Also read in

উধারবন্দের ক্রীড়ামহলে অক্সিজেনের সঞ্চার করল ইউএসএ'র নতুন কমিটি

উধারবন্দের ক্রীড়া ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। যেখানে একটা সভায় জড়ো হয়েছেন ৪০ টিরও বেশি ক্লাবের প্রতিনিধিরা। উধারবন্দ এলাকা সহ শালগঙ্গা, কুম্ভিরগ্রাম, কুম্ভা, পাতিমারা, ঠালিগ্ৰাম, নগর, মধুরা, দয়াপুর, মাঝারগ্ৰাম, গোসাইপুর এবং রংপুর থেকে ক্রীড়াপ্রেমীরা সবাই জড়ো হয়েছিলেন। সর্বমোট হিসেব করলে সংখ্যাটা ২২০। ফলে উধারবন্দ স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের ( ইউ এস এ) নতুন কমিটি গড়ার প্রক্রিয়ায় তারা সবই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সামিল হয়েছেন। এটাই প্রমাণ করে দেয় এতদিন যারা ইউএসএ’র পদ আঁকড়ে বসে ছিলেন তারা কাজের কাজ কিছুই করেননি। তাদের অকর্মণ্যতার জন্যই লাটে উঠেছে উধারবন্দ এলাকার খেলাধুলা। এরই একটা মোক্ষম জবাব হিসেবে নতুন কমিটির গড়ার দিনে সাক্ষী থেকে দিয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমী, সংগঠক এবং প্রাক্তন ও বর্তমান খেলোয়াড়রা।

উধারবন্দ ব্লক অডিটোরিয়ামে সর্বসম্মতিক্রমে ইউএসএ নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে এর থেকেও বড় কথা হচ্ছে এই প্রথম এতগুলো ক্লাব-সংগঠন নিজেদের কথা তুলে ধরার একটা মঞ্চ পেয়েছে। অথচ এই লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু সত্তরের দশকে গঠন করা হয়েছিল ইউএসএ। এদিনের সভায় বেশকিছু ইস্যু সামনে এসেছে। যেগুলো এতদিন ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রথমত, ইউএসএ কোনো ক্লাব নয়। এটা একটা সংস্থা। অথচ যারা এতদিন ইউএসএ’র পদ আঁকড়ে বসে ছিলেন তারা কিন্তু এটাকে একটা ক্লাব বলেই প্রচার চালিয়েছেন। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতেই একটা সংস্থাকে ক্লাব বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অথচ ইউএসএ’র সংবিধানে সবকিছু স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। আসলে এই বিষয়ে এতদিন কেউ কোনো খোঁজ খবর নেননি। এর দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না উধারবন্দের ক্রীড়াপ্রেমীরা। ‌ এ নিয়ে আরো আগেই আওয়াজ তোলা উচিত ছিল তাদের। যাইহোক, এখন তারা আওয়াজ তুলেছেন বলে তাদের অপরাধী বলা যাবে না। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, যারা শুধু পদ আঁকড়ে বসে আছেন তারা কিন্তু এই প্রশ্নটাই তুলছেন। তাদের কথায়, এখন যারা প্রশ্ন করছেন তারা এতদিন কোথায় ছিলেন? বাহ, কি সুন্দর প্রশ্ন!
সবকিছুর একটা সীমা থাকে। ধৈর্যের বাধ যখন ভেঙে যায় তখন এভাবেই রুখে দাঁড়ানো হয়। শুধু খেলাধুলার ক্ষেত্রে নয়, সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও এমন প্রচুর উদাহরণ রয়েছে। ইউ এস এর ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই হয়েছে। স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছে অকর্মণ্য সংগঠকদের ব্যর্থতা। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদিত সংস্থা হয়েও খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য কিছুই করতে পারিনি ইউএসএ’র কমিটি। তাই সবকিছু ট্র্যাকে ফেরাতে সোচ্চার হয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ইউএসএ’র নতুন কমিটি গঠন করার দিনে আরও একটা রহস্য থেকে পর্দা উঠেছে। ঠালিগ্ৰাম, নগর, মধুরা, দয়াপুর, মাঝারগ্ৰাম, গোসাইপুর, শালগঙ্গা, কুম্ভিরগ্রাম, কুম্ভা এবং পাতিমারা থেকে যেসব ক্লাবের প্রতিনিধি, সংগঠক এবং ক্রীড়াপ্রেমীরা এসেছিলেন তাদের সবাই একই সুরে কথা বলছিলেন। তা হচ্ছে, ‘ইউ এস এর পক্ষ থেকে আমরা তো কোনদিনও কোনো আমন্ত্রণই পাইনি।’ এই একটা কথাই প্রমাণ করে দিচ্ছে এতদিন কিভাবে চালানো হচ্ছিল ইউএসএ কে। এখানেই শেষ নয়, উধারবন্ধের তো বটেই গোটা রাজ্যে এক বিশেষ জায়গা জুড়ে রয়েছে টেবিল টেনিস ক্লাব। অথচ সেই ক্লাবেরই প্রাক্তন এবং বর্তমান সচিব মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘টেবিল টেনিস ক্লাব এর ৩০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম আমরা ইউএসএ’র সভায় আমন্ত্রণ পেলাম।’ শুধু টিটি ক্লাব নয়, এমন অনেক ক্লাব রয়েছে যাদের ইউ এস এর পক্ষ থেকে কোনো কালেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অথচ কদিন আগেও নিজেদের সভা করে কমিটি গড়ে ১০০% সাফল্যের ডাক দিচ্ছিলেন ইউ এস এর গদি আঁকড়ে বসে থাকা সংগঠকরা। তাদের দাবি কতটা সত্য ছিল, সেটা ব্লক অডিটোরিয়ামে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।

