
ছোটবেলায় বাবা হারানো চা-বাগান কর্মী মায়ের ছেলে বিক্রম চাষা আজ এসিএস অফিসার, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দিলেন সংবর্ধনা
ডলু সরকারি বিদ্যালয়ে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছেন, স্নাতক হয়েছেন কাছাড় কলেজ থেকে। প্রথম শ্রেণীতে পড়াকালীন বাবার মৃত্যু হয়, ছেলেদের মানুষ করে তুলতে মা চা-বাগানে কাজ করতে শুরু করেন, এটাই বিক্রম চাষার প্রথম জীবনের গল্প। আসাম সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করেছেন, তার এসিএস রেংকিং ২৪ নম্বর, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল তাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন, এটা তার সফল জীবনের প্রথম ধাপের গল্প। এর মাঝখানে পুরো কাহিনী বিক্রম চাষা নিজেই জানালেন বরাক বুলেটিনের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায়। চাষা সম্প্রদায় থেকে তিনিই প্রথম এই খ্যাতি অর্জন করতে সমর্থ হয়েছেন। এত প্রাপ্তির পরেও নম্র, মাটির মানুষ বিক্রম চাষা।
তিনি জানান, ডলু বাগানে অ্যাম্বুলেন্স চালাতেন তার বাবা, তখন বিক্রম প্রথম শ্রেণীতে পড়েন, হঠাৎ বাবার মৃত্যু হয়। দুই সন্তানকে নিয়ে ঘর চালাতে মা বাধ্য হয়ে চা বাগানে যোগ দেন। তারা সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং বরাবর ভাল রেজাল্ট করেছেন। মায়ের কষ্ট তাদের মন শক্ত করেছে, তাই কোনও পরীক্ষায় পিছিয়ে থাকেননি দুই ভাই। ডলু উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে হায়ার সেকেন্ডারি পাস করে কাছাড় কলেজে ইকোনমিক্স নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য গুয়াহাটি চলে যান এবং সেখানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি পড়াশোনা শুরু করেন। ২০১৫ সালে প্রথমবার চেষ্টা করেন, ২০১৭ সালে দ্বিতীয়বার এবং তৃতীয় চেষ্টায় সফলতা আসে। তার এসিএস রেংকিং সারা রাজ্যের মধ্যে ২৪ নম্বর। তার ছোট ভাই অসম পুলিশের আধিকারিক। ২০১৩ সালে চাকরি পাওয়ার পর মাকে আর বাগান কর্মী হিসেবে কাজ করতে দেননি বিক্রম চাষা।
স্বামীর মৃত্যুর পর কঠিন লড়াই করে দুই ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন, আজ তারা দুজনেই সরকারি আধিকারিক হয়েছেন, এটা পৃথিবীর যেকোনও সমাজের কাছে শিক্ষার সুফলের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হতে পারে। অবশ্যই বরাক উপত্যকার প্রত্যেক ব্যক্তি বিক্রমের সফলতায় গর্বিত। তবে তার থেকেও বেশি গর্বের বিষয় হচ্ছে তার মায়ের অধ্যবসায় এবং সন্তানকে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ। বিক্রম বলেন, “বাবার মৃত্যুর পর মা প্রচুর পরিশ্রম করেছেন, সবথেকে বড় উদ্দেশ্য ছিল আমাদের শিক্ষিত করে তোলা। তিনি জানতেন শিক্ষার আলো আমাদের জীবনের অন্ধকার দূর করতে পারে। আমরা মায়ের চোখে নিজেদের স্বপ্ন দেখেছি, তাই কোনওদিন পড়াশোনা করতে অনীহা হয়নি। একসময় সরকারি চাকরি পেয়েছি এবং মাকে অনুরোধ করেছি আর বাগানের কাজ করতে হবেনা। ১৯৯৬ থেকে শুরু করে ২০১৩ পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করেছেন তিনি। তবে সেখানে আমাদের স্বপ্ন ফুরিয়ে যায়নি, ধীরে ধীরে নিজের স্বপ্ন আরও উন্নত হয়েছে। একদিন সরকারি আধিকারিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। কাজের ফাঁকে পড়াশোনা করেছি এবং শেষমেষ আজ সুখবর এসেছে। এবার অন্যদের স্বপ্ন সফল করতে সাহায্য করতে চাই। আমার সমাজে আরও অনেকেই এমন রয়েছেন যাদের জীবনে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিলে তাদের অন্ধকার দূর হবে এবং তারাও সমাজে উজ্জ্বল প্রতিষ্ঠা পাবেন।”
সম্প্রতি শিবসাগরের আসাম চা-জনজাতি ছাত্র সংস্থার পক্ষ থেকে বিক্রম চাষাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে উপস্থিত হন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। বিক্রমের হাতে সংবর্ধনাপত্র তুলে দিয়ে তিনি তাকে বলেন আরও এগিয়ে যেতে। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী রামেশ্বর তেলী সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এব্যাপারে বিক্রম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছেন ভাল করে কাজ করতে অবশ্যই আমি তার কথা মাথায় রেখে এগিয়ে যাব। পাশাপাশি আমার মা আমার এই সাফল্যে খুব খুশি, তিনি চান আমি আরও উন্নত করি, তার আশীর্বাদে ভবিষ্যতে হয়তো আরো উন্নততর জায়গায় যেতে পারবো।”
Comments are closed.