Also read in

নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটির গণসমাবেশ শিলচরে, এনআরসির নামে আসামে ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে, বাঙালিদের অস্তিত্ব সংকটে, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

আসামে এনআরসির নামে ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে। বাঙালি, মৈথেই মণিপুরি, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, হিন্দিভাষী, নাগা, মার ডিমাসা,খাসিয়া,রিয়াং ইত্যাদি জনগোষ্ঠী ও জাতির পরিচয় ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী বাঙালি সহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর লোকদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে গোটা রাজ্যে। মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। নাগরিকদের একাধিক প্রমাণপত্র ও নথি থাকা সত্ত্বেও ডি-ভোটার বানিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আগামীতে গণতান্ত্রিক উপায়ে বৃহত্তর আন্দোলন ও শীর্ষ আদালতে আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি।
এনআরসি নবায়নের নামে লক্ষ লক্ষ প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকের নাম অন্তর্ভূক্ত না করে রাষ্ট্রহীন নাগরিকে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বুধবার ২৭ জুন শিলচর ময়দানে এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই গণসমাবেশে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট বক্তাগণ উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন।
কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড: তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, আসামে এনআরসির নামে বিবেক নিয়ে খেলা চলছে।জাতির পরিচয় ধ্বংস করতে চলেছে এক গভীর ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, আসামে বাঙালি সহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর পরিচয় ধ্বংস করার চক্রান্তের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে সভা করে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়া গেছে। কমিটিও গঠন করা হয়েছে সেখানে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে।না হলে এমন ঘটতে পারে না। তিনি অভিযোগ করেন, আসাম পুলিশ জাতি বিদ্বেষে মেতে উঠেছে। কেননা ১০২ বছর বয়স্ক ব্যক্তিকে টেনে-হিঁচড়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক কথায় আসামে অসমিয়া প্রভুত্ব কায়েম করার চক্রান্ত চলছে বলে মনে করেন তিনি। এই সংকট মুহূর্তে তিনি হিন্দু-মুসলিম, ডিমাসা, মার, নাগা মনিপুরি সব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

বাঁশকান্দির ইসলামিক চিন্তাবিদ মৌলানা গোবিন্দপুরি তার বক্তব্যে বলেন, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালি জাতির অবদান অজানা নয়।ব্রিটিশদের চক্রান্তে দেশ দ্বিখন্ডিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও চলছে এবার বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে নতুন চক্রান্ত। এনআরসির কাজ চলছে, এতে বাধা নেই। কিন্তু কোন ভারতীয় নাগরিকের নাম যাতে বাদ না যায় সে ব্যাপারে তিনি সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ২০১৬ ইংরেজির ভোটার তালিকায় থাকা লোকদের নাগরিকত্ব ও এন আর সি তে নাম নথিভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে আগত আসাম বাঙালি সংস্থার প্রতিনিধি রুপম দাস তার বক্তব্যে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় এনআরসির নামে বাঙালি নির্যাতন ও হেনস্থার নানা ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাঙালিদের অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। একের পর এক লোকদের গ্রেফতার করে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। বাঙালি জাতির অধিকার নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কুড়ি জনের অধিক বাঙালি লোকদের বলপূর্বক মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন,বাঙালি লোকদের সঙ্গে ডি-ভোটার, বঙ্গাল,বাংলাদেশি, বিদেশি, বহিরাগত এসমস্ত নানা অপবাদজনক শব্দ লিখে দেওয়া হয়।

আয়োজক কমিটির করিমগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি অরুনাংশ ভট্টাচার্য্য বলেন, বর্তমানে বরাকের লোকদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। গভীর সঙ্কটের মুখে বাঙালি জাতি। এনআরসির নামে নাগরিকত্ব হনন করার কাজ চলছে বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি। এ ব্যাপারে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের নীরব ভূমিকায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অধিকার আদায়ে রক্ত দিয়েও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এদিকে গণসমাবেশে জ্বালামুখী বক্তব্য রাখেন কমিটির অপর সভাপতি আমরা বাঙালির নেতা সাধন পুরকায়স্থ। তার মতে, ৭০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম আসামে বিপর্যয়ের সম্মুখীন বাঙালিরা। ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিদেশি বানানো যায়নি। তাই এবার এনআরসির মাধ্যমে বাঙালি ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীকে বিদেশি বানিয়ে নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার চক্রান্ত চলছে বলে মনে করেন তিনি।তার দাবি, সরকারের প্ররোচনায় এমন ঘটতে চলেছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। পাশাপাশি রাজ্যের বর্ডার পুলিশকেও দায়ী করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে বাঙালিদের এহেন হেনস্থা,হয়রানি ও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে আসাম চুক্তি বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাই তিনি আগামীতে এক্যবদ্ধ আন্দোলন ও আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে আহবান জানান বরাকবাসীকে।এন আর সির প্রধান প্রতীক হাজেলাকে আসুর এজেন্ট বলে আখ্যায়িত করেছেন আকসা নেতা রুপম নন্দি পুরকায়স্থ। তিনি বলেন, এনআরসির কাজে আসামে আসুর দাদাগিরি চলছে। গণসমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বক্তব্য রাখতে গিয়ে ৩০ জুনের পর এন আর সির দ্বিতীয় খসড়া তালিকায় লক্ষ লক্ষ বাঙালি লোকের নাম বাদ পড়বে বলে বরাক উপত্যকার সব বিধায়ক ও সংসদের একযোগে পদত্যাগ দাবি করেছেন।

Comments are closed.