সত্যি কথা বললে নতুন কমিটির সভা স্থানীয় ক্রীড়ামহল এ প্রাণের সঞ্চার করেছে। এতজন ক্রীড়াপ্রেমীর উপস্থিতি অক্সিজেন এনে দিয়েছে। নতুন কমিটি গঠন ও এমনভাবে করা হয়েছে যাতে উধারবন্দ সহ প্রতিটি অঞ্চলের ক্লাব প্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্ব থাকে। নতুন এই অভিন্ন মঞ্চের সভাপতি হলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুজিত কুমার দেব। সচিব মৃণাল ভট্টাচার্য। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ১১ জন। সর্বমোট ২৯ জন রয়েছেন কমিটিতে।

মুখ্য পৃষ্ঠপোষক বিধায়ক মিহির কান্তি সোম। ক্রীড়া সংস্থায় যেভাবে একটা কমিটি হওয়া উচিত, ঠিক সেভাবেই নতুন কমিটি করা হয়েছে। চারজন করে সহ-সভাপতি ও সহ-সচিব রাখা হয়েছে। ক্রিকেট, ফুটবল, আদার্স, গ্রাউন্ড -স্টেডিয়াম, আম্পায়ার মিডিয়া ও কমিউনিকেশন প্রতিটি বিভাগে একজন করে শাখা সচিব রাখা হয়েছে। প্রত্যেক শাখা সচিব চার পাঁচজন করে সদস্য নিয়ে নিজেদের কমিটি গঠন করবেন। এই কমিটিতে থাকবেন গ্রামাঞ্চলের ক্লাবের প্রতিনিধিরা।
নতুন কমিটি গঠনের দিনে বিশেষভাবে নজর কেড়েছেন কুড়িগ্রামের ক্রীড়াপ্রেমী সুমন কেওট। তার পায়ে গুরুতর চোট রয়েছে। সঙ্গে ছিল চোখে মুখে একরাশ ক্ষোভ ও হতাশা। ইউ এস এর মত একটা সংগঠন কিভাবে এত বছর থেকে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে, সেই যন্ত্রণাই তাকে এদিন ব্লক অডিটোরিয়ামের সভায় নিয়ে এসেছিল। তবে এদিনের সভায় সুমন শুধু একা ছিলেন না। তার মতো অনেকেই ছিলেন যারা দিনের পর দিন এই যন্ত্রণা সহ্য করছিলেন। তাইতো তারা নতুন কমিটির ডাকে সাড়া না দিয়ে পারেননি।

এদিনের সভায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উঠে আসে। সেটা হচ্ছে কি ভাবে দিনের পর দিন কোনো ধরনের খেলাধুলা না হওয়ায় উধারবন্দের একের পর এক মাঠ হাতছাড়া হয়েছে। হয়তো মাঠগুলোতে কেউ জবর দখল করে আছেন। নতুবা সমাজবিরোধীদের কব্জায় চলে গেছে মাঠগুলো। অথচ এই মাঠ গুলিই কিন্তু একজন খেলোয়ার গড়ে তোলার সাপ্লাই লাইন। ছোট ছোট এই মাঠ গুলোতেই খেলে বড় হয়েছেন এই অঞ্চলের অনেক খেলোয়াড়। কিন্তু আজ সেই মাঠ গুলো নেই। এইসব বিষয় কিন্তু ইউএসএ’র এতদিনের পদাধিকারীদের মুখোশ খুলে দিয়েছে।

তবে ইউএস এর নতুন কমিটির সামনে কিন্তু অনেক চ্যালেঞ্জ। ‌ এখন প্রত্যেক ক্রীড়াপ্রেমী নজর রয়েছে এই অভিন্ন মঞ্চের দিকে। তাদের কাজ সবে শুরু হল। পথটা কঠিন। তবে শুরুটা যেভাবে হয়েছে আশা করা যায় সবকিছু ভালই হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে ইউএসএ এতদিন আইসিইউতে ছিল, তাতে আবার নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে।

Comments are closed.

error: Content is protected !!