'গাফিলতি হয়েছিল,' ১০০০টি ভ্যাকসিন মাইনাস ১৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ছিল, দায় নিল প্রশাসন; মেডিক্যালের মেশিন খারাপ ছিল না: বেজবরুয়া
১৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশের সঙ্গে কাছাড় জেলায় শুরু হয় কোভিড ভ্যাকসিন প্রদান প্রক্রিয়া। তবে ১৮ জানুয়ারি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ১০০টি ভাইল, অর্থাৎ ১০০০টি ডোজ প্রয়োজনের বেশি ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয়। এতে সোমবার পুরো প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। মঙ্গলবার প্রক্রিয়া শুরু হলেও শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নাম লেখানো ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে মাত্র দশ শতাংশ লোক ভ্যাকসিন নেন। এদিকে গুয়াহাটি থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বিভাগের এই গাফিলতির জন্য কড়া বার্তা দিয়েছেন। বুধবার স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে নিজেদের সাফাই তুলে ধরা হয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সত্যওয়ান এবং স্বাস্থ্যবিভাগের আধিকারিক সুমন চৌধুরী জানান, পুরো ঘটনার দায় স্বাস্থ্য বিভাগ নিচ্ছে। এছাড়া তারা স্বীকার করেন প্রক্রিয়াটি নিয়ে বিভাগে গাফিলতি হয়েছে এবং সামঞ্জস্যের অভাব ছিল। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তাদের উত্তর এলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
এদিকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ বাবুল বেজবরুয়া জানিয়েছেন, হাসপাতালের মেশিন খারাপ হয়নি। ভ্যাকসিন ডোজ নষ্ট হওয়ার পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। তবে কি কারণ রয়েছে এটা তিনি স্পষ্ট করে জানান নি, বিভাগীয় স্তরে তদন্ত চলছে, তদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে আসলে কি হয়েছিল। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে গুয়াহাটি থেকে একটি বিশেষ দল তদন্তের জন্য শিলচর আসছে। তারাই নিরপেক্ষভাবে পুরো ব্যাপারটি খতিয়ে দেখবে।
বুধবার সন্ধ্যেবেলা শিলচর সিভিল হাসপাতাল স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিতে গিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সত্যওয়ান বলেন, “যেটা হয়েছে সেটা আমরা আশা করিনি এবং কখনই চাইনি এমনটা হোক। স্বাস্থ্যবিভাগের নির্দেশে প্রায় দুই মাস ধরে জুম অ্যাপের মাধ্যমে নির্ধারিত স্বাস্থ্য আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বরিষ্ঠ আধিকারিকদের এই কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল, তারা স্বেচ্ছায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আমরা তাদের উপর বিশ্বাস করেছিলাম, কারণ তারা বহু বছর ধরে ভ্যাকসিন প্রদানের কাজে অবদান রেখেছেন। কেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০০টি কোভিশিল্ডের ডোজ পাঠানো হয়েছিল সেটা নিয়ে শোকজ করা হয়েছে। তবে আমাদের প্রাথমিক তদন্ত বলছে, কিছুটা গাফিলতি হয়েছে। অবশ্যই সেই দায় গোটা বিভাগের। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিনগুলো দেখে রাখার দায়িত্বে ছিলেন বিরলা বর্মন নামের এক বরিষ্ঠ জিএনএম। তিনি জানিয়েছেন, মেশিনের যে পদ্ধতিতে ২ ডিগ্রি থেকে নিচে এবং ৮ ডিগ্রি থেকে ওপরে তাপমাত্রা গেলে মেসেজ আসবে, সেটা আসেনি। তিনি আদৌ সত্যি কথা বলছেন কিনা এটাও তদন্তের বিষয়।”
এই ঘটনার পর নতুনভাবে কিছু নিয়ম বানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং সিভিল হাসপাতাল জেলায় মোট ২৫টি সেন্টারে প্রতিদিন সর্বাধিক ১০০টি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ডোজ পাঠাবে। আপাতত এই দুই হাসপাতাল ছাড়া বাকি তেইশটি সেন্টারে ভ্যাকসিন প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তবে পুরো সেটআপ ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে। নতুন নিয়ম হচ্ছে, প্রত্যেকটি সেন্টারে যে ব্যক্তিকে ভ্যাক্সিনেটর হিসেবে নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাকে সকাল আটটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত প্রতি দুই-ঘন্টায় এবং রাত আটটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত প্রতি চার-ঘন্টায় রিপোর্ট করতে হবে যে তিনি ভ্যাকসিন দেখাশোনা করছেন। যদি মেসেজ বা অনলাইনে তিনি সেটা করতে না পারেন তাহলে অন্তত ফোন করে সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে জানাতে হবে। যদি একবারের জন্যও তিনি সেটা করতে না পারেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুমন চৌধুরী জানান, গত শনিবার ভ্যাকসিন প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর রবিবার এবং সোমবার সেটা দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার নাম লেখানো অনেকেই ভ্যাকসিন দিতে আসেননি। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নাম লেখানো ৯৭ জন ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য কর্মীর মধ্যে মাত্র ১০ জন ভ্যাকসিন নেন। সিভিল হাসপাতালের অবস্থাও প্রায় কাছাকাছি, নাম লেখানো ৭৬ জনের মধ্যে ৩২ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার শিলচর মেডিক্যাল কলেজের কলেজে আবার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, এখন পর্যন্ত নাম লিখিয়েছেন ৬৭ জন ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য কর্মী। প্রথমদিন অর্থাৎ ১৬ জানুয়ারি সিভিল হাসপাতালে ১০০ জন নাম লেখানো স্বাস্থ্য কর্মীর মধ্যে ৪৬ জন ব্যক্তি ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন এবং শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নাম লেখানো ১০১ জনের মধ্যে ৬৬ জন ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। কাউকে জোর করে ভ্যাকসিন নিতে বলা হচ্ছেনা, তবে দ্বিতীয় দিনেই ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের এতটা অনীহা অবশ্যই পুরো প্রক্রিয়ার সফলতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
Comments are closed.