গোলাঘাট কান্ড অসম ক্রিকেটের কলঙ্কিত অধ্যায়, তবুও নতুন যুগের সূচনা করতে পারে এ সি এর বেনজির সিদ্ধান্ত!
জে কে বরুয়া আন্তঃজেলা অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটে রেল বনাম যোরহাট ম্যাচ অসম ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করেছে। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে এক তদন্ত কমিটি গঠন করে তার রিপোর্টে ইতিমধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছে এ সি এ। আন্ডারপারফর্ম করায় রেল দলকে তিন বছরের জন্য সাসপেন্ড করেছে অসম ক্রিকেট সংস্থা। সেই সঙ্গে দলের কোচ কাম ম্যানেজার সত্যব্রত চক্রবর্তীকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রেল দলের অধিনায়ক রনিত আক্তার যিনি আবার রাজ্য দলের অধিনায়ক ও বটে, তাকেও তিন বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। সোজাকথায়, গোটা এই এপিসোড অসম ক্রিকেটের জন্য এক কলঙ্কিত অধ্যায়। সে অনুসারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ সিএ।
বেনজির এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামীতে কোনো ক্রিকেটার বা দল এমন কাণ্ড করার আগে দশবার চিন্তা ভাবনা করবে। সে দিক থেকে বিচার করলে একেবারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছে এ সি এ। অসম ক্রিকেট সংস্থার এমন সিদ্ধান্ত বরাক উপত্যকার ক্রীড়াপ্রেমীদের মন ও জয় করে নিয়েছে। এ সি এ এমন কড়া সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাও আবার শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে, অধিকাংশই কিন্তু এ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। কারণ ছিল অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা। অধিকাংশই একরকম ধরে নিয়েছিলেন, এ সি এর তদন্ত প্রক্রিয়ার রিপোর্ট থেকে কিছুই বেরিয়ে আসবে না। ক্লিনচিট পেয়ে যাবে সবাই। তবে বাস্তবে হলো উল্টোটাই।
এটা সত্যি, অসম ক্রিকেট সংস্থা যদি জে কে বরুয়া আন্তঃজেলা অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচ টা স্থগিত রেখে এই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করত এবং তারপর শুনানির ডাক দিত তাহলে এই অঞ্চলের ক্রীড়াপ্রেমীরা অধিক খুশি হতেন। তবে এ সি এ রেল দলকে তাদের কুকান্ড এর জন্য যা শাস্তি দিয়েছে সেটা কিন্তু শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নৈতিক জয়। এক বিরাট পাওনা।
এর আগেও অন্যায়ের শিকার হয়ে অসম ক্রিকেট সংস্থা একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছিল শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তবে কোনো বারই সুবিচার পায়নি। এবারই প্রথম এমন কিছু ঘটলো। এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করল এ সি এ। শুনানির দিন ধার্য করল। আবার শুনানির রিপোর্টে রাজ্যের অন্যতম পাওয়ার হাউস রেল দলকে এত বড় একটা শাস্তি দিল। বিষয়টা শিলচর ক্রিকেটের জন্য এক বিশাল ব্যাপার। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ সি এ কিন্তু বরাক উপত্যকার ক্রীড়াপ্রেমীদের খুব ভালো একটি বার্তা দিয়েছে। এতদিন এখানকার ক্রিকেটপ্রেমীদের ধারণা ছিল, এ সি এ বরাক উপত্যকা কে তেমন পাত্তা দেয় না। তাই এখানকার ক্রিকেটারদের উপেক্ষিতই থাকতে হয়। তবে বিষয়টা কিন্তু ঠিক তেমন নয়। অন্তত দেবজিৎ শইকীয়া নেতৃত্বাধীন অসম ক্রিকেট সংস্থার বর্তমান কমিটি এই বার্তাটা দিতে পেরেছে। এতে একজন ক্রিকেটার থেকে ক্রিকেটপ্রেমী, সবার মনেই এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এবার কিন্তু অসম ক্রিকেট সংস্থায় খুব জোরালো ভাবে নিজেদের অভিযোগ দায়ের করেছিল শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এর শুরুটা করেছিলেন শিলচর দলের কোচ তথাগত দেবরায়। তিনি সেদিন যেভাবে গোলাঘাটে রেল দলের অনৈতিক কান্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তার জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। অবশ্য তার পাশে ছিলেন দলের আরও এক কোচ দীপঙ্কর দেব সহ গোটা দল। বিষয়টা কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি। শুনানিতে শিলচর দলের কোচ তথাগত, অধিনায়ক শুভজিত পাল সহ হাজির ছিলেন শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং। শুনানিতে এ সি এ সচিব দেবজিত শইকীয়া, সভাপতি রোমেন দত্ত এবং কোষাধ্যক্ষ ত্রিদিব কোয়রের মতো শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে জোরালোভাবে ন্যায় বিচারের দাবি করেন বিজেন্দ্র। এটাও কিন্তু একটা ফ্যাক্টর। অতীতে যখনই শিলচর অসম ক্রিকেট সংস্থায় কোনো অভিযোগ করেছে সেটা ছিল খুবই দুর্বল। যার ফলে সেই অভিযোগ তেমন পাত্তা পায়নি। সম্ভবত এবারই প্রথম যুক্তি দিয়ে এত জোরালোভাবে কোনো অভিযোগ দায়ের করেছিল শিলচর ডি এস এ।
শিলচর যে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিল তদন্ত প্রক্রিয়ায় সেটা খারিজ করেছে এ সি এ। রেল দল আন্ডার পারফর্ম করেছে, তবে কোনো গড়াপেটা করেনি, এই তথ্য প্রমাণ হওয়ায় এমন বেনজির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ সি এ। আসলে শিলচর রেল দলের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে গড়াপেটার অভিযোগ দায়ের করেনি। তদন্ত প্রক্রিয়ায় এটা প্রমাণ ও হয়নি। তাই এমন অভিযোগ প্রমাণ হয়নি তারপরও এত বড় শাস্তি, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। ওঠাই স্বাভাবিক। তবে এ নিয়ে শিলচর কে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। যা কিছু ঘটে গেছে তা এখন অতীত। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। হ্যাঁ এটা সত্যি, ফাইনাল খেললে হয়তো চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরত শিলচর দল। তবে এখন আর সে নিয়ে ভেবে লাভ নেই। বরং অতীত ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
Comments are closed.