মেডিক্যালে ঘুরে বেড়ায় অপরিচিত যুবকেরা, রোজই চুরি হচ্ছে মোবাইল সহ অন্যান্য জিনিসপত্র, ঘটতে পারে বড় রকমের অঘটন
শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে প্রায় সময়ই ঘুরে বেড়ায় কিছু অপরিচিত যুবকেরা। এরা কখনো নিজেকে হাসপাতালে কর্মী বলে পরিচয় দেয়, কখনও বা বলে তাদের রোগী কোনও ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। অথচ আসলে কোনটাই সত্যি নয়, এরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে মোবাইল সহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি করছে। এই ধারা অনেকদিন ধরেই চলছে, এমনকি কোভিড ওয়ার্ড থেকেও অনেক ব্যক্তির মোবাইল সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। বিভিন্ন সময় ঘুংগুর থানায় চুরির ব্যাপারে এজাহার জমা পড়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ হাসপাতালে হানাও দিয়েছে, তবে কোনও লাভ হয়নি, দুষ্কৃতীরা এর প্রতিকার বের করে নেয়। এতে আতঙ্কিত রোগীর পরিবারের সদস্যসহ হাসপাতালে কর্মীরাও।
সম্প্রতি হাসপাতালের এক সুরক্ষাকর্মীর সঙ্গে অপরিচিত এক যুবকের ঝগড়া হয়। এর সূত্রপাত ঘটে যখন সুরক্ষা কমিটি অপরিচিত যুবককে ওয়ার্ডে ঢুকতে বাধা দেয়। যুবকটি হম্বিতম্বি করে এবং জোর গলায় বলে সে হাসপাতালে কর্মী। তখন সুরক্ষা কর্মী হাসপাতালে অন্যান্য কর্মীদের ডেকে আনেন এবং তারা এলে যুবকটি কথা পাল্টায়। সে জানায় তার এক আত্মীয় নাকি মেডিকেলের গাইনিকোলজি বিভাগে ভর্তি আছেন। তবে খবর নিয়ে জানা যায় সেটাও মিথ্যে কথা। এরপর তারা যুবকটিকে পুলিশের হাতে তুলে দেবার ভয় দেখালে সে ক্ষমা চেয়ে পালিয়ে যায়। এমন ঘটনা আরও অনেক হয়েছে, তবে সবক্ষেত্রে এভাবে আটক করে যাচাইয়ের সুযোগ বা সময় হয়ে ওঠেনা।
গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ইনচার্জ ডাঃ রাজীব বিশ্বাস সন্ধেবেলা ওপিডির আশেপাশে মোবাইলের ক্যামেরা অন করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যারাই অপরিচিত, তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তাদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি জিজ্ঞেস করছেন। সাধারণ মানুষ তার কথায় উত্তর দিলেও কয়েকজন এতে অস্বস্তিবোধ করছেন, ভিডিও দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে। ব্লাডব্যাঙ্ককে ঘিরে রক্তের কালোবাজারির একটি বড় চক্র গড়ে উঠেছে, এর অনেক প্রমাণ রয়েছে। তবে শুধুমাত্র ব্লাড ব্যাঙ্কে নয়, হাসপাতালে অন্যান্য বিভাগের নানান ধরণের দুষ্কর্ম চালাচ্ছে অপরিচিত যুবকের দল।
ঘুংগুর থানার ইনচার্জ চন্দন বরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের ভেতরে চুরির ঘটনা নিয়ে অতীতে অনেকগুলো অভিযোগ এসেছে। পুলিশের তরফে বেশ কয়েকবার হাসপাতাল চত্বরে হানা দেওয়া হয়েছে, অপরিচিত ব্যক্তিদের বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে, তবে হাসপাতালের হাজার হাজার রোগী আসেন এবং তাদের সঙ্গে সমান বা তার থেকে বেশি সংখ্যায় আসেন পরিবারের সদস্যরা। সন্দেহ করে প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়না।
যারা হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসেন তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ উপত্যকার গ্রামাঞ্চলের। হাসপাতালে এসে রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাদের দৌড়ঝাঁপ করতে হয় এবং মানসিকভাবে তারা অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান। এই সুযোগ নিয়ে অপরিচিত যুবকের দল তাদের থেকে নানান ফায়দা লুটার চেষ্টা করে, পাশাপাশি সুযোগ বুঝে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি করে। হাসপাতালে সুরক্ষার জন্য একটি এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা বিভিন্ন গেটে তাদের কর্মী বসিয়েছে। কিন্তু পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় নেই, ফলে সুযোগ পায় অপরিচিত দুষ্কৃতীরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের কাছে আরেক মোক্ষম অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে মাস্ক। মুখ ঢেকে, পরিচয় বদলে, মিথ্যা কথা বলে তারা দিব্যি দুষ্কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সাধারণ মনস্তত্ত্ব বলছে অপরাধীর অপরাধমূলক প্রবণতা প্রত্যেক অপরাধে সাফল্যের সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। এখন অপরাধীরা সফলভাবে চুরি-ছিনতাই করে দিব্যি রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ যদি এখনই পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেন আগামীতে এই প্রবণতা বাড়তে পারে এবং অপহরণ থেকে শুরু করে যৌন-শোষণ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, এমনটাই মনে করেন অনেকেই।
Comments are closed.