Also read in

বিজেপিকে জেতানোর পুরস্কার পাবেন বরাকবাসী, পরিবেশ দিবসে মুখ্যমন্ত্রী

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের রাজ্য পর্যায়ের অনুষ্ঠান এবার শিলচরে অনুষ্ঠিত হলো, উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। “পৃথিবীর মানুষ আজ বিশুদ্ধ হাওয়া খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ইউরোপ থেকে দলে দলে পর্যটকরা অসমে এসে প্রকৃতির স্পর্শ পেতে আগ্রহী। আমরা আমাদের আবহাওয়ায় আরো বেশি অক্সিজেন ভরে দিতে পারলে অসম রাজ্য সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে। রাজ্যের তিন কোটি তিরিশ লক্ষ মানুষ বছরে দুটো করে গাছ লাগিয়ে সঠিকভাবে লালন করলে এই স্বপ্ন পূরণ হতে বেশিদিন লাগবে না। আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে দাঁড়িয়ে আমি রাজ্যের প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা বৃক্ষরোপণ এবং বৃক্ষসংরক্ষণে এগিয়ে আসুন”, বললেন মুখ্যমন্ত্রী।

লোকসভা নির্বাচনে শিলচরে ডাঃ রাজদীপ রায় ও করিমগঞ্জে কৃপনাথ মালা, এই দুই বিজেপি প্রার্থীকে জিতিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে দুজন সাংসদ উপহার দিয়েছেন বরাকবাসী। এই উপহার বিফলে যাবেনা, এর প্রতিদান অবশ্যই মিলবে, অনুষ্ঠানে ভাষণ দানকালে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।

তিনি বলেন, এবছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম হচ্ছে ‘বায়ু প্রদূষণ মুক্ত সমাজ’ অর্থাৎ বিশুদ্ধ আবহাওয়া। আমাদের পারিপার্শ্বিকে অক্সিজেনের পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে এবং সারা বিশ্ব এই ব্যাপারে চিন্তিত। অসম রাজ্য প্রকৃতির স্নেহধন্য, আমাদের কাছে বরাক এবং ব্রহ্মপুত্রের মতো দুটি মহানদী রয়েছে। আমরা প্রকৃতির সংরক্ষণে প্রত্যেকে এগিয়ে এলে আবহাওয়ায় অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শ্বাস নিতে যেমন সুবিধা হবে, তেমনই সারা বিশ্বের কাছে আমরা আদর্শ হয়ে উঠতে পারব। অসম সহ উত্তর পূর্বাঞ্চল ভারতবর্ষের অরগ্যানিক হাব, কেননা এখানে এত বেশি প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে যা আমরা এখনো কল্পনাও করতে পারিনা। অথচ প্রকৃতির প্রতি আমাদের উদাসীনতার দরুন এই অঞ্চলের আবহাওয়ায়ও অক্সিজেন কমে আসছে। সুস্থ প্রকৃতিতে বাঁচতে পারলে মানুষের আধ্যাত্মিক চিন্তা এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। আমরা প্রকৃতির আশীর্বাদধন্য হয়েও যদি নিজেদের সুস্থ রাখতে ব্যর্থ হই, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কি আদর্শ থাকবে? উন্নতির স্বার্থে কিছুটা গাছ কাটতে হতে পারে, এটা স্বাভাবিক। তবে গাছ কাটলে তার থেকে বেশি গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এই বার্তাটুকু আমি রাজ্যের প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতে চাই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা শহরে বিশ্বভারতী না গড়ে শহর থেকে দূরে শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা কাকে বলে। আমাদের উচিত শহরকেন্দ্রিক না হয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি ফিরে যাওয়া। আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস দিনটি উদযাপনকে সামনে রেখে আমরা সংকল্প নিয়েছি, আগামী এক বছরের মধ্যে রাজ্যে ৪৫ লক্ষ বৃক্ষরোপণ তথা সংরক্ষণ করা হবে।

আমাদের রাজ্যে যে দুটি বড় নদী রয়েছে, তাদের সুরক্ষা দিতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। বরাক এবং ব্রহ্মপুত্রের পবিত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় অবদান হবে বেশি পরিমাণে বৃক্ষরোপণ। আমরা সবাই মিলে আজ সংকল্প নিই, আমরা আমাদের প্রকৃতিকে তার সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেব এবং এতে রাজ্যের প্রত্যেক ব্যক্তি যোগ দেবেন।

