Also read in

বিজেপির ম্যানিফেস্টো কা-বিরোধী, দাবি কংগ্রেসের, "এনআরসি ভুল হলে বাদপড়াদের কেন উইপোকা বলেছিলেন অমিত শাহ?"

সম্প্রতি বিজেপি এবং কংগ্রেস দুই দলের ম্যানিফেস্টো প্রকাশ্যে এসেছে এবং এতে নানান বিতর্ক মাথাচাড়া দিচ্ছে। বিশেষ করে বিজেপির সংকল্প পত্রে যেভাবে প্রকাশ্যে বলা হয়েছে এনআরসি শুদ্ধিকরণ হবে এবং বাইরের দেশ থেকে এসে আশ্রয় নেওয়া কোনও ব্যক্তিকে রাজ্যে থাকতে দেওয়া হবে না, এটা দলের অনেক পুরনো প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের তরফে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বিজেপির ম্যানিফেস্টো নিয়ে নানান মন্তব্য তুলে ধরা হয়। এতে অংশ নেন জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখার্জি এবং শিলচরের প্রার্থী তমাল কান্তি বণিক সহ অন্যান্যরা।

সুস্মিতা দেব বলেন, “এবারের ম্যানিফেস্টোর মাধ্যমে বিজেপি স্বীকার করে নিয়েছে তারা এনআরসি প্রক্রিয়ায় পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তাদের দল যেভাবে নাগরিকত্ব আইন ‘কা’ পাস করা নিয়ে গলা ফাটায়, এবারের ম্যানিফেস্টো কিন্তু এর পরিপন্থী। তারা বলছেন বাংলাদেশ থেকে এসে ভারতে আশ্রয় নেওয়া কোন ব্যক্তিকে অসমে থাকতে দেওয়া হবে না, অথচ কা-আইন বানানোর একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে এসব শরণার্থীদের সুরক্ষা দেওয়া। আইনত অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হচ্ছেন তারা, যাদের কাছে ভারতে প্রবেশ করার কোনও কাগজপত্র নেই। এরাই তো দেশভাগের বলি, বিজেপি এদের তাড়ানোর কথা লিখিতভাবে বলে দিয়েছে। এতে তাদের আসল উদ্দেশ্য স্পষ্ট হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “কংগ্রেস কখনো এনআরসি’র বিরুদ্ধে ছিল না, এটা আমাদের সরকারের সময়ে শুরু হয়েছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিভিন্ন কারণে দেরি হয় এবং সরকার পাল্টে যায়। বিজেপি এনআরসি’র নামে এত টাকা খরচ করার পরও এখন লিখিতভাবে বলছে তারা সেই কাজে ব্যর্থ হয়েছে। তবে শুধু দল ব্যর্থ হয়েছে বলে দায় সারা যাবেনা। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, সেটা একেবারেই অস্বীকার করে নতুনভাবে প্রক্রিয়া চালু করার কথা বলা হয়েছে। এটি বার বার দেশভাগের নির্যাতন সহ্য করা ব্যক্তিদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করার একটা ধারনা গড়ে তুলছে।”

বিজেপির ম্যানিফেস্টোতে নগাঁও কাগজ কল চালু করার কথা থাকলেও কাছাড় কাগজ কলের কথা বলা হয়নি। দুই কাগজ কলের কর্মীরা একসঙ্গে আন্দোলন করছেন, তবে এবার হঠাৎ করেই একটা ধোঁয়াশার পরিবেশ গড়ে উঠছে। এই প্রসঙ্গে সুস্মিতা দেব বলেন, “কংগ্রেস দল কখনই কাগজ কল বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেদের যোগদানের কথা অস্বীকার করেনি। তবে তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যেখানে এমন একটা পরিণতির দিকে এগিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী ছিল। তবে মনে রাখতে হবে সন্তোষ মোহন দেব ভারীশিল্প মন্ত্রী থাকার সময় এই কাগজ কলকে দেশের মিনি নবরত্নের অন্যতম বলা হত। বিজেপি ঠান্ডা মাথায় দুই কাগজ কলের মধ্যে ব্যবধান গড়ে তুলছে, একটা চালু করবে বলেছে এবং অন্যটা শুধু বকেয়া মিটিয়ে দেবে। জনগণের টাকায় বকেয়া মিটিয়ে দিয়ে পুরো সম্পত্তি কোনও ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেওয়া হবে।”

মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের বিভিন্ন ভাষণের সঙ্গে দলের ম্যানিফেস্টোর মিল নেই, এই প্রসঙ্গ টেনে সুস্মিতা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী শুধু বলেন, তারা দুই উপত্যকাকে সমান চোখে দেখেন অথচ তাদের ম্যানিফেস্টোয় বরাক উপত্যকাকে চরম অবহেলার চোখে দেখা হয়েছে। আমি বলব এবার তারা নিজেরাই নিজেদের মিথ্যাচারিতার মুখোশ টেনে খুলে দিয়েছেন। আজ এনআরসি থেকে যারা বাদ পড়েছেন তাদের কোনও অসুবিধা হতো না যদি সর্বানন্দ সোনোয়াল আইএমবিটি অ্যাক্ট বাতিল না করাতেন। বিজেপির তরফে একসময় বলা হয়েছিল ২৫ লক্ষ চাকরি দেওয়া হবে, সম্প্রতি শোনা গেল ১০ লক্ষ চাকরি দেওয়া হবে, এবার ম্যানিফেস্টোতে দেখা গেল দুই লক্ষ চাকরি দেওয়া হবে। তার মানে তারা বারবার নিজেদের প্রতিশ্রুতির ব্যর্থতা নিজেরাই তুলে ধরছেন। বরাক উপত্যকাকে যেভাবে উপেক্ষিত করা হলো এর জন্য দায়ী শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়ও। তিনি ম্যানিফেস্টো কমিটির সদস্য ছিলেন অথচ তার সামনেই বরাককে উপেক্ষিত করা হল আর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা জনগণের কাছে বলতে চাই, নিজেদের চোখ-কান খোলা রেখে কংগ্রেস এবং বিজেপির ম্যানিফেস্টো ভালো করে পড়ে দেখুন এবং আসল শত্রুকে চিনে নিয়ে তার পর ভোট দিন।”

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কন্যা কথা জাতীয় কংগ্রেসের মুখপাত্র শর্মিষ্ঠা মুখার্জি বলেন, “ভারতবর্ষের ইতিহাসে কখনো পুশব্যাক হয়নি। আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত গ্রহণযোগ্যতার। যারা দেশভাগের বলি হয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাধ্য হয়ে ভারতে এসেছিলেন তাদের প্রতি সহানুভূতি থাকতে হবে, আমার বাবা এমনটাই বলতেন। বাংলাদেশ কোনভাবেই কাউকে ফিরিয়ে নেবে না, আর কিছু লোককে বিদেশি শনাক্ত করে ডিটেনশন ক্যাম্পে প্রজন্মের পর প্রজন্ম রেখে দেওয়া যাবেনা। তাই বিজেপির ম্যানিফেস্টো এবং ঘোষণা একেবারেই অমানবিক।”

শিলচরের প্রার্থী তমাল বণিক বলেন, “এনআরসি থেকে বাদ পড়া লোকেদের উইপোকা বলেছিলেন বিজেপির বরিষ্ঠ নেতা অমিত শাহ। এবার তারা মানছেন সেই তালিকা ভুল ছিল এবং আগামীতে শুদ্ধ তালিকা গড়ে তোলা হবে। যারা এমন কথা বলতে পারে তারা আগামীতে শুধু তালিকা বানাবে এর কোন ভরসা নেই। কাগজ-কলম নিয়ে যেভাবে কাছাড়ের প্রতি বৈষম্যমূলক ব্যবহার করা হচ্ছে এতে বিজেপির আসল উদ্দেশ্য জনসমক্ষে এসে গেছে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সেটা বুঝে নিয়ে সঠিক জবাব দেওয়া।”

Comments are closed.