ভ্যাকসিন মনিটরিং নিয়ে অপরিপক্কতার দরুন মেডিকেলে নষ্ট ১০০০ কোভিশিল্ড ডোজ, "শোকজ হয়েছে, তদন্ত হচ্ছে," বললেন জেলাশাসক
গত শনিবার সারা দেশজুড়ে কোভিড ভ্যাকসিন প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং এর আগে প্রায় দুই মাস ধরে স্বাস্থ্যকর্মীদের এব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়ম বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রতি সেন্টারে একদিনে সর্বোচ্চ ১০টি ভ্যাকসিন ভায়েল অর্থাৎ ১০০টি ডোজ পাঠানো হবে। সেই নিয়ম লংঘন হয়েছে শিলচর মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে, ফলস্বরূপ নষ্ট হয়েছে ১০০টি ভ্যাকসিন ভায়েল অর্থাৎ ১০০০টি ডোজ। সারা রাজ্যে ভ্যাকসিন নষ্ট হওয়ার ঘটনা একমাত্র এটাই।
এব্যাপারে কড়া মনোভাব নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, ইতিমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে, এছাড়া তদন্ত চলছে, কার দোষে এত বড় ক্ষতি হয়েছে।
কেন এই ঘটনা ঘটলো? দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের মতে, যে তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন রাখার কথা ছিল সেটা বজায় রাখতে পারেননি শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন স্টোরেজে থাকা বিশেষজ্ঞরা। একটি বিশেষ তাপমাত্রার মধ্যে একে রাখতে হয়, খুব ঠাণ্ডা হলেও চলবে না, আবার গরম হলেও চলবে না। এই কাজের জন্য ভ্যাকসিন ভায়েল মনিটর বলে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকে। এছাড়া তাপমাত্রা দেখার জন্য ইন্ডিকেটর রয়েছে। তবে সেখানেই গন্ডগোল হয়েছে, তাপমাত্রার ইন্ডিকেটর বুঝতেই পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তাররা। ফলে ভ্যাকসিন বেশি ঠান্ডা হয়ে যায়। যখন সেটা বের করে আনা হয় প্রায় বরফ হয়ে গেছে, এবার খুব সাবধানে এগুলো ডিসপোজ করা হবে।
কো-উইন অ্যাপের তথ্য অনুযায়ী সোমবার ৯৮ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সকালে যখন ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, ডাক্তাররা দেখেন ভ্যাকসিন ভায়েলে বরফ জমে আছে, বিশেষজ্ঞদের জানালে বোঝা যায় এগুলো নষ্ট হয়েছে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে এতগুলো ভ্যাকসিন কেন নষ্ট হলো? স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্রাথমিকভাবে জেলার ভ্যাকসিন প্রাপকদের তালিকা অনুযায়ী ডোজ পাঠিয়েছে, সঙ্গে অতিরিক্ত দশ শতাংশ ডোজ পাঠানো হয়েছে যাতে এধরনের ঘটনা ঘটলে কেউ ভ্যাকসিন পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হন। সিভিল হাসপাতালে সেন্ট্রাল স্টোরেজ রয়েছে, সেখানে প্রাথমিকভাবে ভ্যাকসিন রাখা আছে। অ্যাপের তালিকা অনুযায়ী সেন্টারগুলোতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০টি ভায়েল অর্থাৎ ১০০টি ডোজ পাঠানোর নির্দেশ ছিল। তবে কিভাবে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০০টি কোভিশিল্ড ডোজ নষ্ট হলো? এই প্রশ্নের উত্তরে সরকারি আধিকারিকরা বলছেন, “সিভিল হাসপাতালের মতই শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন স্টোরেজ রয়েছে যেখানে অন্যান্য ভ্যাকসিন সাবধানে রেখে দেওয়া হয়। কোভিড ভ্যাকসিন নিয়েও এমনটাই হয়তো ভাবনা ছিল, তাই একসঙ্গে ১০০টি ভায়াল পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিটি ভায়ালে ৫ এমএল ভ্যাকসিন থাকে, এক ব্যক্তিকে একবারে ০.৫ এমএলের ডোজ দেওয়া হয়। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ১৪০০ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছিল। সে তালিকা ধরে কোভিশিল্ডের ১০০০টি ডোজ একসঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাই একসঙ্গে এতগুলো ডোজ নষ্ট হয়েছে। সবগুলো এক সঙ্গে না পাঠালে হয়তো শুধুমাত্র ১০টি ভায়েল ওষুধ নষ্ট হতো।
স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ সুদীপজ্যোতি দাস এই ঘটনার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ডাঃ পিকে রায়ের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, “সরাসরি স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে পুরো প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা রয়েছেন, তারাই ঠিক করছেন কোন দিন কোন হাসপাতালে কতটা ডোজ পাঠানো হবে। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একসঙ্গে বেশি ডোজ কেন পাঠানো হয়েছিল, কিভাবে অসাবধানতা ঘটলো, সবগুলো ব্যাপার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা একজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামীতে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকানো।”
ন্যাশনাল হেলথ মিশনের ডিরেক্টর এস লক্ষণনকে এব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “এই কাজটির জন্য বিশেষ বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের অন্য কোথাও এমন ঘটনা হয়নি, তবে শিলচরে যেটা হয়েছে তার পেছনের রহস্য খোঁজা হচ্ছে। কিভাবে একটি সেন্টারে একসঙ্গে ১০০০ ডোজ পাঠানো হলো এটা যাচাই করতে হবে।”
জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক, তবে এত বড় প্রক্রিয়ায় এমন দু’একটা ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই ছিল। এবার আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ঘটনার আসল সুত্র খুঁজে বের করা এবং আর যাতে এমন ঘটনা না হয় সেটা দেখা। আমরা ইতিমধ্যে এব্যপারে কাজ শুরু করে দিয়েছি, তদন্ত চলছে আসল সত্য অবশ্যই বেরিয়ে আসবে।”
শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া বলেন, এটা পুরোপুরি স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে হয়েছে ফলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না।
Comments are closed.