনে আন্দোলনের নামবো। শুধুমাত্র কাছাড় জেলায় নয় সারা রাজ্যে মাদ্রাসায় শিক্ষা পাওয়া ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করবেন। গণতান্ত্রিক দেশে নিজের অধিকার পেতে এর বেশি আমাদের কিছু করার থাকে না।
Comments are closed.