এদিন দুপুর দুটোয় শিলচরের পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে রাজ্য সরকারের তরফে আয়োজিত বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। প্রথমে চিরাচরিত নিয়ম মেনে বৃক্ষপূজন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে জেলার প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন আধিকারিকরা অংশ নেন। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে এসে উপস্থিত হন। প্রচন্ড প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও সাধারণ মানুষ এতে অংশ নেন। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য ও অন্যান্যদের উপস্থিতিতে বৃক্ষরোপন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি বিভাগ সহ সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করে। মুখ্যমন্ত্রী এগুলো পরিদর্শন করেন এবং ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অভিমত আদান প্রদান করেন। পরিবেশ বিভাগের তরফে বিদ্যালয় স্তরে দিনটি নিয়ে কিছু প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছিল, বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এদিন বিধায়ক শিলাদিত্য দেব, মৃগাঙ্ক বর্মন, বরাক উপত্যকার দুই নবনির্বাচিত সাংসদ রাজদীপ রায় ও কৃপানাথ মালা, জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরি ও অন্যান্যরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল, বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, সাংসদ রাজদীপ রায় সহ অন্যান্যরা এদিন সভায় বক্তব্য রাখেন। পরিমল শুক্লবৈদ্য এদিন বলেন, গত বছর রাজ্য সরকারের তরফে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানটি ডিব্রুগড়ে আয়োজন করা হয়েছিল। এবার এটি বরাক উপত্যকায় হচ্ছে, এতে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। পাশাপাশি অনুষ্ঠানটি আমাদের এলাকায় আয়োজিত হওয়াতে আমরা আমাদের দায়িত্ব নিয়ে আরো বেশি সচেতন হয়ে পড়েছি। এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম হচ্ছে ‘বায়ু প্রদূষণ মুক্ত সমাজ’। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে পরিবেশের যে অবস্থা, সেখানে স্বচ্ছ বাতাস পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে বেশি পরিমাণে বৃক্ষরোপণ এবং বৃক্ষ সংরক্ষণ। রাজ্য সরকারের তরফে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সারে তিন কোটিরও বেশি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে কাছাড়ে দুই হাজার হেক্টরে বৃক্ষরোপণ করা হবে। রাজ্যে এক হাজার কিলোমিটার রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপণ এবং বৃক্ষ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আজ সারা বিশ্বে ঈদুল ফিতর পালন করা হচ্ছে, তাই সকালের দিকে কোনও অনুষ্ঠান রাখা হয়নি। পরিবেশ দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি বৃক্ষপূজনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতিতে বৃক্ষ পুজো নতুন ব্যাপার নয় আমাদের প্রত্যেক ধর্মীয় আচার আচরণের মধ্যে কোনও না কোনওভাবে বৃক্ষ পূজা হয়েই থাকে। আজকের যুগে পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে বৃক্ষ সংরক্ষণ এবং বৃক্ষরোপণ একমাত্র উপায়। আমরা তাই আমাদের চিরাচরিত রীতিতে বৃক্ষপূজন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মধ্যে গাছকে সম্মান দেওয়ার রীতি ফিরিয়ে আনতে আমরা আগ্রহী। আমার বিশ্বাস সাধারণ মানুষ আমাদের এই বার্তা সহজভাবে গ্রহণ করবেন এবং নিজেরাও বৃক্ষকে সংরক্ষণ দিতে এগিয়ে আসবেন। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বিশ্ব পরিবেশ দিবস অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে প্রথমবারের মতো বরাক উপত্যকায় এসেছেন। তিনি নিজে বৃক্ষরোপণ করে উদাহরণ দেখিয়ে দিচ্ছেন। তার এই সফরের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবেশের প্রতি সচেতনতা গড়ে তোলা। আমরা শহরের কংক্রিট ফ্ল্যাটে বসে পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে কথা বললে খুব একটা কাজে আসবে না প্রথমে নিজেদের প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে গাছ লাগালে সে কাজটি সংরক্ষণ করে তাকে বড় হতে দিতে হবে।
দিলীপ কুমার পাল, রাজদীপ রায় এবং অন্যান্য অতিথিরা পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন। এদিন ‘পরিবেশ বাতরি’ নামে অনুষ্ঠানের একটি মুখপত্র উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত অতিথিরা।

Comments are closed.