সুস্মিতা দেব'র হ্যান্ডেল ব্লক করলো টুইটার, 'রাজনৈতিক চাপে পড়েই এমনটা করা হয়েছে', বললেন মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী
কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের টুইটার হ্যান্ডেল ব্লক করার ঘটনায় সরগরম ভারতীয় রাজনীতি। বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া এক বিরাট প্যাটফর্ম। এমনই একটা মাধ্যম হচ্ছে টুইটার। সাধারণ নাগরিক থেকে রাজনীতিবিদ, সবাই এটা ব্যবহার করে থাকেন। এর মাধ্যমে যে কোনো ইস্যুতে নিজেদের মতামত তুলে ধরা যায়।
আমাদের দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলই টুইটার ব্যবহার করে থাকে। কংগ্রেস নেতাদেরও টুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারছেন না। কারণ মার্কিন মুলুকে হেডকোয়ার্টার থাকা মাইক্রোব্লগিং জায়ান্টরা কংগ্রেস নেতাদের টুইটার হ্যান্ডেল ব্লক করে রেখেছে। ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে রাহুল গান্ধীরও হ্যান্ডেল ব্লক করে রেখেছে টুইটার। অজয় মাকেন, রনদীপ সূর্যেওয়ালা, লোকসভার এমপি মানিকাম টেগর এবং সুস্মিতা দেবের টুইটার হ্যান্ডেল এই মুহূর্তে ব্লক করে রাখা হয়েছে।
এ নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সুস্মিতা দেব বলেন, “গত ১ আগস্ট একটি ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করা হয়। তারপর জোর করেই তাকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন অর্থাৎ ২ আগস্ট এসসি কমিশন নির্যাতিতার পরিবারের ছবি টুইট করে। তা নিয়ে টুইটার কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ৪ আগস্ট যখন রাহুল গান্ধীজি সেই নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের খবর টুইট করেন এবং সেই পরিবারকে পুরোপুরি সাহায্য করার ব্যাপারে টুইট করেন, তখন টুইটার প্রতিক্রিয়া জানায়। এর সঙ্গেই নিয়ম ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে রাহুল জির অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়।’ সুস্মিতা প্রশ্ন তোলেন, ‘এর আগে ভারতীয় জনতা পার্টির আইটি সেল প্রধান অমিত মালভিয়া হাথরাসের নির্যাতিতার নাম টুইট করেন। এ নিয়ে কিন্তু ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রটেকশন অফ চাইল্ডস রাইট (এন সি পি সি আর) কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বিষয়টা নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি টুইটারও। অমিত মালভিয়ার বিরুদ্ধে এনসি পিসিআর অথবা টুইটার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু কেন?”
সুস্মিতা আরো বলেন, “এসি কমিশনের বিরুদ্ধে ২ ও ৩ আগস্ট কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে রাহুলজি’র ট্যুইটের পরই টুইটার তার হ্যান্ডেল ব্লক করে দেয়। রাজনৈতিক চাপে পড়েই টুইটার এমনটা করেছে।” গোটা বিষয় নিয়ে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে কংগ্রেসের আইটি সেলও। তাদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কিসের জন্য আমাদের শীর্ষ নেতাদের হ্যান্ডেল ব্লক করে দেওয়া হয়েছে? টুইটার কোন্ নিয়ম ভঙ্গের কথা উল্লেখ করছে? আসলে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই ওরা টুইটারকে কাজে লাগিয়েছে। বিরোধীপক্ষের জন্য এক নিয়ম, আর সরকার পক্ষের জন্য ভিন্ন নিয়ম? এটা কেমন করে হয়।
এদিকে এক বিবৃতি জারি করে টুইটার জানিয়েছে, ‘একটা ইস্যুতে শতাধিক টুইট আসার পরই আমরা এমন পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের কিছু গাইডলাইন রয়েছে। যেগুলি কেউই অমান্য করতে পারবে না। তবে এক্ষেত্রে নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে। সেজন্যই আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। আগামীতেও যদি আমাদের গাইডলাইন না মানা হয় তাহলে এমনটা করা হবে।’
টুইটার অনৈতিকভাবে শীর্ষ নেতাদের হ্যান্ডেল ব্লক করে দেওয়ায় এর কড়া সমালোচনা করেছেন সুস্মিতা। এই মুহূর্তে দিল্লিতে রয়েছেন শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ। সেখানে যন্তর মন্তরে সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশু ও মহিলাদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা অপরাধের বিরুদ্ধে ধর্না প্রদর্শন চলছে। এই ধর্নার নাম হচ্ছে ‘হাল্লা বোল’। এতে অংশ নিয়েছেন সুস্মিতাও। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের টুইটার হ্যান্ডেল ব্লক করে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে নিজের ফেসবুক পেজেও কমেন্ট করেছেন তিনি। সুস্মিতা লিখেছেন, “ওরা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের অ্যাকাউন্টগুলি ব্লক করে দিতে পারবে। তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই এবং আওয়াজকে কখনো দমিয়ে রাখতে পারবে না।”
Comments are closed.