ডঃ তপোধীর ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে মামলা : প্রতিবাদে শিলচরের রাজপথে হাজারো জনতার মিছিল
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে সম্প্রতি কিছু সংস্থার বিদ্বেষমূলক কুৎসা রটনা ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে আজ শিলচরে ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে এক বিশাল প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি, ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমোনি এবং কোরাস সাংস্কৃতিক সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈরেন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য্য, প্রাক্তন বিধায়ক আতাউর রহমান মাজারভূঁইয়া, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য, নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির অজয় রায় সহ বিভিন্ন বক্তা তাদের বক্তব্যে গৌহাটি থেকে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানান । সেইসঙ্গে যেকোন সমস্যায় বাঙালি সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান ।
তপোধীর ভট্টাচার্যের পরিবারের সদস্যরাও পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন। আতাউর রহমান বলেন, “আমাদের আর হিন্দু-মুসলমানের বিভেদ টেনে আলাদা করা যাবেনা। দীর্ঘদিন ধরে বিভ্রান্ত করে আমাদের আলাদা করে রাখা হয়েছে। বাক্ স্বাধীনতা রোধ করে, আমাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে কোণঠাসা করার চক্রান্ত চলছে।এবার তারা তপোধীর ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত কটূক্তি করে এবং অন্যায়ভাবে মামলা করে আমাদের অস্তিত্বের উপর আঘাত করেছেন। আর তাই আজ এতো মানুষ এই প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন। অসমিয়া সমাজ বুঝতেই পারছেনা তাঁরা কোন দিকে যাচ্ছে। আমরা অসমিয়া বুদ্ধিজীবী মহলের কাছে আবেদন রাখছি, তাঁরা যেন সময় থাকতে যুবসমাজকে বিভ্রান্ত হওয়া থেকে আটকানোর ব্যবস্থা করেন। বাঙালিরা অসম এবং অসমিয়াদের শত্রু নয়। এই সহজ সত্য বুঝতে না পারলে রাজ্যের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না।”
তপোধীর ভট্টাচার্যের পরিবারের তরফে তাঁর ভগ্নীপতি দীপক চক্রবর্তী বলেন, “কাল রাত থেকে চরম আতঙ্কিত পুরো পরিবার। আজ এত লোকের সমর্থন দেখে আমরা আশ্বস্ত। তবে এই অপমান ভোলার মতো নয়, এই ক্ষত সারাজীবন থাকবে।”
উল্লেখ্য, মানস চালিহা নামে গুয়াহাটির এক ব্যক্তি রবিবার আইপিসি ১২০ এবং ১৫৩ (ক) এর আওতায় তপোধীর ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ এবং রাজ্যে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে মামলা করেন। চালিহার অভিযোগ, অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য তাঁর লেখনী এবং বক্তব্যের মাধ্যমে অসমিয়া সংস্কৃতি এবং ভারতবর্ষের সার্বভৌমত্বের অবজ্ঞা করেছেন।
আসামে এনআরসি বা ডি-ভোটার ইত্যাদির ব্যাপারে সাধারণ মানুষের নির্যাতন নিয়ে তপোধীর ভট্টাচার্যের দুটি লেখা পশ্চিমবঙ্গের দুই পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়। এতে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একাংশ সংবাদ মাধ্যম এবং বুদ্ধিজীবী মহল নানাভাবে তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলেন। অবশেষে এব্যাপারে মামলা করা হয। এতে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। এর প্রতিফলন দেখা যায় সোমবারের মিছিলে।
সভা শেষে এক প্রতিবাদী মিছিল সভাস্থল থেকে বের হয়ে প্রেমতলা হয়ে নরসিংটোলা ময়দানে গিয়ে শেষ হয়। শহরের মানুষ এদিন নিজেদের দলগত এবং গোষ্ঠীগত অবস্থানের উর্ধে উঠে স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রতিবাদে যোগ দেন যা সচরাচর চোখে পড়েনা। তবে এদিন বিজেপি দল সহ কোনও গেরুয়া ব্রিগেডের সদস্যরা এই মিছিলে যোগ দিতে দেখা যায়নি।
Comments are closed.