"সাহায্য চাইনি, ছেলের মৃত্যুর কারণ জানতে চেয়েছি, এতেই এত দুর্ব্যবহার!" আক্ষেপ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ সায়ন দাসের মা
বিলপাড়ের যুবক সায়ন দাস মারা যাবার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে, তবে এখনও তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। সায়নের মা সুপ্রা দাস বারবার শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্কর কাটছেন এবং হতাশ হচ্ছেন। শেষমেষ তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার কাছে চিঠি লিখে তার ছেলের মৃত্যুর কারণটুকু জানতে চেয়েছেন।
তিনি আমাদের জানান, যেভাবে চিকিৎসার নামে সায়ন দাসকে এক গেট থেকে আরেক গেটে ঘুরিয়ে, শেষমেষ মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।সেই একইভাবে এবার তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে টালবাহানা করছে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার এবং বৃহস্পতিবার শিলচর মেডিক্যাল কলেজের দ্বারে দ্বারে তিনি ঘুরে কোনও উত্তর পাননি। হতাশা এবং আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, “এক ছেলের মৃত্যু হয়েছে, তার মৃতদেহ টুকু দেখতে পাইনি, আরেক ছেলে করোনা পজিটিভ বলে চিকিৎসাধীন। এমন কঠিন সময় কাটানোর পরেও হাল ছাড়িনি আমরা, শুধুমাত্র আমার ছেলের মৃত্যুর কারণটুকু জানতে চেয়েছি, কারও সাহায্য চাইনি। আমার পাড়ায় শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় থাকেন, তিনি একবার খবরটুকু নেননি আমরা কিভাবে বেঁচে আছি। বাকি জনপ্রতিনিধিরা যদিও খবর নিয়েছেন।
বুধবার সকালে একটি চিঠি লিখে শিলচর মেডিক্যাল কলেজের সুপার ডাঃ অভিজিৎ স্বামীর দ্বারস্থ হই। প্রথমে আমাকে চিনতে না পারলেও যখন আমি বলি সায়ন দাস আমার ছেলে, তিনি আমাদের একপ্রকার প্রায় তাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেন। অনেক হাতজোড় করার পর বলা হয়, চিঠি তাকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়নি,তাই অন্য চিঠি নিয়ে আগামীকাল আসতে।
বৃহস্পতিবার একইভাবে তার কার্যালয়ের সামনে যাই, সবাই ঢুকছে-বেরোচ্ছে, আমার ঢোকার অনুমতি নেই। অনেক হাতজোড় করার পর আমাকে বলা হল, মেডিক্যালে সায়নের মৃতদেহ এসেছিল এবং এর আগে তাকে সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাই তার মৃত্যুর কারণ জানতে হলে স্বাস্থ্য বিভাগে যেতে হবে। মেডিক্যাল থেকে অনেক কষ্টে যুগ্ম স্বাস্থ্য সঞ্চালকের কার্যালয়ে যাই, সেখানে জানতে পারি সায়নের মৃত্যু সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছেই রয়েছে। একজন সন্তানহারা মায়ের সঙ্গে শিলচর মেডিক্যাল কলেজের সুপার এবং স্বাস্থ্য বিভাগ কেন এধরনের ব্যবহার করছে এটা বুঝতে পারছিনা। এবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছি, জানিনা উত্তর মিলবে কিনা, তবে সব আশা শেষ হওয়ার আগে আমি হাল ছাড়ছিনা।”
উল্লেখ্য, সায়ন দাসের মৃত্যুর প্রায় ৮ দিন পর শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডাঃ অভিজিৎ স্বামী জেলাশাসক কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বসে দাবি করেছিলেন, মৃত্যুটি নিউমোনিয়ায় হয়েছে এবং পরবর্তীতে শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেছে। তারা রিপোর্ট গুয়াহাটির ডেথ অডিট বোর্ডে পাঠাননি, ফলে কোভিড মৃত্যুর তালিকায় সায়নের নাম আসেনি।
সাংবাদিক সম্মেলন করার প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। সায়ন দাসের মা যখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, বলা হয় লিখিতভাবে আবেদন জানাতে হবে। তিনি লিখিত আবেদন নিয়ে দুই দিন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে একপ্রকার হাতজোড় করতে থাকেন। এর পরেও কোন উত্তর নেই। কেন এক মৃত্যু নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ একের পর এক ভুল ভাল মন্তব্য করেছেন এবং কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না, এটা তদন্তের বিষয়।
Comments are closed.