এসবিআই নিউ শিলচর শাখার সামনে থেকে দিনের আলোয় সাত লক্ষ টাকা ছিনতাই বাইকে আসা দুই দুষ্কৃতীর
একই ধাঁচে শহরে একের পর এক টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে চলেছে। একই ধরনের পালসার বাইক, ব্যাংক থেকে বেরোনোর পর পিছু ধাওয়া করা এবং টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া। এদের মধ্যে কখনোই কেউ ধরা পড়ে না, তাই অপরাধীরা সাহস পায় এবং এসবের পুনরাবৃত্তি হয়। সোমবার বিকেলে এক স্কুল শিক্ষকের সাত লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় কালো রঙের পালসার বাইকে আসা দুই দুষ্কৃতী। পুলিশের কাছে এজাহার দিলেও কোনও তোড়জোড় দেখা যায়নি। এতগুলো টাকা চোখের সামনে হারাতে দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন শিক্ষক তীর্থজ্যোতি চৌধুরী।
ঘটনার বৃত্তান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নিজস্ব একটি কাজে বেশ কিছুদিন ধরে লোন পাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। শেষমেষ সাড়ে সাত লক্ষ টাকা লোন দিতে রাজি হয় স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। তবে লোনের প্রসেসিং প্রক্রিয়ায় প্রায় ২৬ হাজার টাকা লেগে যায় এবং সোমবার বিকেলে সাত লক্ষ টাকা তোলার অনুমতি দেয় ব্যাংক। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে টাকাটি ব্যাগে নিয়ে বাইকে করে বাড়ি যাচ্ছিলাম। বাইক স্টার্ট করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হতেই লক্ষ্য করি দুটি ছেলে আমার পিছু নিয়েছে। তারা সুযোগ বুঝে যে ব্যাগের মধ্যে টাকা ছিল সেই ব্যাগ টেনে বের করে নিতে সমর্থ হয় এবং নিয়ে পালিয়ে যায়। জীবনের জমানো পুরোটা টাকা চোখের সামনে এভাবে ছিনতাই হতে দেখে আমি বুঝতে পারিনি কি করব। যখন হুশ ফিরেছে রাস্তায় বসে আছি নিঃস্ব হয়ে।’
ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই রাঙ্গিরখাড়ি থানায় এজাহার দায়ের করেন পরিবারের সদস্যরা। টাকার সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যাগের মধ্যে তীর্থজ্যোতি চৌধুরীর সব ধরনের নথিপত্র রাখা ছিল। ব্যাংকের লোন নেওয়ার জন্য সেগুলো জমা দিয়েছিলেন এবং টাকার সঙ্গে সযত্নে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশ্যই দুষ্কৃতীরা সেগুলো টাকা নেওয়ার পর ফেলে দেবে বলে ধারণা করছেন তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, একই ধরনের ঘটনা এলাকায় বারবার ঘটছে, তারা এতে চিন্তিত। তবে চিন্তিত হওয়ার পরও তারা কোনও ঘটনায় দুষ্কৃতীকে ধরতে সমর্থ হননি। এতে দুষ্কৃতীদের মনে আইন শৃঙ্খলা বা পুলিশের ব্যাপারে কোনো ভয় নেই।
সোমবার সন্ধ্যেবেলা রাঙ্গিরখাড়ি থানার পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, এমন কোনও ঘটনা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে কোনও খবর নেই এবং কেউ এফআইআর পর্যন্ত করেনি। অথচ যে ব্যক্তির টাকা ছিনতাই হয়েছে, তিনি বিকেল পাঁচটার সময় থানায় পৌঁছে এজাহার দায়ের করেছিলেন। পুলিশের এই ব্যবহারে জনমনে ক্ষোভ জাগছে।
ঘটনার আরেকটি দিক হচ্ছে, যখন কোনও ব্যক্তি ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে বেরিয়ে আসেন সঙ্গে সঙ্গে দুষ্কৃতীরা সেই ব্যাগটি চিনতে পারে এবং সহজে ছিনতাই করে নিয়ে যায়। তারমানে হয়তো ব্যাংকের ভেতরেই দুষ্কৃতীরা বসে লক্ষ্য রাখছে । সেটা না হলে কোন ব্যক্তি বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হচ্ছেন, কোন ব্যাগে সেই টাকাটা রয়েছে বাইরের পথচারী কি করে জানতে পারে? এসব প্রশ্নের উত্তর কখনোই ব্যাংকের তরফে দেওয়া হয় না। পুলিশের পক্ষ থেকে একটা অসহায় মনোভাব দেখানো হয়। সাধারণ মানুষ মাস্ক না পড়লে পুলিশ তাদের কাছ থেকে মাশুল গুনতে পারে অথচ দুষ্কৃতীরা দিনের আলোয় টাকা ছিনতাই করবে তাদের কেউ ধরতেই পারবে না, পরিস্থিতি এখন এমনটাই তলানিতে এসে দাঁড়িয়েছে।
Comments are closed.